প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
৯০ দশককে এক কথায় বলা যেতে পারে পরিবর্তনের দশক বা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ট্রাঞ্জিশনাল পিরিওড। সহজ কথায় কোনো কিছু যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়।
এসময় থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। দিনের পর দিন প্রিয় মানুষের একটি চিঠির অপেক্ষার অনুভূতি যেমন এ সময়ের সকলের চেনা ঠিক তেমনি ভাবে সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকা প্রিয় মানুষটির সাথে যোগাযোগের অনুভূতি ও এ সময়কার মানুষের চেনা।
এ সময়কার তরুণেরা সবাই চিঠি লিখে যেভাবে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করেছে একই সাথে ভিডিও কলের বহুল ব্যবহারও তাদের অচেনা নয়।
সেকাল হোক আর এই কাল, গান সবসময়ই বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। দেশীয় শিল্পীর গান বা গ্লোবাল মিউজিক ৯০ দশকে ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারের বদৌলতে সবকিছুই মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে শুরু করে। ফলে গান শোনার পরিধি শুধুমাত্র দেশীয় মিউজিকে আটকে থাকে না।
নতুন নতুন গেজেটস ও প্রযুক্তির ব্যবহার গান শোনার অভিজ্ঞতা বদলে দিতে শুরু করে এসময় থেকে। ফিতা ঘুরিয়ে ব্যবহার করা অডিও ক্যাসেট থেকে ধীরে ধীরে আইপড বা এমপিথ্রি প্লেয়ারে অভ্যস্থ হওয়ার সময় এটা।
একটা সময় গান শোনার অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল ক্যাসেট প্লেয়ার ও রেডিও। যে যন্ত্রের সাহায্যে দুটো সুবিধাই একসাথে পাওয়া যেত তাকে বলা হত টু ইন ওয়ান। ৯০ দশকের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ডিভাইস ছিল এই টু ইন ওয়ান। এছাড়াও ছিলো টেপরেকর্ডার ও ভিসিআর।
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগ ছিল ৯০ দশক। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, পার্থ, মাইলস - এই নামগুলো ৯০ দশকের তরুণ সমাজের অতি পরিচিত, অতি পছন্দের। লাখো বাঙালির হৃদয়ে যায়গা নিয়ে আছে এই নামগুলো। যখনি কোনো ব্যান্ডের নতুন কোনো অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে শ্রোতারা অ্যালবামের ক্যাসেট কিনেছে।
সময়ের সাথে সেই ক্যাসেট কিনে গান শোনার রীতি বিলুপ্ত হয়েছে। এখন ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের মতো স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো গান শোনার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।
এখনকার শিশু-কিশোরদের পেন্সিল দিয়ে ফিতা ঘুরিয়ে ক্যাসেটে গান শোনার অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি। হাত খরচ থেকে জমানো টাকায় একটি ক্যাসেট কিনে নিয়ে এসে দুই সাইডের গানগুলো বারবার শোনার মাঝে যে ভালোলাগা ও উত্তেজনা কাজ করতো তা এযুগের আনলিমিটেড পছন্দ তালিকা থেকে গান শোনার মাঝে কখনো পাওয়া যায় না।
পছন্দের শিল্পীর নতুন গানের অ্যালবাম কবে মুক্তি পাবে তার জন্য অপেক্ষা করা এবং দোকানে অনেক মানুষের ভিড়ের মাঝে অপেক্ষা করে কাঙ্খিত ক্যাসেট কিনে নিয়ে আসার মাঝে যে উত্তেজনা তা কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা চলে না।
আধুনিক যুগে সবকিছু সহজলভ্য হলেও পুরনো দিনের সেই আবেগ আর কোনো কিছুতে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। এখন যেখানে একটি গান সম্পূর্ণ শোনার আগেই প্লে লিস্টের পরের গানে চলে যাওয়া হয় সেখানে একই ক্যাসেটের একই গান বহুবার শোনার পরও গানগুলো ভালোলাগার অনুভুতি বিন্দুমাত্র কমেনি বরং বেড়ে গিয়েছে।