প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
বাড়ি থেকে কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর কথা ভাবলেই, প্রায়ই আমাদের মনে বেশ কিছু আরামের ছবি ভেসে ওঠে, তাই না? যেমন, সকালে কোনো তাড়াহুড়ো নেই, আরাম করে কাজ শুরু করা। অফিসে না গিয়ে, ঘরের শান্ত পরিবেশে কাজ করাটা অনেকের কাছেই একটা স্বপ্নের মতো ছিল। কিন্তু এখন তো রিমোট ওয়ার্ক বেশ প্রচলিত একটা ব্যাপার। তাই এবার একটু খতিয়ে দেখা যাক, ঘরে বসে কাজ করা কি আসলেই এতটা দারুণ যতটা আমরা ভেবে থাকি? নাকি ভাবনার সাথে বাস্তবের ফারাক আছে?
হ্যাঁ, বাড়ি থেকে কাজ করার বেশ কিছু ইতিবাচক দিক আছে তো বটেই। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নিজের ইচ্ছেমতো গতিতে কাজ করা যায়। অনেক সময় কর্মীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের সময়টা সাজিয়ে নিতে পারেন। যেমন, পরিবারকে সময় দেয়া বা দরকারি কাজ করা, এগুলোর জন্য আলাদা ছুটি না নিয়েও কাজের সময় বের করা যায়। আবার অনেকে নিজের এনার্জি লেভেল বুঝে কাজ করে থাকেন। যখন মনোযোগ বেশি থাকে, তখনই হয়তো কঠিন কাজগুলো করে ফেলেন।সময়টা এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
আর প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসা থেকে মুক্তি পাওয়াটাও বিশাল ব্যাপার। এতে যাতায়াতের সময় বাঁচে – দিনে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি – সেই সময়টা নিজের জন্য কাজে লাগানো যেমন, ব্যায়াম করা, কোনো শখ পূরণ করা, রান্না করা, বা প্রিয়জনদের সময় দেয়া। এছাড়া যাতায়াতের খরচ কমে, রাস্তার ট্রাফিক ও ধোঁয়াও থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
কোম্পানি বা মালিকদের জন্যও কিন্তু রিমোট ওয়ার্কের সুবিধা আছে। তাদের এখন আর কারও ঠিকানা মাথায় রেখে কাজে নেয়া লাগে না। অন্য শহর বা এমনকি অন্য দেশ থেকেও ভালো, কাজের লোক খুঁজে নিতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের দক্ষ লোক আসে ফলে কাজের মান ভালো হয়।
কিন্তু এতসব ভালো দিকের পরেও, বাড়ি থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা সবসময় সহজ হয় না, এর কিছু সমস্যাও আছে। প্রায়ই শোনা যায় এমন একটি একাকীত্ব বোধ। এছাড়া সবার সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথাও মাথায় আসে।
অফিসে যেমন সহকর্মীদের সাথে চলতে-ফিরতে টুকটাক কথা হয়, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করা যায়, মিলেমিশে কাজ করা হয়, বাড়ি থেকে কাজ করলে এই জিনিসগুলো পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
হ্যাঁ, ভিডিও কল বা মেসেজে কথা হয় ঠিকই, কিন্তু সামনাসামনি কথা বলার মতো আন্তরিকতা সেখানে প্রায়ই থাকে না। অনেক রিমোট ওয়ার্কার-ই বলেন যে তারা সহকর্মীদের থেকে কেমন যেন দূরে সরে গেছেন, অফিসের সেই একসাথে থাকার অনুভূতিটা পান না।
আরেকটা বড় অসুবিধা হলো, কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মাঝখানের দাগ অর্থাৎ পার্থক্যটা অনেক সময় মুছে যায়। যখন আপনার ঘরই আপনার অফিস, তখন দিনের শেষে কাজের চিন্তা মাথা থেকে সরানো বেশ কঠিন।
অফিসে যাওয়া-আসার ফলে কাজ আর ব্যক্তিগত সময়টা বেশ আলাদা থাকে, বাড়িতে সেটা হয় না। এর ফলে অনেককেই দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করতে থাকেন।অনেকে রাত জেগেও কাজের করতে থাকেন। এটা কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ।
যখন শুধু লেখা বা মেসেজের মাধ্যমে কথা হয়, তখন ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ সেখানে কথার সুর বা মুখের ভাব বোঝা যায় না। সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা, দলের মধ্যে মিল রাখা, আর সবাই যেন নিজেকে দলের অংশ মনে করে, এই সবকিছুর জন্য আলাদা করে চেষ্টা করতে হয় যা অফিসে কাজ করলে হয় না।
আবার, বাড়িতে হয়তো অফিসের কিছু চেনা অসুবিধাগুলো নেই, কিন্তু নতুন কিছু সমস্যা তৈরি হয়।
যেমন, পরিবারের লোকজন কিছু চাইছে, পোষা প্রাণীটার যত্ন নিতে হচ্ছে, ঘরের কাজ পড়ে আছে, বা এমনিতেই অন্য কিছু করার ইচ্ছে হচ্ছে। এই সবকিছুর মধ্যে কাজের মনোযোগ ধরে রাখতে আর সময়মতো কাজ শেষ করতে বাধা দেয়।
তাহলে শেষ কথা কী? রিমোট ওয়ার্ক আসলে একটা ভালো-মন্দ মেশানো ব্যাপার, যেখানে একদিকে যেমন দারুণ কিছু সুবিধা আছে, তেমনি কিছু বড় অসুবিধাও আছে।
এটা এমন কোনো ব্যবস্থা নয় যা সবার জন্য সমানভাবে ভালো হবে, আবার এটা পুরোপুরি খারাপও নয়। তাই ঘরে বসে কাজ করা কি বেশি ভালো এটা শুধু 'হ্যাঁ' বা 'না'-এর ব্যাপার নয়। এটা কতটা সফল হবে বা কার অভিজ্ঞতা কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে মানুষটার নিজের স্বভাব, তার কাজের ধরন, বাড়ির পরিবেশ, কী ধরনের কাজ সে করে, আর সবচেয়ে বড় কথা তার প্রতিষ্ঠান তাকে কতটা সহায়তা করে তার ওপর।
samin.shahan@gmail.com