প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় আগামী বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ প্রায় ১ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা বরাদ্দ রাখছে সরকার। কর্মকর্তারা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে এই দায় আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের উচ্চ পরিমাণ, সুদের হার বৃদ্ধি এবং দেশের মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ঋণ পরিশোধের খরচও বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১৩৫ ট্রিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে ৯৩০ বিলিয়ন টাকা রাখা হয়েছে অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধের জন্য এবং ২০৫ বিলিয়ন টাকা রাখা হয়েছে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ১ ট্রিলিয়ন টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদের জন্য ২২০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের নিট লক্ষ্য ছিল ৯০৭ বিলিয়ন টাকা, যা নতুন বাজেটে বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চলতি বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ দশমিক ৬০৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা নতুন অর্থবছরে কিছুটা কমিয়ে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়নে নামিয়ে আনা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বড় পরিমাণের বৈদেশিক ঋণ ম্যাচিউর হওয়ায় সুদ পরিশোধের বোঝাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ মোট ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার ছিল মূল ঋণ এবং ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছিল সুদ।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “চলতি বছর এবং আগামী বছর ঋণ পরিশোধের চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তাই সরকার বাজেটের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট করলেও এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪২ ট্রিলিয়ন টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৮ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সুদ ব্যয় বৃদ্ধির দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং দ্বিতীয়ত, সুদের হারও বেড়েছে।
তিনি জানান, দেশের মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়েছে।
জাহিদ হোসেন বলেন, যেসব বড় প্রকল্পের জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ আগামী কয়েক বছরে শেষ হবে। ফলে ঋণ পরিশোধের ব্যয় আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, “উচ্চ ব্যয়ের এই চাপ মোকাবেলায় রাজস্ব আদায় বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
সঙ্গে তিনি বাজেট ঘাটতি যতটা সম্ভব কমাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
syful-islam@outlook.com