নিয়মিত রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব
ঋণসীমা সহজ করছে বিদেশি ব্যাংকগুলো, ঝুঁকি প্রিমিয়াম কমাচ্ছে জ্বালানি সরবরাহকারী
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংক ও জ্বালানি সরবরাহকারীদের জন্য লাইন অফ ক্রেডিট (ঋণসুবিধা) সহজ করা শুরু করেছে এবং ঝুঁকিসহ প্রিমিয়াম কমিয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাবাহিক উত্থানকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছে, যা মাসিক হিসাবে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে মার্চ ২০২৫ মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল।
এই অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম দশ মাসে মোট রেমিটেন্স এসেছে ২৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য সাফল্য এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই ক্রমবর্ধমান রেমিটেন্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থবাজারে তারল্য বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেমিটেন্স প্রবাহের রেকর্ড বৃদ্ধির কারণে দেশ সাম্প্রতিক সময়ের বৈদেশিক দেনার বোঝা অনেকটাই পরিশোধ করতে পেরেছে। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়ার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে, যা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর লাইনে ক্রেডিট সুবিধার সীমা শিথিল করছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-কে জানান, তাঁরা ইতোমধ্যে ৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক দেনা নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই পরিশোধ করতে পেরেছেন। এর ফলে এলএনজি সরবরাহকারীরা স্পট মার্কেটে প্রিমিয়াম হার কমিয়েছে। আগে যা ছিল, এখন সেটি ১১ দশমিক ৫০ ডলার পর্যন্ত কমানো হয়েছে, যা গ্যাস আমদানির ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মসরুর রিয়াজ বলেন, ক্রমবর্ধমান রেমিটেন্স প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রিজার্ভ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি)-এও পড়ছে। তিনি বলেন, এতে আমদানি স্বাভাবিককরণের পথ সুগম হবে, যা মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া বাড়তি রেমিটেন্স দেশের ভোগবাজার, নির্মাণ খাত এবং দ্রুত বিক্রীত ভোগ্যপণ্য খাতেও চাঙ্গা করবে, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সজীবতা আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে এবং আইএমএফের বিপিএম৬ মানদণ্ডে যা ২২ বিলিয়ন ডলার।
jubairfe1980@gmail.com