শামুক মিং: বিশ্বের প্রাচীনতম শেষ প্রাণীটির জীবনাবসান পরীক্ষণাগারে
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
২০০৬ সালের কথা। আইসল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্র সৈকতে ইংল্যান্ডের ব্যানগোর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা শামুক নিয়ে গবেষণা করার জন্য প্রায় ২০০ শামুক সংগ্রহ করেছিল। সংগৃহীত সে শামুকগুলো নিয়ে পরীক্ষা করার সময় তারা এমন একটি শামুক আবিষ্কার করে, যার বয়স প্রায় ৫০৭ বছর ছিল। এবং সেটি ছিল তখনো জীবিত। ধারণা করা হয় ১৪৯৯ সালে শামুকটি জন্মগ্রহণ করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গবেষণা করার সময় ভুলে শামুকটিকে মেরে ফেলেন।
শামুকটির নামকরণ করা হয় ১৪৯৯ সালে চীনের সম্রাট মিং এর নামে। সামুদ্রিক কুহোগ প্রজাতির এ শামুকগুলোর আয়ু সাধারণত ১০০ বছরের মতো হয়। কিন্তু মিং শামুকের আয়ু ছাড়িয়ে গিয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় জীবিত প্রাণীর আয়ু। বলা হয়ে থাকে যে রেনেসাঁর যুগ থেকে ইন্টারনেট যুগ- এর প্রতিটি সময়ই পৃথিবীর বুকে বিচরণ করেছে মাত্র ৩.৪ ইঞ্চি সাইজের এই শামুকটি।
শামুকের বয়স গণনা করার জন্য এর খোলসের রিং এর পরিমাণ হিসাব করা হয়ে থাকে। একটি রিং সমান এক বছর ধরে শামুকের বয়স গণনা করা হয়। শামুক মিং এর শরীরে প্রায় ৫০৭টির মতো রিং দেখা গিয়েছে। অত্যাধুনিক জিওকেমিক্যাল পদ্ধতিতে এ গণনা করা হয়ছিল।
কিভাবে এত সময় বেঁচেছিল শামুক মিং? এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে যেয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম শামুকের এই প্রজাতি। বিবর্তনের সাথে সাথে শরীরের মেটাবলিজম হার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে কুহোগ প্রজাতির এ শামুক।
গবেষণাগারে শামুক মিং মারা যাওয়ার কারণে ২০০৬ সালে বিজ্ঞানীরা অনেক সমালোচনার মুখে পড়েন। সংবাদের মিং এর মৃত্যুর খবর প্রচার হওয়ার পর সাধারণ মানুষরা বলে যে গবেষণাগারে আরো সাবধানতার সাথে কাজ করলে হয়তো এমন হতো না। তবে শামুক মিং নিয়ে গবেষণার কারণে এর মৃত্যু হলেও বিজ্ঞানীরা এর ভালো দিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। তাদের দাবি মিং শুধু একমাত্র এমন শামুক নয়। হয়তো আরো অনেক এমন শতবর্ষী শামুক আছে। যা মিং এর কারণে খুঁজে বের করা সম্ভব।
শামুক মিং এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। আজ থেকে ৫০০ বছর আগে সমুদ্রের পানি কেমন ছিল, আর বর্তমানে তা কেমন হচ্ছে এ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।
শামুক মিং এর এতোদিন বেঁচে থাকার পেছনে আরেকটি কারণ বের করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তা হলো আইসল্যান্ডের সমুদ্রের পানি ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের সমুদ্রের পানি থেকে তুলনামূলক ঠান্ডা হওয়ার কারণে শামুক গোত্রের প্রাণীদের জন্য তা বেশি বসবাসযোগ্য। এছাড়াও আইসল্যান্ডের সে অঞ্চলে পরিবেশ দূষণ কম হয় বিধায় তা জলীয় প্রাণীদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।
শামুক মিংইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে এটির মৃত্যুর পর। বিশ্বব্যাপী মানুষেরা এ শামুকটি নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়েছে এর বয়সের কারণে। বর্তমানে এ শামুকটির খোলস সংরক্ষিত আছে কার্ডিফের জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারিতে। শামুক মিং তৈরি হয়েছে গান ও অ্যানিমেশন।
শামুক মিং এর মতো হয়তো আরো অনেক বেশি বয়সী শামুকও পাওয়া যাবে ভবিষ্যতে। কিন্তু বিজ্ঞানের গবেষণার নামে যেন অকালে প্রাণ না হারায় কোনো প্রাণী। পৃথিবীর সব প্রাণীরই অধিকার আছে স্বস্থানে নিজের মতো বেঁচে থাকার। শামুক মিং নিয়ে লেখা গানের কিছু লাইন দিয়ে শেষ করা যাক-
শামুক মিং, সমুদ্রের এক রহস্য
যে বেঁচেছিল নিজের সময় ছাড়িয়ে
মহৎ সৃষ্টির এক স্মৃতিচিহ্ন
কিভাবে সে চালিয়েছিল লড়াই?
ফাইয়াজ আহনাফ সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
faiyazahnaf678@gmail.com