প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
স্টার্টআপ শব্দটি বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় এদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তদুপরি, চাকরিতে দূর্নীতি কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থীও কর্মক্ষেত্রে তাদের কাঙ্ক্ষিত চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়।
এমতাবস্থায়, বিগত কয়েক বছর ধরে গতানুগতিক চাকরির বিকল্প হিসেবে স্টার্টআপ একটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হয়ে ওঠেছে। এখন প্রশ্ন হলো- স্টার্টআপ কি শুধুই আত্নকর্মসংস্থান, নাকি এর রয়েছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা এটিকে অন্য যেকোনো কাজ থেকে আলাদা করে তুলেছে।
এর উত্তর হলো- স্টার্টআপ শুধু আত্নকর্মসংস্থান নয়, বরং এর জন্য পূরণ করতে হবে কিছু শর্তাবলী। প্রথমত, ব্যবসায়টির বৈশিষ্ট্য সমাজে বিদ্যমান অন্যান্য ব্যবসায় থেকে ভিন্ন হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সেখানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়টির মাধ্যমে সমাজে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে।
দেশে বেকারত্বের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই স্টার্টআপের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ, এটি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, যারা ব্যক্তি স্বাধীনতা পছন্দ করে, তাদের জন্য স্টার্টআপ নিঃসন্দেহে একটি শৌখিন প্রস্তাব হয়ে ওঠতে পারে।
স্টার্টআপ শুরু করতে যেহেতু কোনও নির্দিষ্ট একাডেমিক ডিগ্রির দরকার হয় না, তাই ছাত্রাবস্থাতেই এই কাজে যুক্ত হওয়া সম্ভব। এতে করে পড়ালেখার পাশাপাশি আয় উপার্জনের পথও সুগম হবে। একজন শিক্ষার্থীর স্টার্টআপ শুরু করার ক্ষেত্রে ফান্ডিংয়ের সমস্যা একটি বড় বাধা হয়ে ওঠতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট উপায় অনুসরণ করলে এই সমস্যাটিও লাঘব করা সম্ভব। সেসব উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে এবারের লেখায়।
বাসায় অফিস তৈরি করা
স্বল্প বাজেটের স্টার্টআপের জন্য 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' ধারণাটি একটি সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। কারণ এতে করে আলাদাভাবে অফিসের ভাড়া পরিশোধের দরকার হয় না। পাশাপাশি পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খরচ বাবদ কোনো অতিরিক্ত অর্থও প্রদান করতে হয় না। ফলে সহজেই একজন শিক্ষার্থী তার সৃজনশীল কাজ পরিচালনা করতে পারেন।
অনলাইন মার্কেটিং
পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন কিংবা ক্যাম্পেইন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। তবে তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে এখন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে সহজেই পণ্য ও সেবার প্রচার করা যায়।
পাশাপাশি এসব মাধ্যম ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যেই পণ্যের সর্বশেষ আপডেট ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। আর এই পদ্ধতিটিও স্বল্প কিংবা জিরো বাজেটের স্টার্টআপগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে।
সেবাধর্মী স্টার্টআপ গড়ে তুলুন
সেবাধর্মী স্টার্টআপগুলোতে খরচ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। যেমন- অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম চালু করা যেতে পারে যেখানে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়। পরবর্তীতে ব্যবসায়ের প্রসারের সাথে সাথে বাজেটের পরিমাণ বাড়িয়ে উদ্যোগটিকে আরো জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।
পার্টনারশিপ গড়ে তুলুন
প্রথমদিকে একজন উদ্যোক্তাকে বাজেটসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর এসময় অন্য কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা বা পার্টনারশিপ গড়ে তোলা গেলে প্রাথমিকভাবে উদ্যোক্তা কিছুটা স্বস্তি পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও লাভ করতে পারেন এই পদ্ধতিতে।
পারিবারিকভাবে ফান্ড সংগ্রহ করুন
ছাত্রাবস্থায় স্টার্টআপ শুরু করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস অপেক্ষা পারিবারিক কিংবা আত্নীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা উত্তম। এতে আর্থিক খাতের সুদসহ অন্যান্য খরচ থেকে মুক্তি মিলবে। এছাড়া উদ্যোগ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে কেবল অবশ্যম্ভাবী খরচ ব্যতীত অন্যান্য খরচ যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। ফলশ্রুতিতে, প্রাথমিক পর্যায়ে স্টার্টআপটির খরচ কম পড়বে যা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক।
এসব বিষয়ে আরও জানতে কথা হয় জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জে.সি.আই.) ঢাকা ফাউন্ডার্সের সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুল রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে একজন শিক্ষার্থীর স্টার্টআপ ফাউন্ডার হিসেবে যাত্রা শুরু করার প্রথম পদক্ষেপটা সাধারণত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বা আইবিএতে কিছু ক্লাব রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়।"
তিনি আরো বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোর বাইরেও জিপি এক্সেলারেটর এবং তরু ইনস্টিটিউটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো স্টার্টআপ বিষয়ে সাহায্য করে থাকে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ফান্ডিং এর সুযোগও পাওয়া যায় সেসব জায়গা থেকে। সরকারিভাবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এই বিষয়ে কাজ করে। এছাড়া কোর্সেরার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে স্টার্টআপ বিষয়ে কোর্স করার সুযোগ রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে জানার পরিধি বাড়াতে পারে।"
একটি দেশের বেকারত্ব দূরীকরণসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেখানকার স্টার্টআপগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই কাজে যুক্ত করা গেলে সেটি তাদের আয় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। এছাড়া দেশে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা সাধনের ক্ষেত্রেও স্টার্টআপের ভূমিকা অনস্বীকার্য।