প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
একটি সিনেমা ব্যবসাসফল হয়ে ওঠার পেছনে শুধু পরিচালকের হৃদয়কাড়া গল্পই নয়, বরং সিনেমার চরিত্রগুলোর দক্ষ অভিনয়ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণে সিনেমায় নায়ক-নায়িকারা গল্পের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকলেও পার্শ্ব চরিত্রগুলোকেও কোনোভাবে উপেক্ষা করা যায় না। ঠিক তেমনই একটি অংশ হলো সিনেমার খলচরিত্র, যারা গল্পের পরিণতিকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে।
সিনেমা চলাকালে খলচরিত্রগুলো থাকে মানুষের রাগ আর ক্ষোভে ভরা। ঢালিউড সিনেমাজগতে এসব চরিত্রগুলো মানুষের বড্ড চেনা। কারণ, একটি দুইটি নয়, শতাধিক সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয় করে তারা রীতিমতো মানুষের কাছে একটি পরিচিতি পেয়ে বসেন।
আমাদের অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খায়। আর সেটি হলো সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয় করা মানুষগুলো বাস্তবজীবনে কেমন? তারা কি বাস্তবেও অপরাধ জগতের নিত্য পথিক, নাকি তাদের এই অপরাধ জগত শুধুই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ?
বিভিন্ন ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে প্রায়ই দেখা যায় সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয় করা এসব অভিনেতাকে। সেখানে তারা তুলে ধরেন তাদের বাস্তব জীবনের চিত্র। আর তা দেখে বোঝা যায় পর্দার বাইরে তাদের এক ভিন্নধর্মী চরিত্রের কথা। আর সেসব গল্পই তুলে ধরবো এবারের লেখায়।
মিশা সওদাগর
মিডিয়াজগতে তার যাত্রা শুরু সিনেমার নায়ক হিসেবে। তবে সেখানে তেমন একটা দর্শকপ্রিয়তা পাননি তিনি। পরবর্তীতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে বেশ ভালো সাড়া পান মিশা সওদাগর।
তবে সিনেমায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকলেও বাস্তব জীবন তিনি অনেকটাই ভিন্ন।
দরিদ্র মানুষদের নিয়মিত আর্থিকভাবে সাহায্য করেন মিশা সওদাগর। একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবেও। এক কথায় সিনেমা আর বাস্তবে যেন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরিচিত ঢালিউডের অন্যতম খলনায়ক মিশা সওদাগর।
মনোয়ার হোসেন ডিপজল
বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি ডিপজল নামে পরিচিত। অসংখ্য সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনিও বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তবে সিনেমার বাইরে ডিপজল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক এই অভিনেতা ব্যক্তিজীবনে খুবই দানশীল। এছাড়া পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চাল-চলনেও ডিপজল বেশ সাদাসিধে।
ঢালিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশের সিনেমা হলে হিন্দি ছবির প্রদর্শন বন্ধ করার পক্ষে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি। বর্তমানে ডিপজল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
শিবা শানু
ঢালিউড সিনেমা যারা নিয়মিত দেখেন তাদের কাছে শিবা শানু একজন খলনায়ক হিসেবে পরিচিত। মূলত নায়ক-নায়িকাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ানোই যেন পর্দায় শিবা শানুর একটি পরিচিত রূপ।
তবে বাস্তবিক জীবনে অনেকটাই ভিন্ন মানুষ এই শিবা শানু। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। আর তাই তো রাজনৈতিক বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রায়ই দেখা যায় তাকে।
এছাড়া তার সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, তিনি তার সহ-শিল্পীদের প্রতি খুবই যত্নশীল। ব্যক্তিগত জীবনে দরিদ্রদের সেবা করতে পছন্দ করেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিকাশের জন্য শিবা শানু কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি নিজেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
আহমেদ শরীফ
বাংলা চলচ্চিত্রে জীবন্ত কিংবদন্তীদের নাম বলতে গেলে আহমেদ শরীফের নামও উঠে আসবে। প্রায় ৮ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। মূলত খলচরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের কাছে বেশ পরিচিতি পান।
তবে তার ব্যক্তিজীবন পর্দার জীবন থেকে অনেকটাই ভিন্ন। জানা যায়, তার জন্মস্থল কুষ্টিয়ায় দরিদ্র্য মানুষের সেবায় তিনি কাজ করেন। এছাড়া নারী অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রয়েছে তার।
তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমতির প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮৪ সালে। ঢাকাই সিনেমার মানোন্নয়নে তার অবদান শিল্পী সমাজে বেশ প্রশংসিত।
রিনা খান
যারা নিয়মিত ঢাকাই সিনেমা দেখেন তাদের কাছে রিনা খান একটি পরিচিত মুখ। খলচরিত্রে অভিনয় করেও যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় সেটি রিনা খানকে দেখলে বোঝা যায়। প্রায় ৫ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
পর্দায় তার প্রধান ভূমিকা থাকতো কূটকৌশলের মাধ্যমে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করা। এছাড়া অর্থের লোভে বিভিন্ন অন্যায় কাজ করতেও বেশ পাকাপোক্ত ছিলেন তিনি।
তবে পর্দার বাইরে রিনা খান যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ। সিনেমায় যেখানে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করাই ছিল তার প্রধান কাজ, সেখানে ব্যক্তি জীবনে রিনা খানের সময় কাটে পরিবারের সঙ্গে খোশগল্পে। এছাড়া স্বামীর ব্যবসায়েও তিনি সময় দেন বলে জানা গেছে। তার দুই ছেলে বিদেশে থাকাতে সেখানেও প্রায়ই যাওয়া হয় রিনা খানের।
আলপনা দুলারী
সিনেমায় নারী খলচরিত্রগুলোর মধ্যে আলপনা দুলারীও কোনো অংশে কম যান না। তার কূটকৌশলগুলোও সংসারে অশান্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল। দক্ষ অভিনয়ের কারণে তার ভক্তের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
তবে জানা যায় বাস্তব জীবনে আলপনা দুলারী বেশ আমুদে মানুষ। সিনেমা সেটে তার সহকর্মীদের সাথে বেশ ভালোভাবেই আড্ডা জমিয়ে রাখতে পারেন দুলারী।
এছাড়া পরিবারের সঙ্গেও তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বর্তমানে সিনেমায় খুব একটা নিয়মিত নন তিনি। তাই তো পরিবারের সাথেই বেশি সময় কাটছে আলপনা দুলারীর।