শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমাবেশ অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
শ্রম অধিকার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বানে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৩ মে) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
‘শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্য গড়ো’ স্লোগানকে সামনে রেখে এই সমাবেশে শ্রমিক নেতারা ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
সমাবেশের সভাপতি ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসমিমা আখতার। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসান আশরাফ, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপারাজিতা প্রদীপ, এবং শ্রমিক সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মন্তব্য করেন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য পোশাক শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের পথে হাঁটা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, মর্যাদাপূর্ণ মজুরি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক ঐকমত্য আছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক শ্রম আইন বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। বক্তারা বিশেষভাবে শ্রম সংস্কার কমিশনের সকল সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করা এবং শ্রম আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন নিয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও মালিক পক্ষের ঐকমত্য গঠনের আহ্বান জানান। তারা শ্রম আইন সংশোধন করে গণতান্ত্রিক শ্রম পরিবেশ প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমিকদের সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তারা ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করেন:
১. অবিলম্বে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশসহ বাস্তবায়ন।
২. শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ বন্ধ করা এবং বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকদের সকল বকেয়া পরিশোধ।
৩. মজুরি মূল্যায়ন ও শ্রমিক এলাকায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু।
৪. ইউএনও গঠন বাধ্যতামূলক এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা সীমাবদ্ধতা বাতিল।
৫. কর্মস্থলে হয়রানি, নিপীড়ন ও সহিংসতা বন্ধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত।
৬. মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস ও ক্র্যাচ সুবিধা নিশ্চিত।
৭. শ্রম সম্পর্কিত সকল তথ্য জানার অধিকার।
৮. শ্রমিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পাঠ্যপুস্তকে শ্রমিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্তি।
৯. আন্দোলনে নিহত শ্রমিক, শিক্ষার্থী, নারী ও শিশুর স্বীকৃতি ও ক্ষতিপূরণ।
১০. শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি।
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারা চলমান শ্রম আন্দোলনের ঐক্য গড়ে তুলতে সকল প্রগতিশীল সংগঠন ও নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশের মাধ্যমে শ্রমিক নেতারা ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সরকার ও মালিকপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।