টানা বৃষ্টিতে অক্টোবরেই দ্বিগুণ হতে পারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। টানা বৃষ্টির কারণে অক্টোবর মাসে রোগীর সংখ্যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরে ১৫,৮৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর অক্টোবরের প্রথম তিন দিনেই নতুন করে ১,১৪৯টি ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর অক্টোবরের প্রথম তিন দিনেই আরও চারজন মারা গেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, এরপর ধীরে ধীরে কমে আসবে।
তবে বৃষ্টির কারণে ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যা শহরের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও কমে যাওয়া জলাশয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আরও তীব্র হয়েছে।
বুধবার রাজধানীতে এ বছরের সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বছর বর্ষাকালও অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।
বৃষ্টির পানি সাধারণত মশার লার্ভা ও প্রজনন ক্ষেত্র ধুয়ে নিয়ে যায়, তবে টানা জলাবদ্ধতা—যা অপর্যাপ্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতার অভাবে আরও বেড়েছে—ডেঙ্গু বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবই এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রাদুর্ভাবের প্রধান কারণ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা পতঙ্গবিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “আমরা গবেষণা চালাচ্ছি এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গুর ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে, যা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।”
তিনি বলেন, “এখানে তিনটি বিষয় রয়েছে—পরিবেশগত কারণ, রোগী, এবং এডিস মশা। আমরা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যেমন টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বাকি দুটি বিষয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যদি ব্যর্থ হই, তাহলে অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু কমে আসে, কখনও কখনও অক্টোবরে। কিন্তু এ বছর আশঙ্কা রয়েছে যে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু তার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত সংক্রমণ চলতে পারে।”
দীর্ঘদিন ধরে মশা নিয়ে গবেষণায় যুক্ত এই পতঙ্গবিদ আরও বলেন, “আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অতিবৃষ্টি এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তারের প্রধান কারণ।”
তিনি যোগ করেন, “বৃষ্টি থামার পর অক্টোবর মাসে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে।”
অধ্যাপক বাশার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আমরা দেখেছি, ঢাকায় ভবনের উপরের তলাগুলোতেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যেখানে সিটি করপোরেশনের পৌছানো সম্ভব হয় না।”
তিনি আরও জানান, “ভবনের বেইসমেন্ট ও নিচতলায়ও ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে, বিশেষ করে গাড়ি ধোয়ার প্রবণতার কারণে সেখানে পানি জমে থাকে, যা মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।”
এই বিশেষজ্ঞের মতে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—কারণ এলোমেলোভাবে ফগার ব্যবহার করে কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নতুন করে আরও ২৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, ফলে এ বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮,৪৯১ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS) জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০২, কারণ ওই দিন নতুন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
গত বছর ডেঙ্গুতে ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২,৩০১ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।