
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :

দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব কিংবা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে প্রায়ই আমাদের শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথা কখনও ক্ষণস্থায়ী, আবার কখনও বা দীর্ঘস্থায়ী যা স্বাভাবিক জীবনকে চরমভাবে প্রভাবিত করে। তাই তো এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে ছুটে যান ডাক্তারের কাছে কিংবা স্থানীয় ফার্মেসিতে।
ঔষধের মাধ্যমে শরীরের ব্যথা নিরসন হয় ঠিকই, কিন্তু এর ফলে এক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশংকা কিন্তু থেকেই যায়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা নিরসন করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এমন কিছু খাদ্য উপাদান যেগুলো একদিকে যেমন দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে ভূমিকা রাখে, ঠিক তেমনি শরীরের ব্যথা নিরসনেও এদের অবদান অনস্বীকার্য। পাশাপাশি এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলো শরীরের ব্যথা নিরসনে ভূমিকা রাখে।
হলুদ
হলুদ শুধু একটি মশলাই নয়, বরং এটিকে এক ধরনের স্বাস্থ্যবটিকাও বলা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় হলুদ একটি বিশ্বস্ত নাম।
হলুদের নানাবিধ গুণের মধ্যে একটি হলো এটি শরীরের ব্যথা নিরসনে ভূমিকা রাখে।
কারণ হলুদে থাকা কারকিউমা এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শরীরের ব্যথা নিরসনে ভূমিকা রাখে। হাড়ের ব্যথা উপশমে হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই মশলা হিসেবে হলুদের ব্যবহার আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া কেউ চাইলে দুধের সাথেও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
পেঁয়াজ, রসুন ও আদা
আমাদের দেশে রান্নাঘরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা। প্রায় সব তরকারিতেই এগুলো ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অনেকে চায়ের সাথেও আদা খেয়ে থাকেন।
তবে অনেকেই হয়ত জানে না মশলা হিসেবে ব্যবহার হওয়া এই উপাদানগুলো ভেষজ গুণেও সমৃদ্ধ। পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুনে থাকা সালফার পেশী ও গাঁটের ব্যথা এবং শরীরের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহবিরোধী জিনজেরলস যা শরীরের ব্যথা হ্রাসে সহায়ক। তাই যাদের শরীরে ব্যথা রয়েছে, তারা এই মশলাগুলো খাওয়ার উপর জোর দিতে পারেন।
পুদিনা পাতা
অ্যাসিডিটির সমস্যা হ্রাসে পুদিনা পাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পুদিনা পাতায় রয়েছে মেনথল নামক এক ধরনের উপাদান যা শরীরের ব্যথা প্রশমনে ভূমিকা রাখে। যাদের হাড় কিংবা মাংসপেশীতে ব্যথা রয়েছে তারা নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
টক দই
দেশীয় খাবার হিসেবে টক দই বাংলাদেশে বেশ সুপরিচিত। অনেকে আবার রান্নাতেও টক দই ব্যবহার করে থাকেন। টক দইয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়া এতে থাকা মাইক্রো-ফ্লোরা নামক উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূরীকরণেও সহায়তা করে টক দই।
তিলের বীজ
তিলের বীজ আমাদের দেশে খুব বেশি পরিচিত না হলেও এর পুষ্টিগুণের তালিকা কিন্তু বেশ লম্বা। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা দেহের মাংসপেশীর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া তিলের বীজে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ আরও নানা পুষ্টি উপাদান যা দেহের সুস্থতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চর্বিহীন মাংস
মাংস বরাবরই প্রোটিনের ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মাংসে যদি অতিরিক্ত চর্বি থাকে তা দেহের স্থূলতা বৃদ্ধিসহ আরও নানা ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনে।
অন্যদিকে চর্বিহীন মাংস একদিকে যেমন দেহে অতিরিক্ত মেদ জমায় না, ঠিক তেমনি এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা নিরাময়েও অবদান রাখে।
উপরিউক্ত খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সেই সাথে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর তা হলো অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে। কারণ এগুলো শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে।
tanjimhasan001@gmail.com

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.