প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
একবিংশ শতকে এসে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা বাস করছি বিশ্বগ্রামে। বিশ্বজোড়া আত্মীয়তা জুড়তে, কখনও কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে কিংবা নিছক কৌতূহলেই নানান ভাষা শেখার গুরুত্ব অনুভূত হয়। বর্তমান প্রযুক্তির বিভিন্ন এপ্লিকেশনের মাধ্যমে কাজটিকে সহজ করে নিয়ে এসেছে আমাদের মুঠোফোনেই। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ সেই সুবিধাকে নিয়ে গেছে কয়েক ধাপ এগিয়ে। বিভিন্ন রকম অ্যাপ ব্যবহার করে কীভাবে বিদেশী ভাষা দ্রুত আত্মস্থ হতে পারে তার জন্যই রইলো লেখাটি।
মুঠোফোনটা নিয়ে গুগল প্লেস্টোরে খোঁজ করলেই স্ক্রিনে উঠে আসবে এক ঝাঁক অ্যাপ। কোনটার নির্বাচন সবচেয়ে লাভজনক সেটা আপনার শেখার ধরন ও ব্যবহারের উপর নির্ভর করছে। বিদেশী ভাষা শেখার কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ডুয়োলিংগো, বুসু, ফালোও, মেমরাইস, হ্যালোটক, বাবেল, লিংগোডিয়ার, রোজেট স্টোন, পিমসিউলার। তবে এদের মাঝে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ডুয়োলিংগো। এবার ব্যবহারকারীর আগ্রহের উপর এর চয়ন, তাই জেনে নিতে হবে এদের সুবিধাগুলো।
ডুয়োলিংগো
খেলার ছলে শেখাবে নানান ভাষা। অ্যাপ খুললেই চোখে পড়বে সবুজ রঙের একটি ছোট্ট পাখি, যার নাম ডুয়ো। এটিই হবে ভাষা শেখার সহযাত্রী। একেকটা ভাষার কোর্স চয়ন করলে তার ভেতর থাকবে গেমের মতনই নানান ধাপ। প্রতি অধ্যায়ে নতুন শব্দ শেখা। শোনা ও বলার সাথে লিখতে পারবেন, কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে অনুশীলন শুরুর আগের টিপস দেখে নিলেই হলো।
সাথে আছে গল্পভিত্তিক ও পডকাস্ট শুনে অনুশীলন। তবে আপনি ততক্ষণ অনুশীলন করতে পারবেন যতক্ষণ হার্টস থাকবে। এটা ফুরুলে আবার কিছু পুরোনো অধ্যায় শেখা শব্দ আবার ঝালাই করে হার্টস লাভ করা যাবে।
সর্বশেষ এতে মিউজিক ও গণিতের ফিচার যুক্ত হয়েছে। প্রিমিয়াম ভার্সনে বারবার ভুল হওয়া শব্দগুলো নিয়ে চর্চা করা যায়। এটাতে থাকবে অসীম হার্টস আর সম্পূর্ণ ফিচার বিজ্ঞাপন মুক্ত। ডুয়োলিংগো থেকে প্রাপ্ত স্কোর অনেক দেশের বৃত্তিমূলক বিজ্ঞপ্তিতে জানতে চাওয়া হয়।
বুসু
বুসু অ্যাপটিও ফ্রি ও প্রিমিয়াম দুটো ভার্সনেই পাওয়া যায়। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে কমিউনিটি কনভারসেশন বা গোষ্ঠীভিত্তিক আলাপ-চারিতার মাধ্যমে ভাষা শেখা যায়। এটাতে শেখার গতি একটু দ্রুত।
টপিক ধরে এখানে ভিডিওর সাথে অধ্যায় যুক্ত করা আছে। এই অ্যাপটি উচ্চারণে অনেক খেয়াল রাখে এবং শুনে শুনে বারবার অনুশীলন করা যায়।
মেমোরাইজ
এই অ্যাপটিতে আছে মোট ৩৪টি ভাষা। স্থানীয়দের বাচনভঙ্গির ভিডিও দেখে সেখানকার মতন করে নতুন নতুন শব্দ শেখা সহজ হয়।
সম্প্রতি এই অ্যাপটিতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করা হয়েছে। নিজের ইচ্ছে মতন কোনো একটি বিষয় বেছে নিয়ে এর সম্পর্কে কথা বলা যায়।
লিংগো ডিয়ার
এশিয়ান ভাষা যেমন, জাপানিজ, চাইনিজ ও কোরিয়ান শেখার জন্য ভালো একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ অনেকটা ডুয়োলিংগো এর মতন শোনার সাথে টাইপিং ফিচার যুক্ত। এছাড়া তো ছবির সাথে করে সঠিক শব্দ চয়ন আছেই। এখানে মাসকট একটি হরিণ।
ফালোও
ফালোও বানরের সাথে পাওয়া যাবে ২৭টি ভাষা শেখার সুবিধা। এতে উচ্চারণ শিখাতে জোর দেয়া হয়েছে। বলা আর লেখার দক্ষতা যাচাইয়ে আলাদা অনুশীলন। সচরাচর করা ব্যাকরণগত ভুল আলাদা করে ঠিক করে নেয়া যায়।
শুধু ইংরেজি শিখতে অ্যাপ
বিদেশি ভাষার ভেতর আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে তকমা পাওয়া ইংরেজি শেখার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যারা উচ্চ শিক্ষার জন্যে চেষ্টা করছে তাদের আইএলটিএস বা টোফেল এর সহায়ক হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি নিজস্ব অ্যাপ আছে ‘ইংলিশস্কোর’ নামের। এখানে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষার জন্যে আছে অনুশীলন, যেগুলোর মাধ্যমে শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ ঠিকঠাকভাবে ঝালাই হবে। এছাড়া অন্য ভাষা শেখার সুবিধা থাকলেও ইংরেজি শেখার জন্যে চমৎকার আরেকটি অ্যাপ হলো রোজেট স্টোন। দশ মিনিট করে অনলাইন বা অফলাইন দুই ভাবেই শেখা যায়।
এআই ফিচার যুক্ত সহজ শেখা
হ্যালো, টকপাল, ল্যাং এআই, ল্যাংগো টক, লুরা, ড্রপস, লার্না -এই অ্যাপগুলিতে ভাষা শেখার জন্য আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত সুবিধা। ল্যাংগো টক এআই চ্যাট বটে যুক্ত করে ভাষা শেখাকে ত্বরান্বিত করবে। ড্রপস আর লার্না ইংরেজি শেখার জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া চ্যাট জিপিটিকে কমেন্ট করলে সেটিও ভাষা শিখতে সাহায্য করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ হতে স্নাতক সম্পন্ন করা অনাবিল ঘোষ তার অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি নিজস্ব আগ্রহ ও ভালো লাগা থেকে বিদেশি ভাষা শেখার শখ পুষে ফেলেন। ভবিষ্যতে ভিন্ন কোনো দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কাজে লাগবে ভেবে আরও উৎসাহিত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে ব্যবহার করে আসছেন ডুয়োলিংগো। শুরু করেন জার্মান শেখা দিয়ে। এরপরে একে একে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ।
অনাবিলের মতে, “ডুয়ো থেকে খুব সহজে একটা বিদেশি ভাষার বেইসিকটা বুঝতে পারা যায়। ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যও এই অ্যাপটা খুব কাজের। অ্যাপটার পুনরাবৃত্তিমূলক অনুশীলনগুলোর জন্য প্রতিদিন অল্পকিছু সময়ও দিলে নতুন শব্দগুলো বেশ মনেও থাকে।”
তবে অনাবিল আরও বলেন যে, “শুধু একটা অ্যাপে আটকে থাকলে আসলে নতুন ভাষাটা কাজ চলার মতো জানা হয় না।” অনাবিল ডুয়োলিংগো ছাড়াও ছাড়াও ব্যবহার করেছেন বুসু।
অনাবিলের অভিজ্ঞতা বলে নতুন শব্দ বা বাক্যগুলো নিজস্ব নোট রাখা উচিত। সাথে এআই ফিচার ব্যবহার করে কথা বলার ও লেখার কোনো একটি অভ্যাস করারও পরামর্শ দেন। সাথে সাথে কিছু জনপ্ৰিয় ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্য নিয়ে ভাষাটাকে চর্চার মধ্যে রাখা যেতে পারে। চর্চাতেই রয়েছে ভাষা শেখার প্রচেষ্টার সফলতা।