Bangla
3 days ago

যেভাবে মানুষের প্রভাবে  ৮০০০ বছর ধরে বড় হলো গৃহপালিত প্রাণী, ছোট হলো বন্য প্রাণী

কৃষিকাজের জন্য গৃহপালিত পশু
কৃষিকাজের জন্য গৃহপালিত পশু Photo : অ্যান্সিয়েন্ট অরিজিনস

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

মানুষ আর প্রাণীর সম্পর্ক বহু পুরনো। একসময় প্রাণীর দেহের আকার বদলাতো মূলত প্রাকৃতিক কারণে, যেমন, জলবায়ু, গাছপালা, খাবারের ধরন ইত্যাদির প্রভাবে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, প্রায় এক হাজার বছর আগে মধ্যযুগে এসে এই পরিবর্তনের নিয়ন্ত্রণ মূলত মানুষের হাতে চলে আসে। মানুষ গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে বড় করার জন্য বিশেষভাবে প্রজনন করাতে থাকে। আর বন্য প্রাণীরা মানুষের শিকার ও বনভূমি ধ্বংসের চাপে ছোট হয়ে যেতে শুরু করে।

ফ্রান্সের মঁপেলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ভূমধ্যসাগরীয় ফ্রান্সের ৩১১টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের ২ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি প্রাণীর হাড় পরীক্ষা করেছেন। তারা প্রায় ৮,০০০ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছেন প্রাণীদের দেহ কেমন বদলেছে। এই বিশাল গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসে।

গবেষণা জানাচ্ছে, প্রাকৃতিক কারণে প্রাণীদের আকার বদলানোর পাশাপাশি প্রায় এক হাজার বছর আগে থেকে মানুষের প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজ করতে শুরু করে। বিশেষ করে মধ্যযুগে কৃষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে বড় আকারের গৃহপালিত প্রাণী বেছে নিয়ে তাদের প্রজনন করাতো। এর ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম গরু, ভেড়া, ছাগল, শূকর, মুরগির আকার আগের চেয়ে বড় হয়ে যায়।

মানুষের প্রভাবে বড় হয়েছে গৃহপালিত ভেড়া, আকারে ছোট হয়েছে বুনো শেয়াল,

ছবি: কোলাজ  

 

মধ্যযুগে প্রাণী নির্বাচনের নতুন ধারা

মধ্যযুগে কৃষিকাজে বড় পরিবর্তন আসে। তখন কৃষকরা বুঝতে পারে—বড় আকারের প্রাণী বেশি মাংস দেয়, বেশি দুধ দেয় এবং জমি চাষ কিংবা ভারী জিনিস টানার কাজে বেশি উপকারী। তাই তারা বিশেষভাবে বড় প্রাণীদের বংশবৃদ্ধির জন্য বেছে নেয়। এই নিয়ন্ত্রিত প্রজনন বা সিলেকশন চলতে থাকে অনেক প্রজন্ম ধরে। ফলে গৃহপালিত প্রাণীগুলোর আকার তাদের বন্য পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেক বড় হয়ে যায়।

কিন্তু বন্য প্রাণীরা তখন বিপরীত সমস্যায় পড়ে। মানুষের শিকার, বনভূমি কেটে ফেলা এবং জমি চাষাবাদের কারণে তারা নিরাপদ জায়গা ও খাবার হারায়। সীমিত জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য তাদের ছোট হয়ে যাওয়া সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। তাই শেয়াল, খরগোশ, হরিণ, বুনো শূকরের মতো প্রাণীরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট আকারের দিকে অভিযোজিত হয়।

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণে ইতিহাসের চিত্র

বিজ্ঞানীরা প্রাণীর হাড়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা এবং দাঁতের গঠন দেখে বোঝার চেষ্টা করেছেন কালের সঙ্গে তাদের আকার কিভাবে বদলেছে। এরপর তারা জলবায়ু, গাছপালা, মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জমি চাষের ধরন ইত্যাদির সঙ্গে এসব পরিবর্তনের মিল খুঁজেছেন।

আজকের দিনে এর গুরুত্ব

এই গবেষণা শুধু অতীতের গল্প নয়, বরং আজকের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি কোনো বন্য প্রাণীর আকার ছোট হতে শুরু করে, সেটি পরিবেশের অবনতি বা খাবারের সংকটের আগাম ইঙ্গিত হতে পারে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, প্রজাতিটি বিপদের মুখে পড়ছে কিনা, এবং জনসংখ্যা কমে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়।

গবেষণা জানাচ্ছে, গত এক হাজার বছরে মানুষের প্রভাব প্রাণীর আকার বদলানোর গতি বাড়িয়েছে। আজকের শিল্পায়িত কৃষি, শহর সম্প্রসারণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন আসলে মধ্যযুগে শুরু হওয়া সেই চাপেরই আরও তীব্র রূপ।

আধুনিক সংরক্ষণবিদরা যদি নিয়মিত বন্য প্রাণীর আকারের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দ্রুত বুঝতে পারবেন কোন প্রজাতি বিপদে আছে। গবেষকরা মনে করেন, মানুষের প্রভাব এখনও প্রাণীর বিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে, তাই অতীতের শিক্ষা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত দরকারি।

mahmudnewaz939@gmail.com

শেয়ার করুন