Published :
Updated :
ঢাকায় অফিসে যাওয়ার পথে নিজ গাড়িতেই চালকের হাতে ‘অপহরণ’ হতে হতে বেঁচে গেছেন এক নারী; প্রাইভেট কারের তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় দুই ঘণ্টা পর মুক্তি পেয়েছেন বন্দিদশা থেকে।
বৃহস্পতিবার সকালে সায়েন্সল্যাব এলাকার বসুন্ধরা গলির বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে মিরপুর ডিওএইচএসে অফিসে রওনা দেন কর্মজীবী ওই নারী। কিছু দূর যাওয়ার পরই সরু গলির মধ্যে এক ব্যক্তি পেছনের সিটে ওই নারীর পাশে উঠে পড়েন।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপরিচিত সেই ব্যক্তি ও গাড়ির চালক তার ওপর ব্লেড ও রেঞ্জ নিয়ে আক্রমণ করে বসেন। গাড়িতে আটকে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে ‘অজানা গন্তব্য’নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দুই ঘণ্টা গাড়িতে করে এদিক সেদিক চক্কর দেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে হঠাৎ থেমে যায় গাড়ি। তেল ফুরালে চালক রনি গাড়ি থেকে নেমে যান; তখন কৌশলে ওই নারী জানালা খুলে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।
নিজের চালকের হাতে নিজের গাড়িতেই দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পর আকস্মিকভাবে ছাড়া পেলেও ‘আতঙ্ক’কাটেনি ওই নারীর। বেলা দেড়টার দিকে শাহবাগ থানায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ‘অপহরণ চেষ্টার’ কথা বলার সময়ও ভয় যেন পিছু ছাড়ছিল না তার।
শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, আটক কাসেম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তবে কেন ওই নারীকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল সে বিষয়ে কিছু বলছে না। রনিকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ভুক্তভোগী শাম্মী আক্তার (৩৫) নামের ওই নারী থাকেন সায়েন্সল্যাব এলাকার বসুন্ধরা গলিতে। চাকরি করেন মিরপুর ডিওএইচএসে একটি পিআর অফিসে। দুই বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে ৯ বছরের সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
শাম্মী জানান, প্রাইভেট কারের চালক হিসেবে রনিকে (৪০) এক সপ্তাহ আগেই নিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার সময় রনি কাছাকাছি না থাকায় তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হন।
তিনি বলেন, এরপর প্রধান সড়কে আসার আগেই রনি চলে আসলে তাকে গাড়ি চালাতে দেই। তখন আমি পেছনের আসনে এসে বসি।
“একটু দূর যাওয়ার পর রনি হঠাৎ করেই এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলে। পরে জানি তার নাম কাসেম।“
ওই ব্যক্তি গাড়িতে উঠেই তার মুখ চেপে ধরে এবং ব্লেড ও রেঞ্জ দেখিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করে জানিয়ে শাম্মী বলেন, এ সময় চেষ্টা করেও তিনি চিৎকার করতে পারছিলেন না। ওই ব্যক্তি তাকে গাড়ির সিটে চেপে ধরেন। এ সময় চালক রনি গাড়ি চালাতে চালাতে রেঞ্জ দিয়ে তাকে আঘাত করে।
শাম্মী বলেন, “আমাকে মেরে ফেলা হবে কি না জানতে চাইলে রনি না বলে জানায়। কেন অপহরণ করা হয়েছে এবং কোথায় নেওয়া হবে জানতে চাইলে সে একেক বার একেক জবাব দেন।“
মাঝে জোর করে পানি ও ট্যাবলেট খাওয়ানোর চেষ্টা হয় জানিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, “কিন্তু পানি ও ট্যাবলেট কিছুই খাইনি। পানিতে মেডিসিন ছিল, তাই খাওয়ার ভান করে সব পানি ফেলে দেই।
“একবার ভেতরে থেকে মাথা উঁকি দিয়ে সাইনবোর্ডে বনানী লেখা দেখতে পাই। দুই ঘণ্টা পর গাড়িটি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সামনে আসে তখন গাড়ির তেল শেষ হয়ে যায়।”
এ সময় রনি গাড়িতে তাকে ও কাসেমকে ভেতরে রেখে চলে যায় উল্লেখ করে শাম্মী বলেন, যাওয়ার সময় তার ব্যাগে থাকা আট হাজারের মত টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “ভেতরে লক অবস্থায় থাকায় আমার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। কাসেমকে বললাম যে, আমি চিৎকার করব না, একটু এসি ছাড়তে দাও।
“কাসেমের ধারণা নেই যে, চাবি না থাকলে এসি ছাড়া যাবে না। একটু সুযোগ দেওয়ায় সামনের দিকে ঝুঁকে চালকের পাশের দরজা খুলে মাথা একটু বের করে চিৎকার দেই। সামনের বাম পাশের দরজাও খুলে দেই।”
এ সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং পেছনের সিটে থাকা কাসেমকে ধরে ফেলে।
শাহবাগ থানার ওসি মওদুত জানান, জনতা এ সময় কাসেমকে গণধোলাই দেয়। রনি তেল নিয়ে আর গাড়ির কাছে না এসে পালিয়ে যায়।
কাসেমের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানায় এলাকায়। ঢাকার ট্যানারির মোড় এলাকায় থাকে।
এই ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করছে বলে তিনি জানান।