Bangla
3 years ago

নতুন করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে দ্বিতীয় গবেষণায় চীনের ‘না’

Published :

Updated :

নতুন করোনাভাইরাসের উৎস জানতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণায় অংশ নেবে না চীন।

সে দেশের একজন শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ কথা বলেছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমেটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচওর গবেষণার প্রস্তাবে উহানের পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অন্তর্ভুক্ত করার পর চীনের সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হল।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপপ্রধান জেং ইসিন বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুসন্ধানের অধীনে একটি গবেষণার লক্ষ্যের তালিকায় পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকায় তিনিঅবাক’ হয়েছেন।

জেং ইসিন বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের উৎস জানতে পরবর্তী পর্যায়ের অনুসন্ধানের বিষয়ে ডব্লিউএইচওর পরিকল্পনা সাধারণ জ্ঞানের প্রতি সম্মান দেখায়নি, এবং এটা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। আমাদের পক্ষে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব না।”

কোভিড-১৯ নিয়ে প্রথম নথি প্রকাশের ঠিক আগে চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লিউআইভি) বেশ কয়েকজন কর্মী অসুস্থ হয়েছিল- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দাবির জবাবও দিয়েছেন জেং।

তিনি বলেন, “ডব্লিউআইভির কোনো কর্মী বা গবেষক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি।”

কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে এ বছরের মার্চে ডব্লিউএইচও একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি সম্ভবত মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ার আগে অন্য একটি প্রাণীর দেহে বিকশিত হয়েছে।

তবে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে জি-৭ জোটের নেতারা সেই প্রতিবেদনের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

উহানের গবেষণাগারের নিরাপত্তার ফোঁকর গলেই কোনোভাবে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে শুরুতে অনেকে দাবি তুলেছিলেন। তখন চীনের রাখঢাক নানা সন্দেহের উদ্রেকও ঘটিয়েছিল।

তবে চীনের প্রত্যাখ্যান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্তের পর তা মিইয়ে এলেও এখন আবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে উহান। এখন কেননা অ্যান্থনি ফাউচির মতো খ্যাতিমান সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞরাও উহানের ল্যাবতত্ত্ব একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

কোভিড-১৯ মহামারীর সূত্রপাত কীভাবে হলো, তা নতুন করে অনুসন্ধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যে তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

চীনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগারগুলোতে পশ্চিমের কোনো পর্যবেক্ষককেই প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় চীনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

কোসো ধরনের দুর্ঘটনাবশত উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস বাইরে ছড়াতে পারে- এই ধারণার পক্ষে খুব কম নতুন তথ্যউপাত্তই পাওয়া যাচ্ছে।

ওই পরীক্ষাগারেই বাদুড়ের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল। তবে অনেক বিজ্ঞানীই বলছেন, এভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তবে, মার্চে ডব্লিউএইচওর অনুসন্ধান দলের একজন সদস্য, যিনি মূল তদন্ত পর্যবেক্ষণে সহায়তা করেছেন, বলেন, প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে যতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, উহানের পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়টিতে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

ডব্লিউএইচওর মহাসচিব তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেইসুসও নতুন করে কোভিড-১৯ এর উৎস নির্ণয়ের অনুসন্ধানে চীনকে আরও সামগ্রিকভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

গত ১৫ জুলাই তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ের অনুসন্ধানটি মহামারীর শুরুর দিকে মাঠপর্যায়ের পর্যাপ্ত তথ্যউপাত্তের ঘাটতির কারণে বিঘ্নিত হয়েছে।

“স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত হতে এবং সহযোগিতা করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। কী ঘটেছিলো তা জানাতে এই রোগে মারা যাওয়া ও  আক্রান্ত হওয়া লাখ লাখ মানুষের প্রতি আমাদের দায় রয়েছে।”

এরপর ১৬ জুলাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানের সময় তাদের সরকার পুরোপুরি সহযোগিতা দিয়েছে।

গবেষকদের তথ্যউপাত্ত দেওয়া হয়নি বা কোথাও কোথাও প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

ঝাও লিজিয়ান বলেন, “বৈশ্বিকভাবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নির্ণয়ের বিষয়টিতে চীনের অবস্থান স্পষ্ট। উৎস নির্ণয়ের গবেষণাটি একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করে বরং সব পক্ষেরই উচিত বিজ্ঞানীদের মতামত এবং উপসংহারের প্রতি সম্মান জানানো।”

Share this news