Bangla
2 years ago

বন্যা পুনর্বাসন কর্মসূচি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই বাস্তবায়নের দাবি নাগরিক সমাজের

'আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা হতে হবে তহবিল সংগ্রহ ও কারিগরি সহায়তা'

Published :

Updated :

যেকোন দুর্যোগে স্থানীয় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানই সবার আগে দুর্যোগে পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিৎ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। একারণেই হাওড়াঞ্চলের বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিৎ মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহাযতা করা। আজ সোমবার প্রায় ৭০০ জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও সুশীল সমাজ সংগঠনের নেটওয়ার্ক বিডিসিএসও আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তাগণ এসব কথা বলেন। খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তির।

বিডিসিএসও প্রসেস জাতীয় সমন্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিডিসিএসও সিলেট বিভাগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। এতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিডিসিএসও সিলেট বিভাগের সভাপতি তোফাজ্জল সোহেল। আরও বক্তৃতা রাখেন এওয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ, এডাব সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী বাবুল আকতার, এডাব সিলেট জেলা সভাপতি এ টি এম বদরুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের অধ্যাপক জহিরুল হক শাকিল এবং দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে তোফাজ্জল সোহেল উল্লেখ করেন, “জাতিসংঘসহ কয়েকটি সংস্থা সম্প্রতি বন্যা আক্রান্ত এলাকার ক্ষয়-ক্ষতির উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি তারা বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয়তাও যাচাই করেছে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। তবে আমরা সবসময়র মতো এই বন্যায় স্থানীয় মানুষ ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর ভূমিকায় অনুপ্রাণিত। আমরা মনে করি, তাঁদের এই ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমেই বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তহবিল প্রদান করা উচিৎ।”

কারণ হিসেবে তোফাজ্জল বলেন, “স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মানুষের প্রয়োজন সবচেয়ে ভাল বুঝেন। ফলে তাঁদের কর্মসূচির বাস্তবায়ন অধিকতর কার্যকর হতে পারে, যার দরুন ভবিষ্যতে যেকোনও দুর্যোগে তাদেরকে দ্রুতসময়ে কার্যকরভাবে পাওয়া যাবে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে পরিচালন ব্যয় তুলণামূলক কম।”

বাবুল আকতার বলেন, “বাইরে থেকে কোনও ত্রাণ সহায়তা এলে তা অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে হওয়া উচিৎ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করেই তা করতে হবে। এতে সঠিক মানুষের কাছে সঠিক সহায়তাটা পৌঁছানো যাবে।”

মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কাজ করি, আমরা তাদের ঘরের খরব-মনের খবর সবচাইতে ভালো জানি। তাই আমাদেরকে পাশে রেখে কোনও কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে সেটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

সংবাদ সম্মেলনে এটিএম বদরুল ইসলাম বলেন, “দূর থেকে অনেকে এসে শহরের আশপাশে ত্রাণ দিয়ে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানে কোন এলাকায় কী ধরনের সহযোগিতা লাগবে।”

অধ্যাপক জহিরুল হক শাকিল বলেন, “আমি দেখেছি একজন ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১০ হাজার টাকার ত্রাণ নিয়ে এসছেন। অথচ একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এই ত্রাণ দিলে পুরো ৫০ হাজার টাকা ত্রাণ সহায়তা দিতে পারতো। আমাদেরকে বৈশ্বিক বাস্তবতার আলোকে ভাবতে হবে, কিন্তু কাজটা করতে হবে স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে।”

গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, “এখন স্থানীয় পুনর্বাসনের জন্য কী প্রয়োজন তার একটি চাহিদা নিরূপন করা খুবই জরুরি। এই চাহিদাটা যাচাই করতে হবে স্থানীয় এলাকায় গিয়ে, স্থানীয় সংস্থাগুলোকেই। আইএমও-এর মতো আন্তর্জাতিব সংস্থাগুলোকে এখন জরুরিভিত্তিতে হাওড়াঞ্চলে বন্যায় বাস্তুচ্যুত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। এটা কেবল একটা বন্যা নয়, এটা জলবাদ্ধতা। এর প্রভাব ব্যাপক। প্রতিটি জেলার জন সচিব পর্যায়ের একজন ত্রাণ কমিশনার নিয়োগ করা খুবই জরুরি।”

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাঁদের উচিৎ তহবিল সংগ্রহ, কারিগরি সহায়তা ও মনিটরিংয়ের মধ্যে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা, মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকেই বাস্তবায়ন করকে হবে, আর পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করতে হবে সরকারের মাধ্যমে।”

Share this news