Bangla
2 years ago

বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক কিছু রাস্তা

Image Source: HolidayIQ.com
Image Source: HolidayIQ.com

Published :

Updated :

বিখ্যাত গায়ক লিওনেল রিচির একটি সুন্দর গান আছে, নাম ‘রোড টু হেভেন।’ গানের
ভাবাদর্শ ভিন্ন কিছু বললেও পৃথিবীতে এমন কিছু রাস্তা আছে যেগুলো আক্ষরিক
অর্থে রোড টু হ্যাভেনের উল্টো, অর্থাৎ ‘রোড টু হেল’ বলা চলে।
চলুন জেনে নেয়া যাক এরকম কিছু বিপজ্জনক রাস্তার কথা যেখানে ক্ষণিকের
অসাবধানতা বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ।
কারাকোরাম হাইওয়ে, পাকিস্তান
প্রথমেই বলা দরকার পাকিস্তানের কারাকোরাম হাইওয়ের কথা। কারাকোরাম হাইওয়ের
বিস্তার বিশাল এলাকা জুড়ে; রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০ মাইল বা ১৩০০ কিলোমিটার
এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ১৫৫০০ ফুট।
পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার এই রাস্তাটি চমৎকার একটি পর্যটন স্থান হলেও এর
পদে পদে যেন বিপদ ওঁৎ পেতে আছে। কারাকোরাম হাইওয়ে ল্যান্ডস্লাইড বা ভূমিধ্বস,
অ্যাভালানশ বা তুষারধ্বস, আচমকা বন্যা এবং ভারী তুষারপাতের মতো ভয়াবহ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। 
এ রাস্তায় দুর্ঘটনা যেন খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। ১৯৫৯ সালে রাস্তাটি যখন
প্রথম তৈরি হয়, তখনই ভূমিধ্বসে প্রায় হাজারখানের শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ২০১৭
সালের অক্টোবর মাসে কারাকোরাম হাইওয়ের একটি গিরিসঙ্কটে ১৭ জন যাত্রী নিয়ে
বাস উল্টেগেলে সবাই প্রাণ হারান।
এমনই সব দুঃখজনক ঘটনা প্রায়ই ঘটে কারাকোরাম হাইওয়েতে। তবুও ভ্রমণপিপাসু
মানুষের কাছে কারাকোরাম হাইওয়ে এক স্বপ্নের নাম। কেউ কেউ তো একে বিশ্বের
অষ্টম আশ্চর্য বলতেও বাদ রাখেননি।
নর্থ ইয়াঙ্গাস রোড, বলিভিয়া
রাস্তাটির নাম নর্থ ইয়াঙ্গাস রোড হলেও অন্য একটি ডাকনামে রাস্তাটি পরিচিত,
যেটি হচ্ছে ‘ডেথ রোড’ কিংবা মৃত্যুসড়ক। এমন ভয়াবহ নামের পেছনের কারণটাও
অবশ্য বেশ ভয়াবহ।

রাস্তাটি বড়জোর বারো ফুট চওড়া, বিপজ্জনক সব মোড় নিতে নিতে প্রায় ১১৫০০ ফুট
সর্বোচ্চ উচ্চতায় বলিভিয়ার বিখ্যাত কর্ডিলেরা ওরিয়েন্টাল পর্বতের মধ্যে দিয়ে
এঁকেবেঁকে চলে গেছে। তার সাথে আরো আছে বৃষ্টি আর কুয়াশা।
একারণে বৃষ্টি আর কুয়াশার জন্য বেশিরভাগ সময়ই রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে কিংবা
গাড়ির উইন্ডশিল্ড হয়ে ঝাপসা যায়। উপরন্তু, রাস্তাটির অনেকগুলো অংশেই কোনো
হাটার মতো জায়গা নেই, এমনকি কোনো রেলিংও নেই।
ফলে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অতিমাত্রায় সাবধান না থাকলে পড়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা আছে প্রায় চার থেকে দশ হাজার ফুট নিচে। প্রতিবছর এমন ২০০ থেকে ৩০০
জন হতভাগ্য মানুষ এই রাস্তাটিতে প্রাণ হারান। 
ডাল্টন হাইওয়ে, আলাস্কা
আলাস্কার এই রাস্তাটিতে যারাই গাড়ি চালাতে যান, তাদেরই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেফটি
গিয়ার কিংবা সারভাইভাল কিট নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ একবার কোনো
ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ৪১৪ মাইলের রাস্তাটির কোনো অংশেই কোনো ধরনের সাহায্য
পৌঁছাবার সুযোগ নেই। সেখানে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা, প্রায় ২৪০ মাইল রাস্তা জুড়ে
নেই কোনো গ্যাস-স্টেশন, রেস্টুরেন্ট বা হোটেল। 
রাস্তাটির বেশিরভাগ অংশেই কোনো রেলিং নেই; অনেকটা অংশ স্রেফ নুড়ি-পাথরে তৈরি।
ঠিক এজন্যই, শীতকাল তো শীতকাল, এমনকি ভরা বসন্তকালের সুন্দর দিনেও গাড়ির
ড্রাইভাররা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার আগে দু’বার ভেবে নেন।
আর শীতকালে তো পেশাদারভাবে বরফের ওপরে ট্রাক চালানো ড্রাইভাররাও এই রাস্তা
ধরে যেতে চান না, এতটাই পিচ্ছিল আর তুষারাবৃত হয়ে থাকে রাস্তাটি। এছাড়াও
রাস্তাটির দুই পাশের তুন্দ্রা অঞ্চলের বদৌলতে যখন তখন তুষারধ্বসের ভয় তো
আছেই।
কিল্লার-পাঞ্জি রোড, ভারত
৭০.৮ মাইল দীর্ঘ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৮০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন এই রাস্তার মূল
বিপদগুলি হচ্ছে এর খাড়া দেয়াল, কোনো রেইলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা, কর্দমাক্ত
রাস্তা এবং বিশাল এক এলাকা জুড়ে কোনো জনবসতির চিহ্ন না থাকা।
রাস্তাটি শীতকালে এতটাই বিপজ্জনক যে, এটি গ্রীষ্মকালেই কেবলমাত্র খুলে দেওয়া
হয়, বাকি সময়টা বন্ধই থাকে। গোটা রাস্তাটা বিপজ্জনক তো বটেই, তবে রাস্তাটির

একটি মাইল ছয়েক দৈর্ঘ্যের অংশ যেন সাক্ষাৎ নরক! রাস্তার ঠিক ওপরে ঝুলে থাকা
বিশাল বিশাল আকারের পাথরগুলো দেখে ভয় হয়, এই বুঝি মাথার ওপর খসে পড়বে।
রাস্তাটি আজকের তৈরি নয়। প্রায় শ’খানেক বছর আগে স্থানীয় অধিবাসীরা এটি তৈরি
করেছিলেন, যদিও শেষ কয়েক দশকে একটিবারও এর মেরামত করা হয় নি। 
মানুষের অসাধ্য আসলে কিছুই নয়। তাই তোনিয়মিতভাবে দুর্গম এসব রাস্তা পেরিয়ে
হরহামেশাই মানুষ রাস্তাগুলোর দু’প্রান্তের জনপদের যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
আর তাছাড়া ভ্রমণপিপাসুরা তো আছেনই! হাজার হোক, নিজের প্রাণ নিজের হাতে নিয়ে
খেলা করা, এমন প্রবৃত্তি মানুষ ছাড়া আর কোন জাতির আছে!

শুভদীপ বিশ্বাস তূর্য বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
[email protected]

Share this news