Bangla
3 years ago

‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে  ‘বিশেষ খাতির’করে ফেইসবুক!

-- ছবি: রয়টার্স
-- ছবি: রয়টার্স

Published :

Updated :

বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক বরাবরই বলে এসেছে যে, প্ল্যাটফর্মটির নীতিমালা শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু ওই দাবির সঙ্গে বাস্তবতার অসামঞ্জস্যের অভিযোগ উঠেছে এবার। বলা হচ্ছে, সেলিব্রেটি এবং রাজনীতিবিদসহ বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ ‘হাই-প্রোফাইল’ ব্যক্তির বেলায় নিজেদের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে ফেইসবুক নিজেই। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।

ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ নথির সূত্র ধরে সোমবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যমটি ‘ক্রসচেক’ বা ‘এক্সচেক’ নামের একটি প্রোগ্রাম বানিয়েছিলো যা ‘জনপ্রতিনিধিদের’ জন্য প্ল্যাটফর্মটিতে হয়রানি ও সহিংসতা রোধের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটাতো।

উদাহরণ হিসেবে ব্রাজিলের ফুটবলার নেইমার জুনিয়রের কথা বলেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, নেইমারকে এক নারীর নগ্ন ছবি পোস্ট করতে দিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। নেইমারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন ওই নারী। পরবর্তীতে ছবিটি মুছে দিয়েছিলো ফেইসবুক।

যে সব ‘হাই-প্রোফাইল’ ব্যক্তিদের জন্য ফেইসবুক নিজস্ব কন্টেন্ট মডারেশন নীতিমালার ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে সামাজিক মাধ্যমটিতে কোভিড মহামারীর টিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছেন এবং মিথ্যাচার করেছেন বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।

২০১৯ সাল থেকে ফেইসবুকের কার্যক্রম নিয়ে এক অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জনসমক্ষে আমরা যা করছি বলে দাবি করি, আসলে আমরা সেটা করি না”। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন সরকারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা এক্সচেক প্রোগ্রামের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সবাই ওই প্রোগ্রামের অংশ ছিলেন না। ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ৫৮ লাখ ‘হাই-প্রোফাইল’ ব্যক্তি এক্সচেক প্রোগ্রামের অংশ ছিলেন।

কোন কন্টেন্ট প্ল্যাটফর্মে থাকবে আর কোনটি মুছে দেওয়া হবে--এই প্রশ্নে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কঠোর সমালাচনার মুখে পড়েছে ফেইসবুক। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের পর সামাজিক মাধ্যমটি নিজস্ব নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ করছে কি না-- আবারও সেই বিতর্কের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতীতে প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার গুরুভার একটি ওভারসাইট বোর্ড বানিয়ে তার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলো ফেইসবুক।

তবে ২০১৮ সালের একটি পোস্টের বরাত দিয়ে সোমবার ফেইসবুক মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন এক টুইটে বলেন, ফেইসবুক পেইজ এবং প্রোফাইলগুলোতে “সঠিকভাবে নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে একটি দ্বিতীয় স্তরের পর্যালোচনা ব্যবস্থা” হিসেবে কাজ করার কথা ছিলো এক্সচেক প্রোগ্রামটির।

“সুবিচারের দুটি ভিন্ন ব্যবস্থা নয় এটা; ভুল ঠেকানোর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা মাত্র”-- টুইটে বলেছেন স্টোন।

ফেইসবুককে “সাধারণ ব্যবহারকারীসহ হাই-প্রোফাইল অ্যাকাউন্টগুলোর ক্ষেত্রেও নীতিমালাগুলোর ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখার” পরামর্শ দিয়ে টুইট করেছে ওই ওভারসাইট বোর্ড। অন্যদিকে, ফেইসবুকের কর্মকাণ্ডের উপর আরও কার্যকর তত্ত্বাবধানের দাবি তুলেছেন সমালোচক ও অধিকারকর্মীরা।

“জরুরীভিত্তিতে সরকারি নীতিমালা প্রয়োজন যাতে অনলাইন দুনিয়া যেন অন্তত একটা জায়গা হয় যেখানে মানবাধিকার কার্যকরভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। এই প্রকাশনাগুলো থেকে আমরা এটা নিশ্চিত হতে পারছি যে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে পারি না আমরা”-- এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড।

Share this news