Bangla
20 hours ago

মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী ক্ষীরপুরির স্বাদ নিয়েছেন কি?

মাদারীপুরের ক্ষীরপুরি
মাদারীপুরের ক্ষীরপুরি Photo : মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

Published :

Updated :

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর জেলার ক্ষীরপুরির সুনাম বহুদিনের। এখানকার মানুষ নতুন কারও বা বিশেষ কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সর্বপ্রথম এই মিষ্টি নেন। এছাড়াও কোনও নতুন আত্মীয় বেড়াতে এলেও এই ক্ষীরপুরি দিয়েই আপ্যায়ন করে থাকেন। 

এছাড়া মাদারীপুর জেলার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ প্রবাসী। তারা বিদেশে যাতায়াত করার সময়ও মাদারীপুরের এই ক্ষীরপুরি কিনে নিয়ে যান। উপহার দেন বিদেশি বন্ধুদের।

জেলা শহরের সবচেয়ে বেশি ক্ষীরপুরি বিক্রি হয় পুরানকোর্ট এলাকার জীবন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও মাদারীপুর স্টেডিয়াম গেট সংলগ্ন রনজিৎ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এছাড়াও প্রাণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, মাতৃভান্ডারসহ বেশ কয়েকটি দোকান আছে যারা এই ক্ষীরপুরি বিক্রি করে আসছেন।

এর ভেতর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জীবন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। এর পথচলা শুরু হয় ১৯৩০ সালে। জীবন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি এই দোকান চালু করেন। শুরুতে কেবল রসগোল্লা তৈরি করতেন তিনি। সময়ের সঙ্গে তালিকায় যুক্ত হয় ক্ষীরপুরি, যা তার দোকানের সিগনেচার মিষ্টিতে পরিণত হয়।

জীবন মণ্ডলের পর দোকানের দায়িত্ব নেন তার ছেলে কানাই মণ্ডল। এখন সেই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার জীবন মণ্ডলের নাতি আকাশ মণ্ডল। তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে এখন দোকানটি পরিচালনা করছেন তিনি। এক সময়ের ছোট আর সাধারণ দোকানটি এখন পরিণত হয়েছে মাদারীপুরের সুপরিচিত স্থানে, যা দর্শনার্থীদের কাছেও প্রধান আকর্ষণ।

ক্ষীরপুরির জনক জীবন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ছবি: মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

আকাশ মণ্ডলের কাছ থেকে জানা যায় ক্ষীরপুরির রেসিপি ও জাদুকরী স্বাদের রহস্য। তিনি জানান, "প্রতিদিন আমাদের গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা গরুর তাজা দুধ দিয়ে ক্ষীরপুরি তৈরি করা হয়। প্রথমেই এই দুধ অল্প আঁচে জ্বাল দেয়া হয়। এটি ততোক্ষণ জ্বাল দেয়া হয় যতক্ষণ না আমাদের চাহিদামতো  ঘনত্বে পৌঁছে। তারপর এই মসৃণ আর মাখনের মতো নরম ক্ষীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সাবধানে তা ঢেলে দেওয়া হয় ছানার একটি স্তরের ওপর। ফলাফল হিসাবে পাওয়া যায় যথাযথ স্বাদের মিষ্টান্ন, যা খুব কড়া মিষ্টি নয় বরং বেশ হালকা বা ঠিকঠাক স্বাদের মিষ্টি।"

তিনি আরও যোগ করেন, "প্রতিদিন একইভাবে গ্রাম থেকে গরুর খাঁটি দুধ সংগ্রহ করি আমরা। এরপর আমার ঠাকুর দাদা যে পদ্ধতিতে মিষ্টি বানাতেন সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করি। এই কারণেই আমাদের ক্ষীরপুরির স্বাদ আজও একইরকম আছে, যেমনটা বহু বছর আগেও ছিল।"

রনজিত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের ক্ষীরপুরি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়, ছবি: মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

অধুনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রনজিৎ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রনজিৎ মন্ডল বলেন, "প্রতি কেজি ক্ষীরপুরি এখন ৬৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর দাম ছিল ৩০০ টাকা। চাহিদা বেশি হওয়া ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষীরপুরির দামও বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজি ক্ষীরপুরি বিক্রি হয়। তাছাড়া বিয়ের মৌসুমে এত বেশি অর্ডার থাকে যে বানাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।" 

তিনি আরও বলেন, "এই ক্ষীরপুরি বানানো আমার অনেকদিনের পুরনো অভিজ্ঞতা। ২৭ বছর জীবন মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করেছি। সেখান থেকেই এই মিষ্টি বানানো শিখেছি। পরে ২০১৪ সালে স্টেডিয়াম গেট সংলগ্ন এলাকায় মিষ্টির দোকান দিই। এখানে সাতজন কর্মচারী প্রতিদিন মিষ্টি বানায়। ক্ষীরপুরির জন্যই আমার এই দোকানের সুনাম জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।"

"এই ক্ষীরপুরির চাহিদা মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও আছে। অনেক সময় আগে থেকেই অর্ডার করে রাখতে হয়। তা না হলে ক্ষীরপুরি পাওয়া যায় না। কোনও অনুষ্ঠানের অর্ডার থাকলে সারা রাত জেগে এই ক্ষীরপুরি বানাই আমরা," যোগ করেন তিনি।

মাদারীপুরের ক্ষীরপুরির সুনাম এখন আর শুধু সে অঞ্চলে আটকে নেই। অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয়েছে মিষ্টিটির প্রতি। তবে মিষ্টিটি এখনো জিআই (গ্লোবাল ইন্ডিকেটর) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সেটি পেলে ক্ষীরপুরির ঐতিহ্যের ইতিহাসে যুক্ত হবে নতুন পালক। প্রায় শতবছরের পুরনো এই মিষ্টিটি দিয়েই দেশবাসী চিনবে মাদারীপুরকে।

mahmudnewaz939@gmail.com

Share this news