Bangla
a month ago

নতুন বাজেটে সুরক্ষামূলক শুল্ক প্রত্যাহার শুরু

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যের কর সুবিধা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা

Published :

Updated :

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যপ্যাকেজের ওপর সুরক্ষামূলক শুল্ক প্রত্যাহারের পরিকল্পনা আগামী অর্থবছর থেকে শুরু হচ্ছে। ২০৩০ সালের পর থেকে সব পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।

এ পরিকল্পনার আওতায় ব্লেন্ডার, জুসার, রাইস কুকার, ওভেন, মোবাইল ফোন সেট, স্যানিটারি ওয়্যার, মোটর যানবাহন এবং থ্রি-হুইলারের স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা পড়তে পারেন।

এছাড়া মুনাফা হোক বা লোকসান, সব করপোরেট করদাতাদের জন্য ন্যূনতম আয়কর হার শূণ্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১.০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।

আগামীকাল সোমবার (২ জুন, ২০২৫) বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন বাজেট অনুমোদন করতে যে ফাইন্যান্স অর্ডিন্যান্স ২০২৬ পাস হবে, তাতে এ ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ ধীরে ধীরে শুল্ক প্রত্যাহারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-কে বলেন, “আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে হঠাৎ করে উচ্চ কর চাপিয়ে না দিয়ে পর্যায়ক্রমে করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি আসবে।”

তবে তিনি এই ন্যূনতম করকে প্রত্যক্ষ করনীতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়, “এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন যে, এই ধরনের কর আদৌ থাকা উচিত কিনা।কর বাড়ানোড় ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ”

কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য প্যাকেজের করপোরেট আয়কর সুবিধা ২০২১ সালের স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) অনুযায়ী বহাল থাকবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ট্যাক্স এক্সপেনডিচার পলিসি ২০২৫ অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া যাবে, যা আগামী অর্থবছর থেকেই কার্যকর হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্য-ভ্যাট সুবিধা পেয়ে আসছিল, তাদের আগামী দুই বছর ৫ শতাংশ, ২০২৭-২৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০৩০ সালে ১০ শতাংশ এবং ২০৩১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।

তবে চাল, ডাল, শাকসবজি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি বহাল থাকবে। পাশাপাশি হাই-এন্ড ব্যাটারি প্রস্তুতকারকরা আগামী দুই বছর ভ্যাট অব্যাহতি পাবেন এবং পরবর্তী তিন বছর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

নতুন হাসপাতাল স্থাপনে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা আমদানি পর্যায়ে ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি পাবেন। এছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন ২০৩০ সাল পর্যন্ত কাঁচামাল আমদানি এবং স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “বিনিয়োগকারীরা তাদের অপারেশন খরচ পরিকল্পনায় নির্ভরযোগ্য ভ্যাট কাঠামো পাবেন।”

তিনি উল্লেখ করেন, “দেশের কর কাঠামোতে পূর্বানুমানযোগ্যতা না থাকা নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে, তা এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দূর হবে।”

বর্তমানে মোটরগাড়ি, থ্রি- ও ফোর-হুইলার, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, কিছু আইটি হার্ডওয়্যার 'মেড ইন বাংলাদেশ' ক্যাম্পেইনের আওতায় কর সুবিধা পাচ্ছে।

২০২১ সালে মোটরগাড়ি শিল্পে ২০ বছর, বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্সে ১০ বছর এবং কৃষিপণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইটি হার্ডওয়্যারে ১০ বছরের কর অবকাশ দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান সরকার দেশীয় সম্পদ আহরণ বাড়াতে এবং কর-জিডিপি অনুপাত উন্নত করতে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপের মুখে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব বোর্ডকে আগামী অর্থবছরে নীতিগত ব্যবস্থার মাধ্যমে ৩ বিলিয়ন টাকা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ১ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করতে হবে।

কর-ব্যয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র জাতীয় সংসদ যেকোনো ধরনের কর অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এনবিআর ব্যতীত আর কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ কর অব্যাহতির প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করতে পারবে না।

দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস প্রাপ্ত খসড়া কাঠামো অনুযায়ী, এতে আয়কর, শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বিভাগ একত্রে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জমির মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্রেতারা আগামী পাঁচ বছর ১৫ শতাংশ হারে ক্যাপিটাল গেইন কর দিতে পারবেন। এরপর তা নিয়মিত কর হার অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পরও প্রথম স্তরের ব্যক্তিগত করদাতাদের করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।

বর্তমানে বার্ষিক ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টাকা আয়ের ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী এই সীমা কমিয়ে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টাকা করা হবে।

২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কর ছাড়ের সুযোগও পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। 

doulotakter11@gmail.com

Share this news