Bangla
2 years ago

নারীদের ফ্যাশন নয়, হিল জুতার প্রচলন হয়েছিল পুরুষদের জন্য

অভিজাত পুরুষরা পরতেন এরকম হাই হিল জুতা
অভিজাত পুরুষরা পরতেন এরকম হাই হিল জুতা

Published :

Updated :

নারীরা হিল জুতা পরতে ভালোবাসে তাই তো মেরিলিন মনরো একবার বলেছিলেন, "আমি জানি না উঁচু হিলের জুতা কে উদ্ভাবন করেছেন, তবে নারী জাতি তার কাছে কৃতজ্ঞ"   

পেনসিল হিল হোক বা ফ্ল্যাট হিল, এর গুরুত্ব ফ্যাশনপ্রিয় নারীদের কাছে অনেক উচ্চতা বাড়িয়ে তোলা এই হাই হিলের চাহিদা সবসময়ই তুঙ্গে থাকে এবং নারীদের বিশেষ নজর থাকে এর দিকে ফ্যাশন দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই জুতা

তবে যা জেনে অবাক হবেন তা হলো হাই হিল জুতা প্রথম পুরুষদের জন্যই ডিজাইন করা হয়েছিল পুরুষরা যুদ্ধের ময়দানে এই হিল জুতা পরতেন যুদ্ধের ময়দান থেকে সেই হাই হিল কীভাবে এলো ফ্যাশনের রঙিন ভুবনে?

ধারণা করা হয়, হাই হিল প্রচলনের গল্প দশম শতকের মূলত হাই হিল জুতা ব্যবহার করতো পুরুষ সৈনিকেরা নারীরা সেটা ব্যবহার শুরু করে অনেক পরে এর ইতিহাস প্রাচীন পারস্যের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করেন গবেষকেরা 

প্রাচীন পারস্যের ঘোড়সওয়ার তিরন্দাজ সৈনিকেরা উঁচু হিল যুক্ত জুতা পরতো ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ করার সুবিধার জন্য কেননা এতে চলন্ত অবস্থায় ঘোড়ার পিঠ থেকে তির ছোড়ার সুবিধা পাওয়া যায় 

পদাতিক বা অন্যান্য বাহিনীর সৈন্যরা ধরনের জুতা ব্যবহার করতো না পরবর্তীতে ১২ শতকে হাই হিলের মতো জুতা দেখা যায় ভারতের রামাপ্পা মন্দিরের গায়ে নির্মাণ করা মূর্তিতে ফলে ধারণা করা যায়, শুধু পারস্যেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই হাই হিলের মতো জুতার অস্তিত্ব ছিল 

মধ্যযুগে ইউরোপের নারী পুরুষ উভয়েই প্ল্যাটফর্ম শু ব্যবহার করতো মূলত রাস্তার ময়লা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য

তবে টরেন্টোর বাটা জুতা জাদুঘরের এলিজাবেথ সেমেলহ্যাকের দেওয়া তথ্যমতে, ঘোড়ার পিঠে বসে স্যাডলে পা রাখার সুবিধার কথা মাথায় রেখেই হাই হিলের প্রচলন শুরু হয় ( কারণে উত্তর আমেরিকার কাউবয়েরা এখনো উঁচু জুতাই পরেন) তবে, সময়ের সাথে ইউরোপের অভিজাত পুরুষদের ফ্যাশন সামগ্রীতে পরিণত হয় এই জুতা

ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই ছিলেন হাই হিল পরার ব্যাপারে সবার চেয়ে বিখ্যাত মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এই শাসক নিজের উচ্চতা বাড়াতে কমপক্ষে চার ইঞ্চি উচ্চতার হাই হিল পরতেন

চতুর্দশ লুই ১৬৭০ সালের দিকে নিয়ম করে দেন, শুধুমাত্র তার রাজসভার সদস্যরা লাল রঙের হিল পরতে পারবেন ফলে কারও পায়ের দিকে তাকালেই বোঝা যেত তিনি রাজার প্রিয়পাত্র কি না

কিন্তু, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই ধারণা বদলাতে শুরু করে তখন উঁচু জুতাকে কিছুটা দুর্বল লোকদের ব্যবহার্য জিনিস বলে মনে করা হতো একপর্যায়ে হাই হিলের গায়ে লেগে যায়মেয়েদের জুতাতকমা

১৭৪০ সালের দিকে পুরুষের হাই হিল পরার চল উঠে যায় ফরাসি বিপ্লবের পরে হাই হিলের চল নারীদের মধ্যে থেকেও উঠে যায় ১৯ শতকের মাঝামাঝি দিকে এসে ফটোগ্রাফির ট্রেন্ড শুরু হলে আবারো হাই হিল নারীদের মাঝে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ওই সময় হাই হিল বেশ ভারী পুরু ছিল 

জুতারহিল’ (উঁচু অংশ) শ্যাঙ্ক (জুতার নিম্নাংশ) তৈরিতে ধাতুর ব্যবহার শুরু হয় এতে বেশ শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে হাই হিল কিন্তু, প্রস্তুতকারকরা তখনো হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন, কীভাবে জুতাকে একইসঙ্গে উঁচু আরামদায়ক করে তোলা যায়

সেসময় এগিয়ে আসেন পা-গোড়ালির সার্জন থেকে জুতার ডিজাইনার বনে যাওয়া জোয়ান ওলোফ হাই হিল পরে হাঁটার সময় পায়ের ব্যাথা দূর করতে প্রথমবারের মতো এতে ফোম ব্যবহার করে দেখান তিনি

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হিল পরার অভ্যাস চালু আছে নারীদের মাঝে এখন ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে লক্ষ টাকার হিল বাজারে পাওয়া যায়. এমনকি সমকামি পুরুষদেরও মাঝে মাঝে হিল পরতে দেখা যায় 

যদিও এখন আর সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে পুরুষেরা হাই হিল পরেন না কিন্তু হাই হিলকে মেয়েদের বৈশিষ্ট্য বলার আগে এর ইতিহাস অবশ্যই মনে রাখতে হবে

মো. সাজ্জাদ হোসেন বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

sajjadhossain016016@gmail.com

Share this news