Bangla
4 months ago

সকালে নাস্তা না করলে শরীরের যেসব ক্ষতি হতে পারে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

Published :

Updated :

সকালবেলা মানেই আরেকটি ব্যস্ততম দিনের সূচনা। ঘড়ির কাঁটা যতই এগুতে থাকে, মানুষের যান্ত্রিক জীবনে পুনর্গমনের যাত্রা যেন ততোই বেগবান হতে থাকে। কারণ, একটু দেরী করলেই সময়ানুবর্তিতার রীতি ভেঙ্গে দেরিতে পৌঁছাতে হবে অফিস কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

কঠোরভাবে সময়ের মূল্য চুকাতে গিয়ে অনেকেই সকালের নাস্তা খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলেন। অনেকে তো আবার সারারাত ইন্টারনেটে কাটিয়ে ভোররাতে ঘুমাতে যান।

তবে আপনি জানলে অবাক হবেন, সকালে খালি পেটে কাজে যোগদানের অভ্যাস আমাদের শরীরে নানা ধরনের রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। এতে করে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক জটিলতাও দেখা যায় অনেকের মাঝে। চলুন জেনে নেয়া যাক সকালের নাস্তা না খেলে আমাদের শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে সেই সম্পর্কে।

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে

আপনি যদি নিয়মিতভাবে সকালের নাস্তা বাদ দেন তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সকালের নাস্তা আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে। অথচ কাজের অজুহাত দিয়ে যদি আপনি এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যান তাহলে হৃদযন্ত্রের নানাবিধ জটিলতায় পড়তে হতে পারে আপনাকে।

মাইগ্রেনের সমস্যা

দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগেন। অনেকের ক্ষেত্রে এটি কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বিভিন্ন কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা হরে পারে যার একটি হলো সময়মতো ব্রেকফাস্ট না করা। কারণ এর ফলে আপনার শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয় যা মাইগ্রেনের সমস্যার জন্য বহুলাংশে দায়ী।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

বর্তমানে যেই রোগটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে তা হলো ডায়াবেটিস। একসময় মনে করা হতো এই রোগটি কেবল বয়স্কদের ক্ষেত্রে হয়। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যে কোনো বয়সেই মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়তে পারে।

সকালে নাস্তা না করা যদি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে মনে রাখবেন আপনিও কিন্তু ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে আছেন। কারণ সময়মত ব্রেকফাস্ট না করলে শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

চুল পড়া

চুল পড়ার সমস্যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কিংবা সঠিক খাবার গ্রহণের তারতম্যের কারণে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। সকালের ব্রেকফাস্ট দেহে কাজের শক্তি জুগিয়ে দেহকে কর্মতৎপর রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়া দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে সকালের নাস্তা। অথচ আপনি যদি এই বিষটিকে অবহেলা করেন তাহলে দেহে প্রোটিনের অভাব দেখা দিতে পারে যা কেরাটিনের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আর কেরাটিনের মাত্রা কমে গেলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায় এবং চুল পড়া শুরু হয়।

পাকস্থলিজনিত সমস্যা

রাতের খাবারের পর দীর্ঘ সময় আমরা অভুক্ত থাকি। রাতের বেলা দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার ফলে বিপাকক্রিয়া কমতে শুরু করে। অন্যদিকে সকালের নাস্তা আপনার দেহযন্ত্রেকে পুনরায় ক্রিয়াশীল করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

কিন্তু আপনি যদি নিয়মিতভাবে সকালের নাস্তা বাদ দেন তাহলের পাকস্থলির স্বাভাবিক কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটবে। আর মনে রাখবেন পাকস্থলির যে কোনো সমস্যা আপনার পুরো শরীরের উপরই প্রভাব ফেলবে।

শরীরে ক্লান্তিভাব

খাদ্য শুধু আপনার দেহ নয়, মনের উপরও প্রভাব ফেলে। সকালে ভালো একটি ব্রেকফাস্ট শুধু শরীরে শক্তিই জোগায় না, পাশাপাশি মনকে চাঙ্গা রাখতেও ভূমিকা রাখে। গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত ব্রেকফাস্ট না করলে শরীরে ক্লান্তিভাবের পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিও হ্রাস পায়। কারণ এতে করে আপনার দেহে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হবে যা আপনার শরীর ও মন উভয়ের উপরই প্রভাব ফেলবে।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, সকালের নাস্তা আমাদের জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে একইসাথে আরো একটি প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। আর তা হলো কেমন হওয়া উচিত আমাদের সকালের খাবার?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালের নাস্তায় আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণের উপর জোর দিতে হবে। কারণ এটি দেহের ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে।

সকালে ব্রেকফাস্ট হিসেবে রুটি কিংবা টোস্টের সাথে শাকসবজি কিংবা ডিমের অমলেট খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া কম চর্বিযুক্ত দইও রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়।

এছাড়া সকালের নাস্তার তালিকায় ফলও রাখা যেতে পারে। কারণ এটি দেহকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। তবে ভাজা-পোড়া, দুধ চা কিংবা প্রসেসড ফুড সকালের নাস্তায় পরিহার করা উত্তম।

tanjimhasan001@gmail.com

Share this news