Bangla
2 years ago

আসক্তির নাম যখন ‘অনলাইন শপিং’

ছবি: শপিং এডিকশন ডট কম
ছবি: শপিং এডিকশন ডট কম

Published :

Updated :

ছুটির দিনের অলস বিকেল। ফেসবুক স্ক্রল করছিলেন দিয়া। একটি শপিং ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন ভেসে উঠল তার নিউজফিডে। সুন্দর কারুকাজ করা একটি হ্যান্ডব্যাগে চোখ আটকে গেল তার। যদিও আপাতত তার কোনো নতুন ব্যাগের প্রয়োজন নেই, তবু ওয়েবসাইটটিতে ১৫ শতাংশ ছাড় চলছে দেখে দ্বিধায় পড়ে গেলেন। একটি অফারও চলছে সেখানে। সর্বনিম্ন এক হাজার টাকার কেনাকাটা করলে ডেলিভারি ফি দিতে হবে না।

একটু নড়েচড়ে বসে ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে শুরু করলেন দিয়া। প্রায় একঘণ্টা ঘোরাঘুরির পর দেখা গেল, তিনি মোট দু’ হাজার পাঁচশো টাকার পণ্যের অর্ডার দিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য সে রাতেই পরে তার মনে হলো, এই মুহূর্তে এতগুলো বাজে খরচার কোনো মানেই ছিল না।

এই চরিত্র ও ঘটনাটি কাল্পনিক হলেও খুব একটা অপরিচিত নয়। ডিজিটাল যুগে আমাদের ফোনের পর্দাগুলোই যখন হয়ে উঠছে একেকটি মেগা শপিং মল, তখন মূল্যছাড় আর লোভনীয় সব অফারের ডামাডোলে অনেকটা সময় অনেকেই এমন কাজ করে বসেন। একটা সময় তা অভ্যাসে দাঁড়ায়, জন্ম নেয় অদ্ভুত আসক্তি। এমনিতে কেনাকাটার আসক্তি থেকে ‘শপাহোলিক’ শব্দটির আগমন ঘটে। সেক্ষেত্রে অনলাইন শপিংয়ে আসক্তদের অনলাইন শপাহোলিক বলাই যায়।

কেন এই আসক্তি?

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুথ এংস মনে করেন, কেনাকাটা করার সময় ব্যক্তির মস্তিষ্ক যা অনুভব করে, সেই অনুভূতির সাথে তিনি দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এবং এরপর থেকে কেনাকাটার সময় মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন ও ডোপামিন নিঃসরিত হয় এবং সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতিগুলো আসক্তিতে রূপ নেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের ঘনঘটাও এ আসক্তি গড়ে তুলতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। একই ধরনের পণ্য বারবার নিউজফিডে আসা, বুস্ট ও স্পনসরশিপের কারণে বিভিন্ন শপিং পেইজ চোখে পড়া, এসব পেইজ বা গ্রুপে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যকে আমন্ত্রণ জানালে বিশেষ মূল্যছাড়ের অফার ইত্যাদি কৌশলের কারণে ব্যক্তি যেন সারাক্ষণই বিজ্ঞাপনের চক্রে ঘুরপাক খেতে থাকেন। এসব বিজ্ঞাপন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ - দুইভাবেই আসে। পরোক্ষ বিজ্ঞাপনের মধ্যে থাকে বিভিন্ন কনটেন্টের মধ্যে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের বিষয়টি। হয়তো ব্যক্তি তার পছন্দের তারকার প্রোফাইলটিতে ঢুঁ মারছেন, সেখানেও কোনো না কোনো পণ্য সম্পর্কে প্রশংসাবাক্য শুনে আসছেন। এছাড়া, করোনাকালে বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকার কারণেও এ আসক্তির জন্ম হতে পারে।

সমাধান কী?

জীবনযাত্রায় অতিরিক্ত মাত্রায় অনলাইন শপিংয়ের বাজে প্রভাব আছে ঠিকই, তবে এর মানে এই নয় যে প্রয়োজনীয় পণ্যটিও অনলাইনে কিনলে ব্যক্তিকে আসক্তির শিকার ধরে নেয়া যাবে। আদতে প্রতিটি সুবিধা কখন আসক্তিতে রূপ নেয়, তা অনেকটা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব পরিমিতিবোধের উপরও। এক্ষেত্রে কিছুটা মেনে চললে, কিছু বিষয় মেপে চললে এ ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

অনেকসময় প্রয়োজন থেকে ব্যক্তি পণ্যের কাছে না গিয়ে পণ্যই বরং নতুন নতুন প্রয়োজন গড়ে তোলে। সেসব প্রয়োজন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী হয়। অনলাইনে শপিংয়ের ক্ষেত্রে চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আবেগবশত পণ্য অর্ডার করা যাবে না। প্রয়োজনের পাশাপাশি অন্যের জন্য উপহার বা নিজের শখের জিনিস অবশ্যই কেনা হবে, কিন্তু বেশ কিছুদিন ভেবেচিন্তে কিনতে হবে। এছাড়া মন ভালো করতে অতিরিক্ত খাওয়া বা অতিরিক্ত কেনাকাটার চর্চা মোটেও সুস্থ নয়। এ থেকে যথাসম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে।

অনিন্দিতা চৌধুরী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

[email protected]

Share this news