Bangla
2 years ago

কেন শোনা গান বারবার কানে বাজে

ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

Published :

Updated :

খুব দরকারি কাজে ব্যস্ত, কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝে যেই সময়টা একটু একা, তখন মস্তিস্ক শুনিয়ে যাচ্ছে গান, কিংবা কাজের মাঝে নিজেরই গান গুনগুন করা হচ্ছে। আবার পরীক্ষার হলে উত্তর মনে আছে না, কিন্তু কানে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বেজে চলছে গান। 

এরকম পরিস্থিতি কারো কাছে খুব একটা উপভোগ্য নয়, বরং বিরক্তির উদ্রেক করে অনেকাংশেই। মাথা থেকে বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়। এমনটা যদি কারো সাথে ঘটে থাকে, তাহলে ধরে নেয়া যায় তিনি ইয়ার ওয়ার্ম বা কানের পোকার দ্বারা আক্রান্ত। 

ভয়ের কিছু নেই। এটা সত্যি সত্যি কোনো পোকা নয়। মনস্তাত্বিকদের কাছে এই সমস্যাটি 'স্টাক সং সিনড্রোম' বলে পরিচিত। আবার অনেকে একে বলে থাকেন মস্তিষ্কের চুলকানি। সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সপ্তাহের কোনো না কোনো একটা সময় এই অনুভূতিটা পেয়ে থাকেন। আর এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের তো রোজই কানে বেজে যায় গান এবং তাদের অভিজ্ঞতায় এটি খুবই বিরক্তিকর। আর যারা গান শোনেন বা গান করেন তাদের তো কথাই নেই, এমনটা যেন তাদের সাথে হরহামেশাই হয়ে যাচ্ছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, ভালো গান কিংবা বাজে গান দুটোই সমান ভাবে ইয়ার ওয়ার্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। আর কানে সাধারণত পুরো গানটা না বেজে গানের একটি বিশেষ অংশ অনবরত বাজতে থাকে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটা হচ্ছে? যখন গান শোনা হয়, তখন মস্তিষ্কের অডিটরি কর্টেক্স অঞ্চল উদ্দীপিত হয়। ফলে গানটির স্মৃতি ধরে রাখে। গানগুলি মস্তিষ্কে সুরের রূপকল্প তৈরি করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ডার্থমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের গবেষণায় এমনই ফল পেয়েছেন। তারা কিছু লোককে তাদের পূর্বের শোনা একটা গান শুনিয়ে মাঝপথে সেই রেকর্ডিং বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই লোকগুলি ঠিকই সেই গান বারবার বাজতে শুনেছেন তাদের মাথায়। 

তবে সবধরনের গান মস্তিষ্ক এভাবে ধরে রাখে না। শুধু সেইসব গান যাতে আছে উচ্চ কম্পাঙ্কের স্বর, সুর অনেক খানি সহজ সরল এবং তাল লয়ের ওঠানামার একটি নির্দিষ্ট ধারা। অর্থাৎ যেই গানের সুর – তাল - লয় একটি বৃত্তে বাঁধা পড়ে থাকে। মস্তিষ্কের এধরনের গান খুব আকর্ষণীয় লাগে। এখন এই গান সাধারণ নার্সারির ছড়া গুলি থেকে দুনিয়া মাতানো কোনো পপ আবার বারবার শোনা কোনো পুরোনো বা ক্লাসিকাল গান হতে পারে।  

এই ধরনের গানের বাইরে আরো কিছু গান মাথায় গেঁথে থাকতে পারে যার সুর গুলি শ্রোতা শুনে বুঝতে পারে না যে এর পরে ঠিক কি হবে অর্থাৎ তার ভেতর একটা এন্টিসিপেশন কাজ করে।  কোনো একটা গান পুরোটা শোনা হয়ে গেলে সেই গানটি সাধারণত আর বাজে না। যেমন কোনো কাজ করা শেষ হয়ে গেলে সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামানো হয় না। 

যেসব জনপ্রিয় গানে মস্তিষ্কে হতে পারে গানের চুলকনি -

যারা গান প্রেমী তাদের কাছে নতুন বের হওয়া যেকোনো গান হয়ে উঠতে পারে কানের পোকা। ভয়ানক আকর্ষণ সৃষ্টিকারী গানগুলি সবসময়ই এই তালিকার শীর্ষে। যেমন লেডি গাগার ব্যাড রোমান্স কিংবা কেটি পেরির ক্যালিফোর্নিয়া গার্লস । হালের অরিজিৎ সিং বা শ্রেয়া ঘোষাল এদের কাছে কম যান না কিছুইতেই, আমাদের কানে অনবরত বাজিয়ে যান তাদের সংগীতের মোহনীয় মূর্ছনা। এছাড়া সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের জাদুকরী সুরের জাল তো আছেই।

কানের পোকা তাড়াতে যা করা যেতে পারে -

কানে গান বাজা থামাতে শোনা যেতে পারে নতুন কোনো গান। কিন্তু আবার যেমন তেমন গান বাছলে পুরোনোটা ভুলে আবার নতুন গান মাথায় আসর জমাবার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই ক্ষেত্রে শুনতে হবে কিউর টিউনস বা নিরাময়ক সুর। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজে দেয় যার যার দেশের জাতীয় সংগীত। এই উপায়টা পছন্দ না হলে ইউটিউবে কিউর টিউন লিখে একটু সন্ধান করলেই প্লে লিস্টে চলে আসবে পোকা তাড়াতে রকমারি গান।

করা যেতে পারে এমন কিছু কাজ যা মস্তিষ্ককে খানিকটা সময় ব্যস্ত রাখবে। যেমন: সুডোকু, একই শব্দের অক্ষর পাল্টে দিয়ে এনাগ্রাম অথবা পড়া যেতে পারে কোনো উপন্যাস। 

চুইংগাম চিবানো কিন্তু বেশ কাজের এই ক্ষেত্রে। কারণ চুইংগাম চিবানোর সময় চোয়ালের পেশিগুলি কার্যকর হয়ে ওঠে, তখন মস্তিষ্কের উপর আলাদা চাপ পড়ে, তাই সে তখন চিবানোতে মনোযোগ দেয়। 

কানের পোকা পরাণ বাঁচায় - 

কানের পোকারা নিছকই খারাপ নয়। এদের আছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর অবাক করা গল্প।

 পেরুর আন্দিজের এক পর্বতারোহী ছিল জো সিম্পসন। পাহাড়ীপথের দুর্যোগে তার সঙ্গীরা মারা যান আর তিনি  হিমশীতল বৈরী পরিস্থিতিতে আটকে পড়ে থাকেন। কিন্তু সেই সময়ে হঠাৎ করে তার কানে বাজতে থাকে জার্মান ব্যান্ড বনি এমের ব্রাউন গার্ল ইন রিং। গানটি তার কাছে বরাবরই বিরক্তিকর ছিল। কিন্তু এটিই তাকে সে সময় জ্ঞান হারানো থেকে বাঁচাচ্ছিল। খুব বিস্ময়কর আমাদের মস্তিষ্ক কতো কতো গানই ধরে রাখে, আবার সময়ে সময়ে তা আবার জাগরুক হয় !

তবে যদি সবসময়ই কানে গান বেজে যেতে থাকে এবং যেখানে সেখানেই গান শুনতে পান, তাহলে বিষয়টি মোটেই স্বাভাবিক নয়।এটি এন্ডোমিউজিয়া নামে একটি রোগের লক্ষণ। এমন কারো হলে তার অতিসত্ত্বর মানসিক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 


সুস্মিতা রায় বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৪র্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

[email protected]

Share this news