Bangla
2 years ago

পরিচালকের নামেই যখন সিনেমার ধরন কল্পনা করা যায়

Published :

Updated :

চলচ্চিত্র পরিচালকদের ছাপ তাদের সৃষ্টিতে ফুটে ওঠে। বিভিন্ন গল্পের চলচ্চিত্র হলেও সাক্ষর রেখে যান তার কাজের।

সিনেমা জগতে এমনই কয়েকজন কিংবদন্তি পরিচালক রয়েছেন যাদের চলচ্চিত্র মানেই বিশেষ একটি ধরন, গল্প বলার বিশেষ ভঙ্গিমার কথা মনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই কিংবদন্তিরা কারা?

ভয়, রহস্য আর আলফ্রেড হিচকক:

আলফ্রেড হিচকককে থ্রিলার ধারার সিনেমার জনক বলা হয়। তিনি এই ধারায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তার সিনেমাগুলোর বিভিন্ন শট ও দৃশ্য দেখলেই কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। যেমন - মানুষের ভীতি।

হিচকক তার সিনেমায় ভয় পাওয়ার দৃশ্যগুলোতে নিজের বিশেষত্বের ছাপ রেখেছেন। ১৯৩৬ সালে নির্মিত স্যাবোটাশ সিনেমায় ভীতি ও আকস্মিকতার ভাবটি তুলে ধরেছেন ছুরির মাধ্যমে।

১৯৫৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ভার্টিগো সিনেমাতেও আমরা ভয় পাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাই। এরই ধারাবাহিকতা আমরা ১৯৬০ সালের সাইকো সিনেমাতেও পাই।

এছাড়াও সিঁড়ি ও উচ্চতার দৃশ্য গুলোর স্বার্থক ব্যবহার করেছেন হিচকক। তার ক্যারিয়ার শুরুর দিকে ১৯২৭ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রদ্য লুজার: আ স্টোরি অফ দ্য লন্ডন ডগচলচ্চিত্রে তিনি উঁচু থেকে ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়া সিঁড়ির দৃশ্য দেখিয়েছেন। প্রায় একই ভাবে ভার্টিগোতে উচ্চতা-ভীতি প্রদর্শনের জন্য তিনি এরূপ পন্থা ব্যবহার করেছেন।

তাই থ্রিলারের সাথে হিচকক তার অস্তিত্ব ছায়ার মতোই চলচ্চিত্র জগতে রেখে গেছেন।

বই, শহরের রাস্তা, ফুলের দোকান, আড্ডা‌ এবং উডি অ্যালেন:

প্যারিসের চওড়া রাস্তা যার কিনার ধরে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে ল্যামপোস্ট। দুইজন হেঁটে হেঁটে কথা বলছে। ল্যামপোস্টের আলোয় তাদের ছায়া, পাশে নদী। দৃশ্যটি ২০১১ তে মুক্তি প্রাপ্তমিডনাইট ইন প্যারিস সিনেমার।

মিডনাইট ইন প্যারিস ছাড়াও আরো বিভিন্ন চলচ্চিত্রে উডি অ্যালেন শহরের সৌন্দর্য চওড়া রাস্তা, বই ও ফুলের দোকান ও মানুষের আড্ডার  মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছেন। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল শটে গোটা শহরকে ফ্রেমে বন্দী করে বেদনাকেও আনন্দময় করে তোলেন তিনি। এটাই উডি অ্যালেনের সিনেমেটিক পরিচিতি। 

ওয়েস এন্ডারসনের রঙের বাক্স:

হিচককের সাদা কালো থ্রিলার জগত থেকে বেড়িয়ে ওয়েস এন্ডারসনের সিনেমা জগতে প্রবেশ করলে আপনার যদি মনে হয় যে আপনি ডিজনি ল্যান্ডে চলে এসেছেন তাহলে ভুল হবে না।

ওয়েস এন্ডারসনের চলচ্চিত্র মানেই গল্পের মোড়কে দর্শকদের আনন্দ উপহার দেয়া। আর এই মোড়কে থাকে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। গল্প, স্থান ও সময় ভেদে রঙের প্লেট ভিন্ন হয় তবে গাঢ়ত্ব থাকে একই।

২০০৭ সালের দ্য দার্জিলিং লিমিটেডে হলুদ, কমলা, সবুজ ওনীল রঙের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারণ সিনেমার স্থান ছিল ভারত। ভারতের রেল স্টেশন, ট্রেন, মরুভূমি‌, হোটেল ছিলএর মূল আকর্ষণ। তাই রঙের মধ্যে হলুদ, কমলা, সোনালী রঙেরপ্রভাব দেখা যায়।

আবার শীতকালীন রাষ্ট্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের প্রেক্ষাপটে নির্মিত দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেলে (২০১৪) আমরা গোলাপী ও হালকা নীল রঙের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করি।

সিনেমায় হোটেলের রঙ দেখে মনে হবে যেন ভ্যানিলা-স্ট্রোবেরি কেক।

রায়-সঙ্গীত:

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার বৈশিষ্ট্য হলো তার উন্নত সঙ্গীত চেতনা। পিয়ানো, ভায়োলিন সম্বলিত ইউরোপীয় ধাঁচের সঙ্গীত হোক কিংবা ঢোল, তবলা ও সেতারসহ শুদ্ধ ধ্রুপদী, উভয় ক্ষেত্রেই তিনি পান্ডিত্ব দেখিয়েছেন। ধ্রুপদী সঙ্গীতের নক্ষত্র পন্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ বিলায়েত খাঁ, আলী আকবর খাঁ ও বেগম আখতারকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেনসুরের মূর্ছনা।

জলসা ঘর (১৯৫৮) সিনেমায় ঘরের বাতি ক্রমশ নিভে যাওয়ার দৃশ্যে সত্যজিৎ রায় সেতার বাদক ওস্তাদ বিলায়াত খাঁয়ের সঙ্গীতের সাথে ফিনল্যান্ডের সঙ্গীতজ্ঞ জিন সিবেলিয়াসের টিউনটি মূল সুরের বিপরীতে বাজিয়ে ছিলেন।

দেবী (১৯৬০) এর পর তিন কন্যা (১৯৬১) সিনেমা থেকে তিনি নিজেই সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। যার মধ্যে চারুলতা (১৯৬৪), নায়ক (১৯৬৬), গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯), সতরঞ্জ কে খিলাড়ি (১৯৭৭) ও হীরক রাজার দেশে (১৯৮০) অন্যতম।

সিনেমায় পরিচালকদের বিশেষত্ব তাদের কালোত্তীর্ণ করে তোলে। যার প্রভাবে ইংল্যান্ড থেকে বহুদূরে তামিল কিংবা হিন্দি থ্রিলার সিনেমাতে আলফ্রেড হিচকককে স্মরণ করা হয়। অনুরাগ বসুরা অনুপ্রাণিত হয় ওয়েস এন্ডারসনের দ্বারা এবং ওয়েস এন্ডারসন অনুপ্রাণিত হন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গীত দ্বারা যার ঝলক আমরা দেখি এন্ডারসনের দার্জিলিং লিমিটেডে।

[email protected]

Share this news