Bangla
2 years ago

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

‘বহিরাগতদের’ নিয়ে উদ্বেগ তৈমূরের, নৌকার ‘সুনিশ্চিত বিজয়’ দেখছেন আইভী

তৈমূর আলম খন্দকার ও সেলিনা হায়াৎ আইভী
তৈমূর আলম খন্দকার ও সেলিনা হায়াৎ আইভী

Published :

Updated :

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট প্রভাবিত করতে বাইরের জেলা থেকে ‘সরকারি দলের লোকজনকে’ নারায়ণগঞ্জে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এই সিটি করপোরেশনের স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।

অপরদিকে, এ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নৌকাকে ঠেকানোর কেউ নেই, বিজয় সুনিশ্চিত।

নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন শুক্রবার ঢাকার লাগোয়া এই সিটি করপোরেশনের প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী এসব কথা বলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রেলগেইট এলাকার বঙ্গবন্ধু সড়কে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আইভী বলেন, “দুষিত, কলঙ্কিত নারায়ণগঞ্জ সিটিতে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে আমি এসেছি। টানা দশ বছর ধরে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আপনারা আমাকে চেনেন। ২০১১ সালে আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, ২০১৬ সালেও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন।”

“আবারও অন্যায়, অবিচার, খুনি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা নিয়ে লড়তে এসেছি। আমাকে কেউ ফিরিয়ে দেবেন না। নৌকাকে ঠেকানোর কেউ নেই।”

আওয়ামী লীগের এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, “আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। জীবন বাজি রেখে পরিবার ছেড়ে আপনাদের জন্য কাজ করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করতে এসেছি। আমার বিশ্বাস, আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।”

আইভি বলেন, ত্বকী ও চঞ্চল হত্যাকাণ্ডসহ নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার বিচারের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন।

“ঘর সংসারের দিকে তাকাই নাই, এসেছি আপনাদের সেবা করতে, নিশ্চয়ই আমাকে আপনারা বিমুখ করবেন না। আমার বাবার মতো আপনাদের খেদমত করার সুযোগ দিন আমাকে।”

“এই শহরের মাটি ও মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকাও এই শহরের মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।”

সবাইকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে আইভী বলেন, “নিশ্চই আপনারা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। পরিবেশবান্ধব, নারী-শিশুবান্ধব নগরী, সন্ত্রাস মুক্ত নগরীতে নৌকার ১৬ তারিখে বিজয় সুনিশ্চত।”

অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার শুক্রবার শহরের মিশনপাড়া এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া এই প্রার্থী প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনের দিন যাতে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে, বিভিন্ন জেলা থেকে যে লোকজন আনা হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, তারা যেন নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যায়- এ ব্যাপারে আপনারা একটি নির্দেশনা জারি করুন।“

তৈমূর দাবি করেন, “নারায়ণগঞ্জের হোটেলগুলোতে বিভিন্ন জেলার সরকারি দলের লোকজনদের এনে রাখা হয়েছে। সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলোকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

“আইন অনুযায়ী, সরকার গাড়ি ও সরকারি ডাকবাংলো ব্যবহার করার বিধান নেই। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন। তারপরও এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই সরকারি দলের উচ্চপর্যায়ের মেহমানরা আমাদের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উঠেপড়ে লেগেছেন।”

নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের উৎসবমুখর পরিবেশে, সুষ্ঠু ভোটে নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগ দিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আগামী রোববারের ভোটে তৈমুরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী টানা দুই বারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। নৌকার প্রার্থীর হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অন্যরা।

নির্বাচনী প্রচার শেষের আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যান আওয়ামী লীগের নেতারা। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ও পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারা; যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তৈমুর।

যদিও বৈঠক শেষে নানক বলেছেন, “এসেছিলাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়কে এ কথাটা বলার জন্য যে, যে কোনো কিছুর বিনিময়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। এর আগেও আমরা বারবার এসেছিলাম।”

সেই বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তৈমূর বলেন, “ডিসি-এসপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে জনমনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের জনগণ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।”

তিনি বলেন, “ঢাকার মেহমান নানক তার কিছু সঙ্গী নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু তার বক্তব্য ও দেখা করতে যাওয়ার সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই। প্রথমত তিনি নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। তিনি নারায়ণগঞ্জের নাগরিকও না। এটা আমি অন্যায় মনে করি। উচ্চপর্যায়ের সম্মানিত একজন নেতার কাছ থেকে আমরা এটা প্রত্যাশা করি না।”

হাতি মার্কার প্রার্থী তৈমূর কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে, তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশি তল্লাশি ও হয়রানি করছে; মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে।

গ্রেপ্তার এড়িয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করছেন জানিয়ে তৈমূর এদিন অভিযোগ করেন, “সিদ্ধিরগঞ্জের নির্বাচনী সমন্বয়ক মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ এজেন্ট দেওয়ার কাগজপত্র ও নথি গায়েব করেছে।”

ভোটের দিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।

নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তৈমূর বলেন, ৫০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দেখে এবং গত ১৮ বছরের সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বের প্রতি মানুষের ‘ক্ষোভের কারণে’ ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন।

 

Share this news