Published :
Updated :
সরকারি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক করা হলেও, অপ্রয়োজনীয় জটিলতা এড়াতে কিছু সেবার ক্ষেত্রে এই শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে এই বাধ্যবাধকতা চালু করায় আয়কর রিটার্ন দাখিলের হার বেড়েছিল। তবে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ক্ষেত্রে এই শর্ত 'অযৌক্তিক' বিবেচনায় শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাক্স নেট সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকার এখনও পিএসআর প্রয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই কৌশল গত কয়েক বছরে ইতিবাচক ফলও এনেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যেসব সেবায় পিএসআর জমা দেওয়া ছিল যুক্তিহীন, সেসব ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া সহজ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, “কিছু সেবার জন্য পিএসআর বাধ্যতামূলক করা অপ্রয়োজনীয় ছিল। তবে সামগ্রিকভাবে এই নিয়ম করের আওতা বাড়ানো এবং কর প্রদানে অনুপ্রবৃত্তি তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
২০২৫ অর্থবছরের নতুন অর্থ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে ১২টি সেবার ক্ষেত্রে পিএসআর জমা না দিয়ে শুধু সিস্টেম-জেনারেটেড ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) সার্টিফিকেট জমা দিলেই হবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স, সমবায় সমিতি নিবন্ধন, সাধারণ বীমা সার্ভেয়ার লাইসেন্সের জন্য পিএসআর জমা লাগবে না।
তদ্রূপ, ক্রেডিট কার্ড, ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্স, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ (ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি ও সার্ভেয়ারদের সংগঠন) গ্রহণেও শুধুমাত্র টিআইএন সার্টিফিকেট দিলেই চলবে।
এছাড়া, ডাকঘর সঞ্চয় হিসাব খুলতে (যার পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি), এমপিওভুক্ত পদে গ্রেড-১০ এবং তার ওপরে সরকারি অর্থ গ্রহণে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ফান্ড ট্রান্সফার ও মোবাইল রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা আয় অর্জনকারীদের ক্ষেত্রেও এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
পিএসআর ছাড়াই যেসব সেবা পাওয়া যাবে তার মধ্যে রয়েছে:
স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপার বিক্রেতা বা ডিড-রাইটার নিবন্ধন ও লাইসেনন্স, থ্রি-হুইলার রেজিস্ট্রেশন, মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস সনদ নবায়ন, ই-কমার্স লাইসেন্স গ্রহণ এবং কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন/অবতারণা।
এর আগে ৪৫টি সেবার জন্য পিএসআর বাধ্যতামূলক ছিল। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে তা কমে ৩৯টিতে নামলো।
বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত টিআইএন ধারকের সংখ্যা ১ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার। তবে, এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন মাত্র ৪৬ লাখ ব্যক্তি। অর্থাৎ প্রায় ৭৩ লাখ টিআইএনধারী এখনও রিটার্ন দাখিল করেননি।
তুলনামূলকভাবে, ২০২১-২২ করবর্ষে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ লাখ। ফলে, পিএসআর বাধ্যবাধকতার মতো নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আয়কর রিটার্ন দাখিলের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
newsmanjasi@gmail.com