Bangla
6 months ago

আইলুরোফোবিয়া: বিড়ালেই যখন ভয়

প্রতীকী ছবি, কেউ কেউ ভয় পান বিড়ালকেও
প্রতীকী ছবি, কেউ কেউ ভয় পান বিড়ালকেও Photo : পিন্টারেস্ট 

Published :

Updated :

বিড়াল আমাদের অনেকের কাছেই খুব আদুরে একটি প্রাণী। তাদের মায়াবী মুখ আর চোখ দেখে অনেকেই মায়ায় পড়ে যান। রাস্তাঘাটে দেখলে তাদের আদরও করে দেন। কিন্তু সবাই যে তা করতে পারেন-তা নয়। বিড়াল দেখলে ভয় পান কিংবা আঁতকে উঠেন এমন মানুষও আছেন। বিড়াল দেখলেই তারা পেয়ে যান প্রচণ্ড ভয়। ছুটে চলে যান সেখান থেকে। করতে পারেন চিৎকারও। এ ধরনের বিড়ালভীতিকেই বলা হয় 'আইলুরোফোবিয়া।' 

শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে। গ্রিক ভাষায় আইলুরোস অর্থ বিড়াল, আর ফোবোস অর্থ ভয়। কোনো কারণ ছাড়াই  দেখামাত্র বিড়ালকে ভয় পাওয়াকেই বলা হয় আইলুরোফোবিয়া। এটি ফেলিনোফোবিয়া, ইলুরোফোবিয়া, গ্যাটোফোবিয়া ও ক্যাট ফোবিয়া নামেও পরিচিত। যাদের এ ধরনের বিড়ালভীতি রয়েছে তাদের বলা হয় 'আইলুরোফোব।'

জুওফোবিয়া বা কোনো প্রাণীর প্রতি ভীতি কাজ করে বহু মানুষের ভেতরেই। তবে ওফিডিওফোবিয়া (সাপভীতি) কিংবা আরাকনোফোবিয়া (মাকড়সাভীতি) এর তুলনায় আইলুরোফোবিয়া অনেক কম দেখা যায়। 

যাদের এমন ভীতি আছে তারা নানাভাবে বিড়াল ভয় পান। হয়তো কোনোভাবে বিড়ালের কথা মনে এলো কিংবা রাস্তায় চলার পথে চোখে পড়লো বা পথে পড়লো কোনো বিড়াল- তাহলেই হয়েছে! ব্যক্তি প্রচণ্ড ভয় পাবেন, অস্বস্তিবোধ করবেন ও সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়তে চাইবেন।

এমনকি সোশাল মিডিয়ায় বা গুগলে বা কোনো বইপত্রে বিড়ালের ছবি থাকলেও তা দেখে আঁতকে উঠবেন এলুরোফোবিক ব্যক্তিত্ব।

এর ফলে নিত্যদিনের রাস্তায় চলাচলে যেমন তাদের অসুবিধা হয়, তেমনি কোনো বন্ধুর বাড়িতে বিড়াল থাকলে সেখানে যাওয়া থেকেও তারা বিরত থাকেন। যাদের খুব তীব্র পর্যায়ের বিড়ালভীতি আছে, তারা বিড়ালের মিঁউ মিঁউ ডাক, হিস হিস শব্দ করা কিংবা অন্য কোনো ধরনের শব্দ, যা শুনলে তাদের বিড়ালের কথা মনে হয়- এমন কিছু শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। 

এমনও দেখা গেছে যে, বিড়ালভীতি থাকা একজন মানুষ নরম, পশমের তৈরি চাদরে হাত বোলাতে পারছেন না, কারণ চাদরটি তাকে বিড়ালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। মখমলের কাপড়ে হাত দিলে তার মনে হচ্ছে, যেন তিনি কোনো বিড়ালের গায়ে হাত বোলাচ্ছেন! 

ভীতির কথা তো জানা গেলো। কিন্তু কেন হয় আইলুরোফোবিয়ো? এর নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে বেশিরভাগক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের এই ভয়ের পেছনে রয়েছে শৈশবের কোনো স্মৃতি। যেকোনো ধরনের ফোবিয়া, বিশেষত প্রাণিভীতি বা জুওফোবিয়ার ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই শৈশবের স্মৃতির এই ব্যাপারটি দেখা গেছে।

আইলুরোফোবিয়ার ক্ষেত্রে শৈশবে বিড়ালের দ্বারা কোনোভাবে আক্রমণের শিকার হওয়া কিংবা বিড়ালের কাউকে আক্রমণ করতে দেখার মতো ঘটনার ভূমিকা থাকতে পারে। কিংবা বিড়ালভীতি আছে এমন কোনো মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া কিংবা বিড়াল সম্পর্কে অযাচিত ভীতিকর তথ্য পাওয়া বা কোনো বই বা সিনেমায় বিড়ালকে ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করতে দেখার ভূমিকাও থাকতে পারে। 

এছাড়া, কেউ কেউ এমনও বলার চেষ্টা করেছেন যে, বড় বুনো বিড়ালের পূর্বপুরুষেরা যেহেতু মানুষ শিকার করতো, তাই কোনো ব্যক্তি জিনগতভাবেও বিড়ালভীতি পেয়ে থাকতে পারেন। তবে খুব অল্প মানুষকেই আইলুরোফোবিক হতে দেখা যায়। কাজেই, এই ব্যাখ্যা খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

ফোবিয়ার কারণ তো জানা গেলো। কিন্তু এই ফোবিয়া কি দূর করা সম্ভব? উত্তরে এককথায় বলা যায়-হ্যাঁ, সম্ভব। যেকোনো ধরনের জুওফোবিয়া বা প্রাণিভীতি দূর করার ক্ষেত্রে 'এক্সপোজার থেরাপি' খুব ভালো পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে ফোবিক কোনো ব্যক্তিকে ধাপে ধাপে তার ভয়ের কারণ হওয়া প্রাণীটির কাছে ক্রমশ প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে ভয় পেলে যে যে প্রতিক্রিয়া হয় বা ব্যক্তি যে উদ্দীপনায় সাড়া দেয় বা ভয়ের অনুভূতি অনুভব করে, সেটিতে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন আর এই ভীতিমূলক উদ্দীপনা জাগে না। ব্যক্তি এই উদ্দীপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ধারাবাহিকভাবে পরের ধাপগুলোয় যাওয়া হয়।

যেমন- বিড়াল ভয় পান এমন একজন নারীকে প্রথমে পশমের তৈরি চাদর দেয়া হয়। এই চাদরে হাত বুলাতে বুলাতে যখন তিনি অভ্যস্ত হয়ে যান, তখন তার ভীতি জাগানিয়া উদ্দীপনা প্রশমিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তাকে বিড়ালের ছবি দেখানো হয় ও একটি খেলনা বিড়াল দেওয়া হয়। বিড়ালের ছবি দেখতে যখন তিনি অভ্যস্ত হয়ে যান, এরপর খেলনা বিড়ালটিকে নিয়ে তিনি খেলতে থাকেন। একসময় তার ভয় কেটে যায়। তারপর তাকে খুব মায়াবী একটি বিড়ালছানা দেওয়া হয়। নারীটি বিড়ালছানাটিকে পালনের জন্য নেন। বিড়ালছানাটিকে পালন করতে ও তার সঙ্গে খেলতে খেলতে তার ভীতি আর থাকেনি। সময়ের সাথে সাথে বিড়ালটি বড় হতে থাকে। নারীটির তখন পূর্ণবয়স্ক বড় বিড়ালের প্রতি ভয়ও কেটে যায়। অবশেষে আইলুরোফোবিয়া থেকে মুক্তি পান তিনি।

mahmudnewaz939@gmail.com 

Share this news