Published :
Updated :
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে থাকায় তারল্য সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও ব্যাংকাররা।
তারা জানান, আমানত প্রবাহে এই নিম্নমুখী প্রবণতার পেছনে রয়েছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ধীরগতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কিছু ব্যাংকে আগের সরকারের সময়ে ব্যাপক ঋণ অনিয়মের ঘটনায় আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট বৃদ্ধির মতো একাধিক কারণ।
এর ফলে ব্যাংকিং খাতের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়ছে এবং ব্যাংকগুলো ক্রমেই তহবিল সংক্রান্ত দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপো সুবিধার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূণ্য ৪ শতাংশ, তবে এরপর থেকে এই হার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৫ সালের মার্চে এটি নেমে আসে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে এবং এপ্রিল মাসে হয় ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ব্যাংক খাতের জন্য উদ্বেগজনক। “সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে আমানতের বহিঃপ্রবাহ বাড়ছে, যা তারল্য সংকটকে আরও তীব্র করছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মে মাসে ব্যাংকিং খাতের বাইরে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা এপ্রিল মাসে ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদি মেয়াদী আমানতের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও সুদ হারের সঙ্গে সম্পর্কিত লাভের কারণে স্বল্পমেয়াদি চাহিদাভিত্তিক আমানতের পরিমাণ কমছে।
তিনি বলেন, তথ্যানুযায়ী আমানতকারীদের ব্যাংকিং খাতে আস্থা এখনও দুর্বল এবং নতুন আমানতের প্রবাহও কম থাকায় ব্যাংক শিল্পের জন্য একটি চলমান চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের (এফই) সঙ্গে আলাপকালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “চলমান অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে এবং প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধিও মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম।”
অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার আরও বলেন, “এর ফলে অনেকের পক্ষে নিয়মিত খরচ মিটিয়ে সঞ্চয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এটি ব্যাংকে আমানতের নিম্নপ্রবণতার অন্যতম কারণ। ”
তিনি বলেন, বিনিয়োগ খাতে স্থবিরতার মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের তহবিল সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করায় তারল্য ব্যবস্থাপনায় আরও চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, “একাধিক ব্যাংক বর্তমানে তহবিল ব্যবস্থাপনায় চরম চাপের মুখে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো-সমর্থিত ঋণ গ্রহণের ওপর ব্যাংকগুলোর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো সুবিধার আওতায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। মে মাসে এই পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, এপ্রিল মাসে ৯৪ হাজার কোটি এবং মার্চে ছিল ৮৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
jubairfe1980@gmail.com