Bangla
a year ago

‘আমি পদ্মজা’ বইটি কেন এতো আলোচনায়?

Published :

Updated :

“গত চারদিনের একাংশ যন্ত্রনা যদি তুমি অনুভব করতে, তাহলে আমাকে না মেরে বাঁচিয়ে রাখতে…! আমার শাস্তি হতো বেঁচে থাকা…!”

“যদি পারতাম আকাশের মেঘ হয়ে তোমার কাজল কালো আঁখি ছুঁয়ে সবটুকু বিষাদ ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতাম”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত কয়েক মাস ধরেই ‘আমি পদ্মজা’ বইয়ের এই উক্তিসমূহ ঘুরপাক খাচ্ছে।  

প্রতি বছরের একুশে বইমেলায় পুরনো কিংবদন্তি লেখকদের বইসমূহ মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকে। একইসাথে নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে হাজির হয় নবীন লেখকরা। উৎসবমুখর এই পরিবেশটাতে অনেকের বই সুনাম ও প্রশংসা কুড়ায়, পায় খ্যাতি। অনেকে সম্মুখীন হন নানা সমালোচনার।

এমনি লেখা দিয়ে সাড়া ফেলা নবীন লেখকদের মধ্যে এবছরের অন্যতম ইলমা বেহরোজের বই -‘আমি পদ্মজা’। বইমেলার নানা স্টল ঘুরে জানা যায়, প্রায় প্রতিটা স্টলেই বইটির খোঁজ করেছে ভক্তরা। ২৩ বছর বয়সী এই লেখিকার বই ‘রকমারি’ ওয়েবসাইটের ‘বেস্ট সেলার’ হিসেবে একাধিকবার স্বীকৃতি পেয়েছে।

শুধু মার্কেটিং প্ল্যান বইটির জনপ্রিয়তার কারণ- অনেকে এমনটা ভাবতেই পারেগ তবে অনলাইন ঘাটলে দেখা যায়, প্রকাশ হওয়ার দেড়-দুই বছর  আগেই খন্ড-খন্ড আকারে প্রকাশিত হতে থাকে এই বই। এখান থেকে ভক্ত বৃদ্ধির সূচনা - বললে মন্দ হবেনা। অনলাইনেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কমতি নেই। এই বছরের ‘ব্ল্যাক এডিশনের’ তালিকাতেও নাম লিখিয়েছে ‘আমি পদ্মজা’ ।

বইটি যেমন অনেক পাঠকের মন ছুঁয়েছে, তেমনি সমালোচনাও কুড়িয়েছে অনেকের। গল্পের মূল চরিত্র নারী তাই অনেকে খুনসুটি প্রেমের গল্প ধরে সাধারণ লেখা ভেবে নিলেও এর মধ্যে রয়েছে ক্রাইম, থ্রিলার ও সাসপেন্স। বইটি নিয়ে এ পর্যন্ত তৈরিহয়েছে নানা ফ্যান পেজ।

কেন এতো জনপ্রিয়তা?

বইটি নিয়ে পাঠকপ্রতিক্রিয়া ছিল বেশ মিশ্রিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রশংসা গল্পের জন্য হলেও, অনেকেরআবার বইটি মনে ধরেছে কিছু উক্তির জন্য। গল্পের নায়ক আমির হাওলাদার নারী পাঠকদের মন ইতোমধ্যে গভীরভাবে জয় করে ফেলেছে। বইটির লেখিকা সম্পর্কেও রয়েছে নানা গুঞ্জন। লেখিকাকে ইলমা বেহরোজকে রবীন্দ্রনাথসহ কিংবদন্তি লেখকদের সাথে তুলনা করাতেও হয়েছে সমালোচনা। প্রয়াত হুমায়ন আহমদের পর আর তেমন কোন লেখক বইয়ের দিকে নবীন বইভক্তের ঝুঁকি  তৈরী করতে পারেনি। গল্প কিংবা লেখিকার জনপ্রিয়তা, যে কারনেই হোক, এই ইন্টারনেট যুগে বইয়ের দিকে নবীন পাঠকদের মুখ ফেরানোর একটা কারন হিসেবে হলেও বইটি প্রশংসনীয় বলা চলে।

অল্প কথায় কাহিনী

৮০র দশকে এক অসহায় গ্রামীন পরিবারে জন্ম নেওয়া হাস্যোজ্জল, উজ্জলমুখ, রুপবতী এক কিশোরীর সামাজিক বাধা-বিপত্তি, কুসংস্কার, কুনজর পেরিয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে সফল হওয়া আবার শেষমেষ দাম্পত্য জীবনের মধ্য দিয়ে পুরো জীবন কাটিয়ে দেওয়া– গল্পটি পড়লে  পাঠকের মনে এমন ধারনাই দিতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠকদের আক্ষেপ গল্পটা সুন্দর সমাপ্তি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু গল্পে যে মোড়ের কমতি নেই! বাবার অবহেলা থাকার পরেও মা হেমলতার সান্নিধ্যে, কঠোরতা, অমায়িকতা, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখা কন্যাদের জীবন হয়তো মার দেখা স্বপ্নের মতই পুরণ হতে পারত। কিন্তু নিয়তি যে শুধু বাস্তবতাতেই দেখা দেয় না তার এক চরম প্রমাণ লেখিকা দিতে পেরেছেন এই উপন্যাসটিতে।

সমাজের দৃষ্টিকটু নজর থেকে মেয়েদের রক্ষা করতে অনেক দূর পড়ানোর জন্য হেমলতা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পছন্দের বড় কন্যার ভাগ্যে কলঙ্ক যেন অনির্বার্য! হঠাৎ এক সন্ধ্যায় এক আগন্তুকের আগমনে পরিবারের গোছানো সংসার যেন এলোমেলো হয়ে যায়। বদলে যায় সবকিছু, পাল্টে যায় পদ্মজার জীবন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পদ্মজা ও আগন্তুক অর্থাৎ আমিরের মাঝে গড়ে ওঠে একটি সুন্দর সংসার। তবে বিয়ের পরদিন থেকেই শ্বশুরবাড়িতে এক অদ্ভুত রহস্যের আভাস পায় পদ্মজা। সামনে থেকেও দূরে - উপরে হাসি ভেতরে লুকোচুরি -  পরিবারের প্রতিটা সদস্যই যেন একেকটি রহস্য। সবচেয়ে বড় রহস্য বাড়ির পেছনের অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গল। এই রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে একে-একে সে প্রিয়জনদের হারায়। ভেঙ্গে যায় স্বপ্নে সাজানো সুন্দর সংসার। এক কালোরাত্রির বীভৎস ঘটনা পুরোগ্রাম, জেলা ও পরে পুরো দেশে তোলপাড় ছড়িয়ে দেয়। মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে ‘পদ্মজার ফাঁসি চাই’। ভালো কিংবা মন্দ যেমনটাই হোক না কেন পদ্মজার গল্প পাঠকদের যুক্ত করতে পেরেছে। প্রতিষ্ঠিত গল্পকারদের ভীড়ে আলোড়ণ তৈরি করতে সক্ষম হন একজন নতুন লেখিকা।

fatemaaktarhellbound@gmail.com

Share this news