
Published :
Updated :

নতুন বছর মানেই মানুষের জীবনে হাসি, গান আর আতশবাজির ঝলকানি। আমরা যখন ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে কাউন্টডাউনের অপেক্ষা করি, ঠিক তখনই শহরের প্রাণীগুলো মুখোমুখি হয় অন্য এক বাস্তবতার। আতশবাজির বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পথকুকুর, কার্নিশে বসে থাকা পাখিরা দিশেহারা হয়ে উড়ে যায়, আর ঘরে থাকা পোষা প্রাণীটি ভয়ে লুকিয়ে পরে অন্ধকার কোণে। যে রাতটি মানুষের কাছে উৎসবের, সেই রাতটিই অনেক প্রাণীর জন্য হয়ে ওঠে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার।
আতশবাজির আকস্মিক শব্দ ও ঝলমলে আলো প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। মানুষের তুলনায় শ্রবণশক্তি অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় এই শব্দ সরাসরি তাদের স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। ভয় পেয়ে কেউ ছুটে পালায়, কেউ পথ হারায়, কেউ আবার দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হয়। এই আতঙ্ক কেবল মানসিক নয়, অনেক সময় এটি শারীরিক অসুস্থতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা প্রাণীর জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
তাছাড়া উৎসবের সময় বায়ুদূষণও বাড়ে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া প্রাণীর শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে। যেসব পোষা প্রাণীর আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বা শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে, তাদের জন্য এই সময়টা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। দূষণে মানুষ যেমন অস্বস্তি অনুভব করে, পাশাপাশি প্রাণীরাও কষ্ট পায়।
এই সময় পোষা প্রাণীর প্রতি বাড়তি যত্ন নেয়া আমাদের দায়িত্ব। আতশবাজি দিয়ে আনন্দ করার সময় তাদের ঘরের ভেতরে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে যাতে আলোর ঝলকানি বা শব্দ সরাসরি তাদের কাছে না পৌঁছায়। এই সময় দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, জানালায় মোটা পর্দা ব্যবহার এবং শব্দের তীব্রতা কমাতে ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে যা তাদের ভয় কমাতে অনেকটা সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করে রাখা উচিত নয়, কারণ হঠাৎ ঝলমলে আলো প্রাণীর চোখ ও স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তোলে।
আতঙ্কিত অবস্থায় জোর করে কিছু করানো উচিত নয়, এতে আরও বেশি হিংস্র আচরণ করতে পারে। বরং পাশে থাকা, পরিচিত স্পর্শ তাদের মানসিকভাবে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
উৎসবের দিনেও তাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও হাঁটার সময় যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখা উচিত। হঠাৎ রুটিন বদলে গেলে প্রাণীরা আরও অস্থির হয়ে পড়বে। তাই, নিজেদের শান্ত থাকাও একইভাবে জরুরী। আপনার আতঙ্ক বা উত্তেজনা প্রাণীরা দ্রুত বুঝতে পারে, তাই আপনি শান্ত থাকলে তারাও তুলনামূলক শান্ত থাকবে।
ভয় পেলে অনেক প্রাণী পরবর্তী কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করতে চায় না, এসময় পরিস্কার পানি ও হালকা খাবারের ব্যবস্থা রাখা উচিত। খুব বেশি আতঙ্কিত হয় এমন প্রাণীর ক্ষেত্রে আগে থেকেই একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
৩১ ডিসেম্বর রাতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করে পথপ্রাণীরা। শব্দ ও আলো থেকে পোষা প্রাণীদের কিছুটা রক্ষা করা গেলেও শহরের রাস্তায় থাকা প্রাণীদের আতঙ্ক আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাদের নিরাপত্তার কথাও আমরা না ভাবলে কারা ভাববে?
উৎসব শেষে রাস্তায় পড়ে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য প্রাণীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। প্লাস্টিক, অতিরিক্ত মশলাদার খাবার বা মিষ্টি খেয়ে অনেক পথপ্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই নতুন বছরে উৎসবের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করতে হবে, এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয় একইসাথে পথপ্রাণীগুলোর জীবন রক্ষার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।
নতুন বছর শুধু মানুষের জন্য না, প্রাণীদের জন্যও। আমাদের আনন্দ যেন অন্য প্রাণীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে না দাড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। নতুন বছর উদযাপনের উপলক্ষ্য হিসেবে আতশবাজি ও ফানুশ ব্যবহারের বিকল্প খোঁজা এখন সময়ের দাবি।
শুধু প্রানী নয়, আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করলেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন সিদ্ধান্ত আর দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই আমরা নতুন বছরকে সবার জন্য নিরাপদ এবং আরও সুন্দর করে তুলতে পারি।
sumaiyariva1120@gmail.com

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.