Bangla
9 hours ago

বাড়তি আয়ের জন্যে করতে পারেন যেসব কাজ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

Published :

Updated :

আজকের দিনে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে শুধু একটি চাকরির আয়ের ওপর নির্ভর করা অনেকের জন্যই কঠিন। ভালো বেতনের চাকরি থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারা মানেই জীবনে আরও একটু স্বাচ্ছন্দ্য এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আপনার মূল চাকরির ক্ষতি না করে অবসর সময়ে বা অতিরিক্ত সময়ে কীভাবে বাড়তি আয় করবেন, নিচে তার কিছু জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো:

ফ্রিল্যান্সিং যেমন লেখা-লেখি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনা 

আপনার দক্ষতা যদি লেখালেখি, গ্রাফিক ডিজাইন, বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিষয়ে থাকে, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে আপনার জন্য একটি চমৎকার বিকল্প।

কনটেন্ট রাইটিং ও ব্লগিং: যদি লেখালেখিতে আপনার ভালো দখল থাকে, তাহলে অবসর সময়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ বা কোম্পানির জন্য আর্টিকেল বা কনটেন্ট লিখে আয় করতে পারেন। নিজের একটি ব্লগ তৈরি করেও গুগল অ্যাডসেন্স বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যক্তি তাদের রুটিন কাজ (যেমন ইমেল ম্যানেজমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলিং) করার জন্য ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করে। আপনি ঘরে বসেই এই কাজগুলো করতে পারেন। লেখালেখি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো কাজ থেকে মাসিক ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

অনলাইন শিক্ষাদান ও টিউটরিং

আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী হন, তবে আপনার জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

অনলাইন টিউশনি করেও আপনি করে নিতে পারেন অতিরিক্ত আয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বা নির্দিষ্ট কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনলাইনে টিউশনি করাতে পারেন।

অনলাইন কোর্স তৈরির মাধ্যমে আয় করার চল এখন। কোনও বিশেষ দক্ষতা বা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে অনলাইন কোর্স তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। একবার কোর্স তৈরি করলে তা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে আয় হতে পারে। 

বিদেশি ভাষা শেখানো: যদি আপনি কোনো বিদেশি ভাষায় দক্ষ হন, তবে অনলাইনে সেই ভাষা শেখানোর মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন।

এধরনের কাজ সৃজনশীল হওয়ার কারণে সুযোগ স্বল্প হলেও খুব শক্ত অবস্থান থাকে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজ করা যায়। এতে মাসিক ২০ থেকে ৫০ হাজার বা তারও বেশি আয় করা যায়।

ছোট ব্যবসা এবং ক্রাফটিং

সৃজনশীলতা এবং অল্প বিনিয়োগে ছোট পরিসরে কিছু কাজ শুরু করা যেতে পারে। এর মধ্যে হাতে তৈরি পণ্য বিক্রি অন্যতম। বাজারে হাতে তৈরি গহনা, পোশাক, মোমবাতি, বা ঘর সাজানোর জিনিসের চাহিদা অনেক। তাই এসব তৈরি করে অনলাইনে বা ছোট পরিসরে বিক্রি করতে পারেন।

রান্না ও বেকিংয়ের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। যদি আপনার রান্না বা বেকিংয়ে দক্ষতা থাকে, তবে ছোট পরিসরে টিফিন বা কেক-পেস্ট্রি তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন।

ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, এডিটিংয়ে দক্ষ হলে বিভিন্ন ইভেন্ট বা ইউটিউবারদের জন্য কাজ করে আয় করা যেতে পারে।

ছোট ব্যবসা বা কনটেন্ট তৈরি এখন অনেক পরিচিত এবং সময়োপযোগীও। এতে পরিশ্রম করতে পারলে ১০ হাজার থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকাও মাসিক আয় করা সম্ভব।

ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরি করে আয়

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা অ্যাপ তৈরির দক্ষতা থাকলে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের এটি একটি উচ্চ-চাহিদাসম্পন্ন উৎস।

কাস্টম ওয়েবসাইট/অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট হতে পারে আয়ের উৎস। ছোট ব্যবসা বা ক্লায়েন্টদের জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে দেওয়া একটি অত্যন্ত লাভজনক কাজ।

থিম বা প্লাগইন বিক্রি: যদি আপনার ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে থিম/প্লাগইন তৈরির দক্ষতা থাকে, তবে তা তৈরি করে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে যেমন থিম ফরেস্টে বিক্রি করতে পারেন। এটি এক প্রকার প্যাসিভ ইনকাম।

নিজের অ্যাপ/ওয়েবসাইট থেকে আয়: আপনি নিজের একটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে বিজ্ঞাপন প্রিমিয়াম সার্ভিস বা ইন-অ্যাপ পারচেজের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। এধরনের কাজগুলোর মাধ্যমে মাসিক ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়।

পরোক্ষ আয়  

যে আয়ের উৎসগুলোতে একবার কাজ করে দীর্ঘ সময় ধরে আয় আসতে থাকে, তাকে প্যাসিভ ইনকাম বা পরোক্ষ আয় বলে। এই ধরনের আয়ের মধ্যে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ অন্যতম। সঠিক জ্ঞান ও গবেষণার ভিত্তিতে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ এবং মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় করা যেতে পারে।

ইউটিউব বা পডকাস্ট চ্যানেল থেকেও আয় করতে পারেন এভাবে। নিয়মিত মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করে একটি ইউটিউব চ্যানেল বা পডকাস্ট শুরু করতে পারেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রোতা তৈরি হলে বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। এই আয় নির্ভর করে ব্যক্তির বিনিয়োগের ওপর।

বাড়তি আয়ের জন্য আপনি যা-ই করুন না কেন, কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরী:

১. মূল চাকরির সাথে সংঘাত: নিশ্চিত করুন যে আপনার বাড়তি কাজটি আপনার মূল চাকরির চুক্তির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করছে না। ২. সময় ব্যবস্থাপনা: বাড়তি কাজের জন্য আপনার মূল কাজ, স্বাস্থ্য বা ব্যক্তিগত জীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ৩. দক্ষতার ব্যবহার: যে কাজটিতে আপনি দক্ষ, সেটিকেই আপনার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিন। ৪. ধৈর্য ও লেগে থাকা: যেকোনো নতুন কাজ বা ব্যবসায় সফলতা পেতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।

বাড়তি আয় শুধুমাত্র আপনার পকেটকেই ভারী করবে না, এটি আপনাকে দেবে আরও বেশি আর্থিক স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাস।

Share this news