Published :
Updated :
প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর অনেক মসজিদেই দেয়া হয় জিলাপি। যাদের জিলাপি পছন্দ, তারা তো বটেই ; বরং যারা জিলাপি তেমন খান না, তারাও লাইনে দাঁড়িয়ে, অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, ভিড় ঠেলে সংগ্রহ করেন এই জিলাপি।
বাদ জুম্মা মসজিদে দেওয়া এই জিলাপি নিয়ে অনেকেরই রয়েছে মজার অভিজ্ঞতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তালহা জাহান প্রান্ত ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। অভিনয়শিল্পী হিসেবে দক্ষ তালহা বললেন, " জুম্মার নামাজটা আসলে আমার কাছে একটা মজার দিন। শুক্রবারে জুম্মার নামাজটা হয়। এদিন সাপ্তাহিক ছুটি। বাসার সবাই বাসাতেই থাকে। অনেকদিন পর সবার সাথে ভালো সময় কাটানো হয়। বাসায় ভাল-মন্দ রান্নাবান্না হয়।"
"আর জুম্মার দিন জুম্মার নামাজ পড়তে যাওয়া আমার কাছে কয়েকটি কারণে মজার। এক তো অনেকের সাথে দেখা হয়, আর দুই- জিলাপি। জিলাপি বা মিষ্টি জাতীয় পণ্য আমার খুবই পছন্দের। আর জুম্মার দিন নামাজের পরে তো আর কথাই নেই; আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে বসি। নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়েই আমরা একসাথে মসজিদের দোতলা থেকে বের হতাম। একদম ঠেলেঠুলে আমরা আগে যেতাম। সবাই জিলাপীও পেতাম না। মারামারি করে ছোট-বড়দের থেকে জিলাপি নিতাম। জিলাপি নেবার পর খালি পায়েই বন্ধুরা সবাই মিলে খেতাম। যারা পেতো না তাদের সাথে ভাগাভাগি করে সবাই মিলে খেতাম। খাওয়ার পরে সবাই জুতো খুঁজে- পরে দলবেঁধে বাড়ি যেতাম। বাড়ি গিয়ে দেখি বাবা আরো কয়েকটি জিলাপি নিয়ে আসতো।"
তালহার যেমন রয়েছে জিলাপি নিয়ে এমন মজার অভিজ্ঞতা, তেমনি কারো কারো আবার জিলাপি সংগ্রহ নিয়ে আছে অভিমানের অভিজ্ঞতাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান চমৎকার কবিতাও লেখেন। তিনি জিলাপি নিয়ে তার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে জানান," আমার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ভিটাবাড়িয়া। একবার আমাদের ঘর (বাড়ি) থেকে মসজিদে জিলাপি দিয়েছিলো। এজন্য আমাকে আর আলাদাভাবে দেয় নাই। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, ঘরে জিলাপি থাকলেও আমি কেনো পেলাম না, সেটা নিয়ে।"
আবার, বিদেশ-বিভূঁইয়ে থাকা অনেকের কাছে মসজিদে দেওয়া এই জিলাপির আলাদা আবেদন রয়েছে। এ নিয়ে রয়েছে আনন্দ ও বেদনা মিশ্রিত চমৎকার স্মৃতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান শৈশব বর্তমানে লন্ডনে আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন। মসজিদের জিলাপি নিয়ে তার রয়েছে মনে দাগ কেটে থাকার মতো স্মৃতি।
তিনি জানান, " ছোটবেলায় আমার গ্রামের মসজিদের বাইরের মাঠে এক বড়ভাই আমার বয়সী সবাইকে জিলাপি দিয়েছিলো। আমাকে দিতে পারে নাই কোনো কারণে, কারণ আমি কাড়াকাড়ি করতে পারতাম না। আমি ভেবেছিলাম উনি আমাকে নিজ থেকে খেয়াল করে জিলাপি দেবেন। কিন্তু উনি দেন নাই। এই ঘটনায় আমি ওনার উপরে প্রচণ্ড রাগ করেছিলাম। এই রাগ অনেকদিন ছিলো। সেই বড় ভাই দুই বছর আগে মারা গেছেন।"
আবার, সবাই যে কাড়াকাড়ি করে নিতেন জিলাপি, এমনও নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ বর্তমানে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। থিয়েটারও করেন তিনি। তিনি জানান, "মসজিদ থেকে জুতা হারানোর মতো ঘটনা ঘটেছে, আবার হয়তো পরের দিন পেয়েছি। মসজিদে আমিত্তি দিতো। আমিত্তি/জিলাপি নিয়ে কেউ কেউ শয়তানি করতো, একবার নিয়ে খেয়ে হাতমুছে আবার নিতো। তবে কেউ নিজ থেকে দুটো দিলে আমি নিয়েছি, আলাদাভাবে শয়তানি করে মনে হয়না নিয়েছি।"
আবার কেউ কেউ এই ভিড়ভাট্টার ভেতর যেতে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম মাহবুব যেমন বললেন, "আমার খুব অস্বস্তি হতো ভিড় ঠেলে জিলাপি নিতে। তাছাড়া, আমি মিলাদ অব্দি থাকতাম না তেমন। তাই জিলাপি তেমন নেওয়া হতো না।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী মো.ইমরান খানের অভিজ্ঞতার বড় এক অংশ জুড়ে আছে ওরশের খিচুড়ি। তবে জিলাপির অভিজ্ঞতাও আছে তার। তিনি বলেন, "আমেজটা অনেক মজার ছিলো। আমরা মোনাজাতের পর মসজিদের মাঠে বসে থাকতাম। অপেক্ষা করতাম কখন বালতি আসবে। সেখান থেকে ভাগাভাগি করে জিলাপি খেতাম।"
প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর এমনভাবে জিলাপি নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে অনেকেরই। ভিড় ঠেলে জিলাপি নিতে গিয়ে জুতো ছেঁড়া, কারো কারো না পাওয়া, কেউ একাধিক নেওয়া- এমনভাবে নানান হুলস্থূল কাণ্ড হতো এই জিলাপি নিয়ে। সে সময়টা পেরিয়ে আসা অনেকের কাছেই এখন এসব মধুর স্মৃতি।
mahmudnewaz939@gmail.com