
Published :
Updated :

ঢাকার অলি-গলি কিংবা রাস্তার মোড়ে সেলুনের কাঁচের দেয়ালে পোস্টার, সোনালি-বেল্ট হাতে নিয়ে সুঠামদেহী এক এথলিট। আবার টেলিভিশন বিক্রির দোকানে মানুষের ভিড়। না, বাংলাদেশের কোনও ক্রিকেট ম্যাচ নয়, বরং স্ক্রিনে চলছে রেস্লিং! এখানেও সেই একই ভদ্রলোক। এই হলো রাস্তাঘাতের চিত্র; সবই যে একইরকম তাও নয়। কিন্তু কেউ যদি এই অলি-গলি পেড়িয়ে কোনও জিম অর্থাৎ শরীরচর্চা কেন্দ্রে যায় সেখানে এই ভদ্রলোকের ছবি অবশ্যই দেখবেন। এক হাতে চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট অপর হাতের পাঁচটি আঙ্গুল চেহারার সামনে আর পরনের টি-শার্টে লিখা 'ইউ কান্ট সি মি।' লিখছি ওয়ার্ল্ড রেস্লিং এন্টারটেইনমেন্টের একজন কিংবদন্তী, প্রফেশনাল রেস্লার, পাশাপাশি হলিউডের অভিনেতা জন সিনার কথা যিনি দীর্ঘ ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটালেন ১২ ডিসেম্বর।
কে এই জন সিনা
জন সিনা ২৩ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট নিউবুরি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০০ সালে পেশাদার রেস্লিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার আলটিমেট প্রো রেস্লিং থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কঠোর অনুশীলন ও শারীরিক সক্ষমতার মাধ্যমে অল্প সময়েই তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। ২০০২ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড রেস্লিং এন্টারটেইনমেন্ট অর্থাৎ ডব্লিউ ডব্লিউ ইতে আত্মপ্রকাশ করেন, যেখানে তার শক্তিশালী রিং পারফরম্যান্স ও অনন্য ব্যক্তিত্ব তাকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় রেস্লার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্যারিয়ার জুড়ে জন সিনা অনেক ম্যাচই খেলেছেন। রেস্লিংয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ বার চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট জিতে তিনিই সেরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে কখনও আন্ডারটেকার, কখনও ব্রক লেসনার, কিংবা ট্রিপল এইচ ও রেন্ডি অরটন, সিনা তার প্রতিটি ম্যাচে সিনেমাটিক থ্রিল দিতে পারতেন। রিংয়ে প্রবেশের সময় বেজে ওঠা তার গান "দ্য টাইম ইজ নাও" ২০১০ এর দশকে অনেকেই ফোনের রিংটোন ব্যবহার করেছিল।
একজন গুড বয় রেস্লার
রেস্লিং বিজনেস স্ক্রিপ্ট বা গল্পনির্ভর। এই গল্পে একেকটি চরিত্র তৈরি করা হয় ইভেন্টের ম্যাচগুলোর জন্য, এছাড়া গোটা সপ্তাহজুড়ে চলে প্রতিদিনের শো যার মাধ্যমে তৈরি করা হয় মেগা ইভেন্টের মূল ফাইট। তাই কখনও কোনও রেস্লারকে আমরা দেখি নেতিবাচক চরিত্রে আবার কখনও ইতিবাচক। জন সিনা তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ইতিবাচক ছিলেন। তার চরিত্রটি বিশেষ করে ছিল শিশুদের কাছে প্রিয়। তাই বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে তিনি বেশ জনপ্রিয়।
অন্য রেস্লারদের যেরকম ঠকবাজি করতে দেখা যায়, কখনও বেশ খল চরিত্রে দেখা যায় সেখানে সিনা বেশিরভাব সময় ছিলেন একজন হিরো যিনি দর্শকের জন্য নামতেন, প্রচুর আনন্দ করতে করতে রিংয়ে প্রবেশ করতেন এবং নিজের পরিশ্রম ও হার না-মানা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয়ী হয়ে ফিরতেন। তার হার নামানা স্বভাবই তিনি ক্যারিয়ারজুড়ে প্রচার করে দিয়েছেন- "নেভার গিভাপ" "কখনও হার মেনো না।"
অবসরে সিনা
প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে সিনার বিদায়ের কেম্পেইন। শেষের দিকে তিনি খল চরিত্রটি বেছে নেন যেন গল্পে আরও থ্রিল আসে। আর শেষ হয় গুন্থারের হাতে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। শেষ ম্যাচে সবাই হারেই বা কেন? এনিয়ে ভিন্ন আলাপ হতে পারে। তবে সিনা যা দিয়েছেন তা অপূরণীয়। একটি গল্পনির্ভর খেলা যার মূল লক্ষ্যই বিনোদন দেয়া, সেখানে তিনি দিয়েছেন বাস্তবতার সবক।
মানুষ শুধু নিছক বিনোদনের জন্যই নয়, বরং গল্পে নতুন কী থাকছে, কেমন হতে পারে সেই ফাইট, বড় ইভেন্টের চমক কেমন হবে এনিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। মানুষ রেস্লিংকে গল্পের বাইরে গিয়েই ভেবেছে। এটাই হয়তো জন সিনার অর্জন।
আগামীতে তিনি কী করবেন
রেস্লিং থেকে অবসর নেওয়ার পর জন সিনার মূল পরিকল্পনা হলো অভিনয় ও বিনোদন জগতে আরও সক্রিয় হওয়া। ইতোমধ্যেই তিনি হলিউডে একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে বড় বাজেটের সিনেমা ও টিভি প্রজেক্টে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন টিভি শো উপস্থাপনা, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট এবং প্রযোজনার কাজেও যুক্ত থাকতে চান। জন সিনা তার দীর্ঘদিনের মানবিক কাজ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য 'মেইক আ উইশ ফাউন্ডেশন'র সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও করেছেন। সব মিলিয়ে, রেস্লিং ছাড়লেও জন সিনা জনসম্মুখে থেকেই বিনোদন ও সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।
পুরোপুরি বিদায়? যদিও জন সিনা ইন-রিং রেসলার হিসেবে সম্পূর্ণরূপে অবসর নিয়েছেন, তবে তিনি এটিও বলেছেন যে ডব্লিউ ডব্লিউ ই এর পরিবারের অংশ হিসেবে এবং একজন দূত হিসেবে সংস্থাটির সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। এর অর্থ হলো, নিয়মিত রেসলিং না করলেও, তিনি ভবিষ্যতে অন্য কোনও ভূমিকায় (যেমন: অতিথি উপস্থিতি, প্রচারমূলক কাজ) বা যেকোনো ভূমিকায় থাকতে পারেন।

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.