বিএফআরআই-এর গবেষণায, কার্পজাতীয় মাছের পঞ্চম নতুন প্রজনন কেন্দ্র আবিষ্কার
Published :
Updated :
দেশে মিঠা পানিতে দেশীয় মাছের প্রজননের আধার পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত কৃত্রিম মিঠা পানির হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের সময় ৫৬ হাজার কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এই হ্রদ শুধুমাত্র মিঠা পানির মাছের আধার নয় বরং প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের ৫ম নতুন প্রজনন কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছেন। লংগদু উপজেলার কাসালং চ্যানেলের মালাদ্বীপ মসজিদ সংলগ্ন অঞ্চলে ওই প্রজনন কেন্দ্র চিহ্নিত হয়। এর আগে ওই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের চারটি প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র আবিষ্কার করা হয়েছিল। সেগুলো হলো কাসালং চ্যানেলে মাইনীমুখ মাস্তানের টিলা সংলগ্ন এলাকা, কর্ণফুলী চ্যানেলে জগন্নাথছড়ি এলাকা, চেংগী চ্যানেলের নানিয়ারচর এলাকা ও রিংকন চ্যানেলের বিলাইছড়ি এলাকা।
সোমবার (১২ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাবলিকেশন অফিসার এস. এম. শরীফুল ইসলাম। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার ও বি. এম. শাহিনুর রহমান। দলে আরও ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. খালেদ রহমান ও মো. লিপন মিয়া।
বিএফআরআই-এর রাঙামাটিস্থ নদী উপকেন্দ্র বিগত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ, কার্পজাতীয় মাছের পরিপক্কতা ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিরূপণ এবং রেণু সংগ্রহ ও প্রজাতি বিন্যাস বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। গবেষণার অংশ হিসেবে এবার চিহ্নিত হয়েছে নতুন এ প্রজনন কেন্দ্রটি।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ কাপ্তাই লেক দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ। মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন উন্মুক্ত জলাশয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন, যা প্রায় ২৬ হাজার ৬৮৮ জন মৎস্যজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার অন্যতম প্রধান ভরসা।
এস. এম. শরীফুল ইসলাম জানান, প্রজননের মৌসুমে মূলত জুন-জুলাই মাসে পাহাড়ি ঢল, ভারী বৃষ্টিপাত, ঝড়ো হাওয়া এবং পানির প্রবল স্রোতের প্রভাবে হ্রদের পানিতে ঘূর্ণন তৈরি হলে কার্পজাতীয় মাছ প্রজনন করে থাকে। কাপ্তাই লেকে প্রাকৃতিক প্রজনন সংক্রান্ত প্রথম গবেষণা হয় ১৯৮৬ সালে। এরপর ২০০৩-০৪ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিএফআরআই-এর রাঙামাটিস্থ উপকেন্দ্র কাসালং চ্যানেলের মাস্তানের টিলা সংলগ্ন এলাকায় ডিম সংগ্রহ করে সফলতা অর্জন করে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তারা পূর্বের স্থান থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উজানে গিয়ে মালাদ্বীপ মসজিদসংলগ্ন এলাকায় নতুন প্রজনন কেন্দ্রটি শনাক্ত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সংগ্রহকৃত ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের হার ছিল প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। গবেষণায় হ্রদের কাসালং চ্যানেলে চলতি বছরের প্রজনন মৌসুমে (মে-জুলাই) পানির গভীরতা ছিল মাত্র ১.৮ থেকে ২.৪ মিটার। তাছাড়া পানির অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন (৫.২-৬.৬ মিগ্রা./লি.), লবণাক্ততা (০.০১-০.০২ পিপিএম), পিএইচ (৭.২৮-৭.৪০) এবং পানির তাপমাত্রা (২৬.৬২-২৭.১ ডিগ্রি সে.) অনুকূল থাকায় কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলম্বে বৃষ্টিপাত এবং পলিমাটি ভরাট হয়ে প্রজননক্ষেত্রের পানির গভীরতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছে। এছাড়াও কার্পজাতীয় মা মাছের অভিপ্রয়াণ পথও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ফলে প্রজননক্ষেত্রের আয়তন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।