Bangla
2 days ago

বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ঋণ সীমা শিথিলের উদ্যোগ

Published :

Updated :

সরকার শিল্প বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য স্থানীয় মুদ্রায় মেয়াদী ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাতের মতো মূলধন-অর্থায়ন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা করছে। সরকারি কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

বর্তমানে, বাংলাদেশে তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে উৎপাদন বা পরিষেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত বিদেশী মালিকানাধীন/নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলি তাদের ইক্যুইটিতে স্থানীয় বিষয়বস্তু নির্বিশেষে ক্ষমতা সম্প্রসারণ এর জন্য স্থানীয় বাজার থেকে বাংলাদেশী টাকায় মেয়াদী ঋণ নিতে পারে।

তবে, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নির্দেশিকা অনুসারে তাদের মোট ঋণ ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না। অন্যদিকে, দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন কোনো ঋণ-ইকুইটি অনুপাতের বিধিনিষেধ নেই। 

সূত্র জানায়, বিদেশি কোম্পানির ওপর এই সীমাবদ্ধতা ১৯৮০ সালের ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট আইন অনুযায়ী অসামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ ওই আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি "ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক আচরণ" নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিদেশি ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট সংক্রান্ত স্ক্রুটিনি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশি মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর জন্য টার্ম লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ-ইকুইটি সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টকে অনুরোধ জানাবে—যাতে বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় এবং স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ সীমাহীনভাবে দেওয়া হয়।

কমিটির মতে, এ ধরনের বাধা তুলে দিলে শিল্প খাতে আরও বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে সহায়তা করবে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এতে করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, যে কোম্পানিটি যে দেশে ব্যবসা করে, সেটিই সেই দেশের রেসিডেন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। “তাহলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশে ব্যবসা করে, তবে তাদের ওপর এমন ঋণ সীমাবদ্ধতা আরোপের যৌক্তিকতা কী, যা দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে নেই?”—জানান তিনি।

ড. হোসেনের মতে, ঋণ দেওয়ার বিষয়টি হওয়া উচিত ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে। “এতে ভালো কোম্পানিগুলো সহজেই ঋণ পাবে এবং ব্যাংকও লাভবান হবে,” বলেন তিনি।

তিনি দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে আরও বলেন, যেহেতু এ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় দেওয়া হচ্ছে, তাই এখানে কোনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি নেই।

তবে ড. হোসেন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “যদি আপনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দেন অথচ দেশীয়দের জন্য তা নিশ্চিত না করেন, তাহলে তা বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

তাই সরকারকে পরামর্শ দেন, দেশি-বিদেশি নির্বিশেষে সব ধরনের বিনিয়োগের জন্য একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। 

Share this news