Bangla
6 months ago

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় বইমেলাগুলো

Published :

Updated :

যদি বই পড়তে পছন্দ না করেন, তার মানে আপনি সঠিক বইটি এখনও খুঁজে পাননি- বলেছিলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জে কে রাউলিং। আর ভালো বইয়ের সাহচর্য আছে, এমন কোনো মানুষকে কখনো বন্ধুহীন বলা যায় না, বলেছিলেন ভিক্টোরিয়া আমলের ব্রিটিশ কবি এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং। দুইয়ে মিলে সঠিক ও ভালো বন্ধুর খুঁজে বের করার একটি দারুণ উপায় হতে পারে বইমেলা।

অমর একুশে বইমেলার কথা আমরা কে না জানি? বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রতি বছরের নিয়মিত এ আয়োজন। পাঁচ দশক ধরে বাংলা অ্যাকাডেমির এ আয়োজনই দেশের লেখক ও পাঠকদের এক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

ভিন্ন প্রেক্ষাপট, ভিন্ন মত ও ভিন্ন মূল্যবোধের মানুষকে মুখোমুখী আনতে বিকল্প নেই বইমেলা ও বই উৎসবের।

জানেন কি, শুধু বাংলাদেশে নয়, সাহিত্য অনুরাগীদের জন্য বইমেলা হয় বিশ্বের আরও অনেক দেশেই? পৃথিবীর বুকে বইমেলার ইতিহাস জানতে ফিরে তাকাতে হবে মধ্যযুগে, যখন কাগজের পাতায় লেখা ছেপে তা এক করে বই প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল।

শুরুতে পাঠকদের কাছে বই বিক্রির জন্য প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে বইমেলা শুরু হয়েছিল। পরে প্রকাশক, লেখক আর বইপ্রেমীদের এক ছাদের নিচে আনতে সময়ের সঙ্গে সারা বিশ্বে বইমেলা রূপ নেয় অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজনে।

জেনে নেয়া যাক হাল আমলে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কিছু মেলার এদিক-সেদিক।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, জার্মানি

বইকে ঘিরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও নিয়মিত আসরটি বসে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে। ৫শ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতি বছর দেশবিদেশের যতো প্রকাশনী এ মেলায় অংশ নেয়, তেমনটা হয় না আর কোথাও। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে এ আয়োজন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইমেলা, যেখানে আসে বইয়ের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তও।

২০১৭ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ১শর বেশি দেশের সাত হাজার ৩শর বেশি প্রকাশক। সে বছর দুই লাখ ৮৬ হাজারের বেশি বইপ্রেমীর পা পড়েছিল বিশ্বখ্যাত এ মেলায়। তবে পাঁচ দিনের মেলার প্রথম তিন দিন মেলায় প্রবেশ করতে পারেন লেখক, প্রকাশকসহ শুধু বইকেন্দ্রিক পেশাজীবীরা। সাধারণ পাঠকদের জন্য মেলা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন। 

লন্ডন বইমেলা, ইংল্যান্ড

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বই কেনাবেচার পরিমাণ এবং গুরুত্বের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ বইমেলাটিও হয় ইউরোপেই। এটি লন্ডন বইমেলা। ফ্রাঙ্কফুর্টের তুলনায় লন্ডন বইমেলার ইতিহাস অনেকটা নতুন। প্রথমবার লন্ডন বইমেলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে। গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিকদের জন্য ছোট পরিসরে এ আসর শুরু হলেও দিনে দিনে বেড়েছে পরিধি। তবে আজও এ মেলা সাধারণ পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত নয়।

কলকাতা বইমেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

ভারতের কলকাতা শহরে প্রতি বছর শীতের সময় অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা। ফ্রাঙ্কফুর্ট ও লন্ডনের পর এখানে প্রদর্শিত হয় বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ বইয়ের সংগ্রহ।

একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবাণিজ্যিক বইমেলাও এটি। কারণ এ মেলা শুধু বই ব্যবসায়ী বা বইকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের জন্য নয়, বরং সমাজের সব স্তরের সাধারণ পাঠক ও সাহিত্য অনুরাগীদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত। আর এটাই কলকাতা বইমেলার সবচেয়ে উল্লেযোগ্য দিক। ১৯৭৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু কলকাতা বইমেলার।

স্যালোঁ দ্যু লিভ্রা দ্যু প্যারিস, ফ্রান্স

সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি নোবেলজয়ী দেশ ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বইমেলা ও প্রখ্যাত সাহিত্য আয়োজন এটি। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ১২শ’র বেশি প্রকাশক ও সাড়ে চার হাজার লেখক তাদের বই নিয়ে উপস্থিত থেকেছেন এ মেলায়।

মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা, রাশিয়া

রুশ সাহিত্য জগতের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজন মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা। প্রতি বছর ছয় দিনের এ আয়োজনে স্বাগত জানানো হয় দুই লাখের বেশি বইপ্রেমীকে। তাদের জন্য বই নিয়ে আসে ৬০টির বেশি দেশের দুই হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ব সাহিত্যে রুশ সাহিত্যিকদের অবদান অবিস্মরণীয় বলে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এ মেলা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে আসে রুশ সাহিত্য। বলা হয়, সন্তান জন্মদান, শৈশব, মৃত্যু, প্রথম প্রেম, বিয়ে, সুখ, একাকিত্ব, প্রতারণা, দারিদ্র্য, সম্পত্তি, যুদ্ধ, শান্তির মতো মানবজীবনের অসংখ্য নিয়মিত ঘটনা আর অনুভূতি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ধ্রুপদী রুশ সাহিত্যিকরা, তা নজিরবিহীন।

গোথেনবার্গ বইমেলা, সুইডেন

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন গোথেনবার্গ বইমেলা। এ মেলার শুরুটাও খানিকটা লন্ডন বইমেলার মতোই। গ্রন্থাগারিকদের সেমিনার হিসেবে এ মেলার জন্ম। দর্শনার্থীর সংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে এটি ইউরোপের তৃতীয় বৃহৎ বইমেলা।

সময়ের সাথে বইমেলার উদ্দেশ্য বদলেছে। এখনকার পাঠকদের বইমেলা টেনে আনে কোন প্রত্যাশায়? বুক ওয়ার্ল্ডের এক জরিপে দেখা যায়, ৬২% দর্শনার্থী বই কিনতে মেলায় পা রাখেন। ৪১% দর্শনার্থী বইমেলায় যায় পরিবেশের কারণে, ৩৫% দর্শনার্থীর আগ্রহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচনা ও বিতর্কে, ২২% অনুরাগী বইয়ে প্রিয় লেখকের স্বাক্ষর নিতে চান, নতুন লেখকদের সান্নিধ্য পেতে চান ২০ শতাংশ দর্শনার্থী এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করা উদ্দেশ্য মেলায় আগত ১৯ শতাংশ অতিথির।

[email protected]

Share this news