Published :
Updated :
ভারতের কেরালা রাজ্যের জাতীয় উৎসব ওনাম। মালয়ালম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী উৎসবটি উদযাপিত হয় চিংগাম মাসে। মাসটি সাধারণত ইংরেজি আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পড়ে। উৎসবটি ১০ দিন ব্যাপী পালিত হয়। এর মধ্যে প্রথম ও শেষ দিন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মহাবলী নামের এক অসুর কেরালায় রাজত্ব করতেন। অসুর হলেও, তিনি রাজ্যের প্রজাদের খুবই ভালোবাসতেন এবং সেসময় কেরালা ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। তার প্রতাপে স্বয়ং দেবতারা পর্যন্ত তটস্থ ছিলেন। তাই অন্য দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু বামন অবতার রূপে তাকে বধ করেন। বধকালে তিনি বিষ্ণুর কাছে অনুরোধ করেন, তিনি যেন প্রতিবছর একবার তার রাজ্যের প্রজাদের দেখে যেতে পারেন।
মহাবলীর অনুরোধ বিষ্ণু গ্রহণ করেন। কেরালাবাসীর বিশ্বাস, ওনাম উৎসবের মধ্য দিয়েই মহাবলী রাজ্যে আসেন। তাই তারা এটি পালন করে।
উৎসবপর্ব
১ম দিন: আত্তম
এই দিন সকালে স্থানীয় মন্দিরে দেবতার কাছে প্রসাদ নিবেদন করে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। প্রতিটি বাড়ির উঠোনে ফুলের বৃত্ত আঁকা হয়। একে বলে ‘পোক্কালম’। প্রতিদিন এই বৃত্তের সংখ্যা একটি করে বাড়তে থাকে। প্রথম দিন বৃত্তে হলুদ ফুলের প্রাধান্য বেশি থাকে।
২য় দিন: চিথিরা
এদিন প্রত্যেকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন করে। অনেক বাড়িঘর রং করে,অলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করেন। মহিলারা বাড়ির সদর দরজায় আলপনা আঁকেন।
৩য় দিন: চোধি
উৎসবের এদিন কেরালাবাসীর কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ থাকে। প্রত্যেকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার ও আত্নীয়স্বজনের জন্য উপহারসামগ্রী কিনে থাকেন।
৪র্থ দিন: ভিসাকাম
প্রতিটি বাড়িতেই দুপুরে মহাভোজের আয়োজন করা হয় দিনটিতে। স্থানীয় মালয়ালম ভাষায় একে সাদ্য বলা হয়। ভাত, ডাল, তিনরকমের কলা ভাঁজা, পাঁপড়, চার রকমের আচারসহ ২৬ পদের খাবারের আয়োজন থাকে এখানে।
৫ম দিন: আনিঝাম
এদিন পুরো রাজ্য জুড়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রায় ৪০ থেকে পঞ্চাশটি নৌকা এতে অংশ নেয়। নদীপাড়ে হাজারো মানুষের ঢল নামে এবং তারা তাদের এলাকার নৌকাকে সমর্থন করে।
৬ষ্ঠ দিন: থিরিকেটা
পোক্কালমের আকার বাড়ানো হয় এই দিনে। অনেকে নিজেদের আত্নীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরতে যান। আবার অনেকে নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে যান শ্রদ্ধা জানাতে।
৭ম দিন: মুলাম
এই দিন রাজ্যবাসী উৎসব আনন্দে মেতে উঠে। বিভিন্ন মন্দিরে প্রসাদের আয়োজন করা হয়। মেয়েরা কেরালার বিখ্যাত লোকনৃত্য কায়কোট্টিকলির আয়োজন করে।এছাড়াও পুলিকলি, থুম্বি থুল্লাল ও কথাকলির মতো স্থানীয় লোকনৃত্য পরিবেশিত হয়। এগুলোতে নারী পুরুষ উভয়ই অংশ নেয়।
৮ম দিন: পুরাদম
মহাবলী ও বামন দেবতার ছোট মূর্তি এনে পোক্কালমের মধ্যভাগে স্থাপন করা হয় এই দিন। এর মাধ্যমে মহাবলীকে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৯ম দিন: উথরাদম
দিনটি ওনাম সন্ধ্যা হিসাবে পালিত হয়। পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী মহাবলী উৎসবের শেষ চার দিন রাজ্য ঘুরে ঘুরে প্রজাদের আশীর্বাদ করেন। তাই দিনগুলোকে শুভ মনে করা হয়।
১০ম দিন: থিরুভুনাম
এই দিনে সকালে স্নান শেষে নতুন কাপড় পড়ে বাড়িগুলোতে আল্পনা আঁকা হয়। সরকারিভাবে পুরো রাজ্যে আলোকসজ্জা ও আতশবাজির ব্যবস্থা থাকে। শহরে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। এতে কেরালার ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্যের পরিবেশনা করা হয়।
কেরালার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ উৎসবটিতে অংশ নেয়। এটি কেরালার সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।