Bangla
a year ago

ব্রিটিশ রাজমুকট-রাজদন্ডের বিদেশি রত্ন!

Published :

Updated :

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয় তৃতীয় চার্লসকে। এরপর থেকেই ব্রিটিশ রাজ পরিবারের রাজমুকুট, রাজাদের সাজসজ্জা নিয়ে শুরু হয় নয়া আগ্রহের।

ক্রাউন জুয়েলস বা রাজমুকুটে থাকা মণিমুক্তোগুলো ব্রিটিশ রাজপরিবারের গচ্ছিত সম্পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। টাওয়ার অফ লন্ডনে রাজকীয় প্রহরীদের দিয়ে নজরদারিতে রাখা হয় এ সম্পদগুলোকে। তারা বিশ্বের নানা রাজ্যের রাজকীয় সম্পদশালা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। মূলত সারা বিশ্বশাসন করতে গিয়েই এগুলো সংগ্রহ করে তারা।

ক্রাউন জুয়েলস বা এই মণিমুক্তোগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ধাতু দিয়ে তৈরি হয়েছে। যেমন- সোনা, রুপা, হীরা, সোনার পাত ইত্যাদি। তবে পরিচিত ধাতু হওয়া সত্ত্বেও এগুলোর বিশেষ বিশেষ সংস্করণ ও ব্যবহারিক গুণ এদের আলাদা করেছে সাধারণ ধাতু থেকে। এ সকল মণিমুক্তসম্পন্ন রাজমুকুট রাজার মর্যাদা এবং রাজকীয় সম্মানের সাথে জড়িত। রাজমুকটে থাকা এসব মণিমুক্তোর বিচিত্র অবস্থান ও বিশেষত্ব যেমন রয়েছে তেমনি উপনিবেশবাদের কালো অধ্যায় জড়িত  থাকায় রয়েছে বিতর্ক।

কোহিনূর

কোহিনূর হীরা বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত হীরাগুলোর মধ্যে একটি। মধ্য দক্ষিণ ভারতের গোলকোন্ডা খনি থেকে উদ্ভূত এ হীরাটির বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে। বিজয়ের প্রতীক, কোহীনূরের হাতবদল হয়েছে প্রায় দশটি বার। হীরাটির পূর্ববর্তী মালিকদের মধ্যে ছিল, মুঘল সাম্রাজ্য, ইরানের শাহ সাম্রাজ্য, আফগানিস্তানের আমির এবং শিখ মহারাজারা। 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৪৯ সালে লাহোর চুক্তির শর্ত হিসাবে দশ বছর মেয়াদে মহারাজা দিলীপ সিংয়ের কাছ থেকে রত্নটি নিয়েছিল। এটি পাঞ্জাব, বর্তমান উত্তর ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তানে অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের সমাপ্তির শর্ত হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে রত্নটি রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে সমর্পণ করা হবে।

কোহিনূর হীরার ওজন ১০৫.৬ ক্যারেট। আগে এটি আরো বড় ছিল আকারে,  তবে এর উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং সমসাময়িক ইউরোপীয় ফ্যাশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে ১৮৫২ সালে একবার কাটা হয়। ১৯৩৭ সালে রানী এলিজাবেথ দ্য কুইন মাদারের মুকুটে কোহিনূর স্থাপন করা হয়।

কালিনান হীরা

৬ মে রাজ্যাভিষেকে রাজা চার্লসের মুকুটে শোভা পায় কালিনান হীরা। ১৯০৫ সালে বোয়ার যুদ্ধের পরে যখন প্রিটোরিয়া (দক্ষিণ আফ্রিকা) অঞ্চলটি ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল তখন এখানকার একটি খনিতে কালিনান হীরাটি পাওয়া যায়। এটি ঔপনিবেশিক সরকার কিনে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের কাছে উপস্থাপন করে এবং শেষ পর্যন্ত এ বহুপাথর সম্মিল্লিত হীরাটি আলাদা আলাদা নয়টি পাথরে কাটা হয়।

আফ্রিকার গ্রেট স্টার নামে পরিচিত বৃহত্তম এ পাথরটি রাজা পঞ্চম জর্জ কর্তৃক সার্বভৌম রাজদণ্ডে স্থাপন করা হয়েছিল। রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর এবং তার শেষকৃত্যের সময় তার কফিনে একই রাজদণ্ড ছিল, এ ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকা রত্নটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন করে আহ্বান জানিয়েছিল।

এই হীরার দ্বিতীয় বৃহত্তম পাথরটি ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউনে রয়েছে যা চার্লস এবারে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে ছাড়ার সময় পরিধান করেন। রানী এলিজাবেথের পরিহিত ব্রুচে তিনটি ছোট টুকরা ছিল, যথাক্রমে কলিনান তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম, বাকিগুলো নতুন রাণী ক্যামিলার মুকুটে স্থাপন করা হবে।

আইভোরি বা হাতির দাঁত

রাজ্যাভিষেকের সময় ক্যামিলাকে যে রাজদণ্ডটি ধরে রাখার জন্য দেওয়া হয় (কুইন কনসোর্টের রড উইথ ডোভ নামে পরিচিত) হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি, যা কিছু বিতর্ককে নতুন করে উষ্কে দিয়েছে। 

আইভোরি কোস্ট যখন হাতির দাঁতের বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিলো তখন সেখান থেকে এটি সংগ্রহ করা হয়। রয়্যাল কালেকশন ট্রাস্ট এই আইটেমটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেছে, "রাজদণ্ডটি তিনটি অংশে একটি হাতির দাঁত থেকে তৈরি করা হয়েছে, যা উপরের দিকে ঝুঁকে রয়েছে এবং জাতীয় প্রতীক (গোলাপ, বীণা এবং ফ্লেউর-ডি-লিস) যুক্ত একটি সোনার পাত দ্বারা সুরক্ষিত, যার উপরে একটি ক্রস রয়েছে এবং ক্রসের উপর ডানা ভাঁজ করা একটি কবুতর রয়েছে। এটি ১৬৮৫ সালে দ্বিতীয় জেমসের রানী কনসোর্ট মেরি অফ মোডেনার রাজ্যাভিষেকের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং তখন থেকে প্রতিটি রানীর মুকুটে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তবে সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে এবং রাজপরিবারের সদস্যরা হাতির দাঁতসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তার পর থেকে। ২০১৪ সালে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট প্রথম রিপোর্ট করে, প্রিন্স উইলিয়াম রাজপ্রাসাদ থেকে রয়্যাল কালেকশনের এ অনুষঙ্গ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

স্পষ্টতই তা ঘটেনি। তবে এসব উপনিবেশনের চিহ্ন নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। যেসকল দেশ থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে তারা অনেকেই এখন ফিরিয়ে নিতে চাইছেন তাদের অতীত ঐতহ্যের এ স্মৃতিফলকগুলোকে।

মোজাক্কির রিফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত।

[email protected]

 

Share this news