Published :
Updated :
যারা ঢাকা থেকে যেকোনো জায়গায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে চান, তাদের কাছে পছন্দের তালিকায় একদম শুরুর দিকে থাকে চাঁদপুর। চাঁদপুরের যেমন আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, তেমনি আছে মোহনার পাড়ে গিয়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ।
সেই সুযোগ কাজে লাগাতে এই লেখক তার বন্ধুদের সাথে একবার ঘুরে এসেছেন চাঁদপুর। মোহনার পাড়ে বসে থেকে ধীরে ধীরে আমরা রওনা দিলাম বড়কূল জমিদার বাড়ির দিকে।
চাঁদপুরে বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে; লুধুয়া জমিদার বাড়ি, রূপসা জমিদার বাড়ি, বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি, বলাখাল জমিদার বাড়ি, বড়কুল জমিদার বাড়ি, কড়ইতলী জমিদার বাড়ি, শোল্লা জমিদার বাড়ি, লোহাগড় জমিদার বাড়ি।
আমাদের গন্তব্য হাজীগঞ্জের বড়কূল জমিদার বাড়ি। বাসে চলে গেলাম হাজীগঞ্জ; বাসের নাম 'বোগদাদ'। ২২ কি.মি এর দূরত্ব অতিক্রম করে হাজীগঞ্জ গিয়ে একটা অটোরিক্সায় চলে গেলাম বড়কূল।
গ্রামের নাম নিয়ে নানা কথা চালু আছে। বড় বংশের (কুল) লোকজন বসতি গড়েছিল দক্ষিণ পাড়ে, তাই এমন নাম। আবার অনেকে বলেন, ডাকাতিয়া নদী খুব ডাকাবুকো ছিল, কূলও ছিল বড়।
ওখানে যাওয়ার পর প্রথমে বাইরে থেকে যেন আমরা কিছুই চিনতে পারছিলাম না। পরে আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে গিয়ে দেখা পেলাম বড় এক লোকনাথ মন্দিরের। আর তারই সামনে এক দিঘি। দিঘিতে পূজাও করা হয়।
মন্দির পেরিয়ে একটু এগোলেই জমিদার বাড়ি। একে ভাগিত্যা বাড়ি, অর্থাৎ, ভাগ্যবানের বাড়িও বলা হয়। বাড়ির মালিক জমিদার পদ্মলোচন সাহা। তিনি খুব শৌখিন ব্যক্তি ছিলেন যা তার বাড়ির বিভিন্ন অংশে তাকালেই বোঝা যায়। কথিত আছে যে, পুকুরে গোসল করতে গেলে জমিদারের মায়ের পায়ে কাদা লাগবে বলে পুকুরের তলদেশে তিনি পাঁকা করেছিলেন!
পুরো বাড়িটাই বেশ সুন্দর কারুকার্যে খচিত। মোঘল আমলের ছাপ একদম স্পষ্ট বাড়ির স্থাপত্যে। জমিদার বাড়িটিতে দক্ষিণমুখী একটি দ্বিতল ভবন, অতিথিশালা, মন্দির ও পুকুর রয়েছে। বাড়ির আয়তন প্রায় ৪ একর।
বাড়িতে এখন পদ্মলোচন সাহার চতুর্থ প্রজন্মের পরিবার থাকেন। তবে জমিদারিত্ব আর নেই। বাড়ির চারদিকে ঝোপঝাড় বেশি থাকায় একটু বেগ পেতে হলো ঘুরতে।
আর একটু এগোলেই সমাধিক্ষেত্র। কথিত আছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ পরিবারের সদস্যদের এ জায়গায় পুড়িয়ে মেরেছিল। পুকুর পেরিয়ে সামনের দিকে গেলে দূর্গামন্দির। তবে এখন আর পুজোর কাজে ব্যবহৃত হয়না এই মন্দির। জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী। কিন্তু কালের আবর্তনে নদীর জৌলুস যেন অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
বাড়ির আশেপাশের নিবাসীদের থেকে জানা যায়, এখানে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। অনেকেই আসেন শুটিং করতে, ট্রাভেল ভ্লগ বানাতে। পুরোটা ঘুরে দেখতে খুব বেশি সময় লাগলোনা। ঘুরে আমরা আবার বাসে করে চাঁদপুর আসলাম। তারপর লঞ্চে আবার ঢাকায় ফিরলাম।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লঞ্চে চাঁদপুর গিয়ে, তারপর বাসে হাজিগঞ্জ যেতে পারেন। তারপর সেখান থেকে বড়কূল জমিদারবাড়ি যেতে পারেন অটোরিকশা দিয়ে। অথবা হাজিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ফেরিঘাটে গিয়ে, নদী পার হয়েও যাওয়া যাবে বড়কুল। জমিদারবাড়ি দেখতে কোনো টাকা লাগে না।
aurthynobonita@gmail.com