Published :
Updated :
ব্যাঙ নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে অসংখ্য উপকথা। যেমন ধরুন- ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয় কিংবা অনাবৃষ্টির সময় ব্যাঙের বিয়ে দিলে সৃষ্টিকর্তা প্রসন্ন হয়ে পৃথিবীতে বৃষ্টি দেন। যদিও এখনো পর্যন্ত এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যাঙের ডাকে বৃষ্টি হোক বা না হোক, শ্রাবণের অঝোর ধারার পরে গ্রামের ডোবা-নালা কিংবা ফসলি জমি থেকে ব্যাঙের যে ডাক শোনা যায় তাতে মন কিছুটা সময়ের জন্য হলেও উদাস হয়। আর তাই তো কবিতা, গান, কিংবা লোকসাহিত্যেও স্থান করে নিয়েছে ব্যাঙের সেই মৌসুমী গান।
জৈষ্ঠ্যের তীব্র তাপদাহের পরে প্রকৃতি যখন নিজেই ক্লান্ত হয়ে যায়, সেসময় দেখা মিলে আষাঢ়ের সেই বহুল প্রতীক্ষিত বৃষ্টি। সেসময় প্রকৃতিতে যখন যে যার মতো করে বর্ষাবরণে ব্যস্ত, ব্যাঙেরাও কিন্তু এ আয়োজনে কোনো অংশে কম যায় না।
মানুষের মন যখন শ্রাবণের অঝোর ধারায় কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে, সেসময় ব্যাঙের দল তার বিচিত্র ঢঙ্গে ডাকাডাকির মাধ্যমে জানান দেয় তারাও এ দিনে শ্রাবণের বর্ষণে নিজেকে তৃপ্ত করতে প্রস্তুত।
এখন আপনি ভাবতে পারেন ব্যাঙেরা কি শুধু বৃষ্টির স্পর্শ পেয়েই ডাকাডাকি করে নাকি এর নেপথ্যে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো রহস্য? সত্যি বলতে শুধু খুশির জন্য নয়, বরং নারী সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতেই এসময় পুরুষ ব্যাঙ এভাবে ডাকাডাকি করে।
প্রকৃতিগত কারণে মানুষের মতো প্রাণীজগতের সকল জীব বছরের যে কোনো সময় প্রজনন ঘটাতে পারে না। বরং একটি নির্দিষ্ট মৌসুমকেই তারা তাদের প্রজননকাল হিসেবে বেছে নেয় এবং সে সময় তারা নানা ভঙ্গিতে তার সঙ্গীকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। আর ব্যাঙেদের জন্য এ সময়টি হলো বর্ষাকাল।
বর্ষার স্পর্শ পেয়ে প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি ব্যাঙেরা বুঝতে পারে তাদের সঙ্গী খোঁজ করার সময় এসে গেছে। আর তাই তো বর্ষার প্রথম প্রহরেই কালক্ষেপণ না করে নিজের জন্য সঙ্গী খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে যায় পুরুষ ব্যাঙ।
আর মনের মতো সঙ্গীকে খুঁজে পেতে নিজের সে চিরচেনা সুরে ডাকাডাকি করে পুরুষ ব্যাঙ। আর এতে কোনো নারী সঙ্গী যদি তার ডাকে আকৃষ্ট হয়, তাহলে সে মৌসুমে তাকেই বংশ বিস্তারের জন্য সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় পুরুষ ব্যাঙ। তবে কম হলেও বর্ষাকালে নারী ব্যাঙেরাও ডাকাডাকি করে।
ব্যাঙ উভচর প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও এটি স্থলে ডিম পাড়তে পারে না। কারণ ব্যাঙের ডিমের চারপাশে এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে যা পানির সংস্পর্শ ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। আর বর্ষাকালে যেহেতু ডোবা-নালা কিংবা ফসলি জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে তাই এ মৌসুমটিকেই প্রজননের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করে ব্যাঙেরা।
তবে ডিম দেওয়ার পরেই শিশু ব্যাঙের জন্ম হয়ে যায় না। বরং এক্ষেত্রে আরো কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে তবেই পরিপূর্ণ ব্যাঙে পরিণত হতে হয়। যেমন- ডিম দেওয়ার কিছুদিন পর ডিম থেকে ব্যাঙাচি বের হয় যা কিছুটা লেজযুক্ত হয়।
অনেকে এদের পোনামাছ বলে ভুল করে থাকেন। ব্যাঙাচি কিছুদিন পানিতে ঘুরে বেড়ায় এবং পানিতে বিদ্যমান বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ফের পরিবর্তন আসে এর দেহের গড়নে। তবে সময়ের পরিক্রমায় ব্যাঙাচি দেহের এই লেজ বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং একটি পরিপূর্ণ ব্যাঙের জন্ম হয়। আর এ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় পানিতে যার জন্য বর্ষাকালই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আর এসব বিষয়কে সামনে রেখেই মূলত বর্ষাকালে পুরুষ ব্যাঙ ডাকাডাকি করে।