Published :
Updated :
উনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকা। গৃহযুদ্ধ তখন শেষ হয়েছে। কিন্তু সংঘাত থামেনি। এখন ওখানে মাঝেমাঝেই বেজে উঠছে সংঘাতের দামামা।
এই গৃহযুদ্ধের রক্তক্ষয়ের পরেই অ্যারিজোনার অনেক গভীরের ধূলি ধূসরিত বিরান ভূমি রোডস-কে শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজে হাত দিলেন কর্নেল এবারডিন এ ফিনিগান। যখন এত রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে শহরটা গড়ে তুললেন, তখন ভেবেছিলেন এবারে একটু স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারবেন। কিন্তু তা আর হলো না। রোডস-এ একদিন হানা দিল দুর্বৃত্তের দল। এই বহিরাগত শত্রুরা শহরের স্বাধীনতা হরণ করতে চাইলো। টাকা আর বন্দুকের জোরে কিনে নিতে শুরু করল শহরের কিছু কিছু মানুষকেও। কিন্তু যে শহরকে সন্তানের মতো করে গড়ে তুলেছেন ফিনিগান, সেই শহরকে কি তিনি এভাবে শত্রুর দখলে চলে যেতে দিতে পারেন? -না, তিনি পারেন না।
আর তাই বিশ্বস্ত কিছু সঙ্গীকে নিয়ে জীবন বাজি রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার সংকল্প করলেন তিনি। তিনি কি পারবেন রোডসকে মুক্ত করতে? এ নিয়েই ওয়েস্টার্নটির কাহিনী।
ফাহাদ আল আবদুল্লাহ-র লেখা ৬০৯ পৃষ্ঠার এই ওয়েস্টার্নটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলেবরের ওয়েস্টার্ন। কাহিনীটিও সম্পূর্ণ মৌলিক, যা অভিনব। ওয়েস্টার্নটির শব্দসংখ্যা এক লাখেরও বেশি। প্রকাশ করেছে বেঙ্গলবুকস।
ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল যখন নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এক হয়ে যায়, তখন রোডস শহরের বুকে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। সামান্য একটু জমির লোভও মানুষকে কতটা লোভী আর অন্ধ করে তুলতে পারে এখানে রয়েছে তার খতিয়ান।
ক্যাপ্টেন ফিনিগানকে এক্ষেত্রে সহায়তা করেন শার্প শ্যুটার ডয়েল ব্রাদার্স, ঘরছাড়া নাভাহো যোদ্ধা সোল-লেকস, বাবা হারানো কৃষ্ণাঙ্গ স্যাম ডেভিস। এদের সহায়তায় কর্নেল শত্রুদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ান।
বিশাল কলেবরের এই বইটি তাই অ্যাকশনে পরিপূর্ণ। কাচ্চিতে থাকা তুলতুলে নরম মাংসের মতোই এই বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে দুর্দান্ত সব অ্যাকশন সিকোয়েন্স, যা পাঠকরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবেন।
আর এতসব দ্বন্দ্ব আর সংঘাতের দামামার ভেতর তাকলামাকানে থাকা ওয়েসিসের মতোই কাহিনীটিতে এসেছে দুর্বার প্রেম। এক পলকের একটু দেখা থেকেই সূচনা হয়েছে সে প্রেমের। এর বাইরে আছে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নতুন করে ফিরে পাওয়া, বহুদিনের পরিচিত মানুষকে নতুন করে চেনা।
ওয়েস্টার্ন গল্পের আকর্ষক ফর্মুলাগুলোর সবই আছে এখানে। গান ফাইট, র্যাঞ্চ ওয়ার, শিকার, ক্যাম্পিং, ট্রেন ফাইট, ট্রেইল অনুসরণ, স্ট্যাম্পিড, ডুয়েল লড়াই- সবকিছু মিলে একদম জমজমাট এ কাহিনী।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইতিহাসের নিখুঁত বর্ণনা। গৃহযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী আমেরিকার মানুষের জীবনযাত্রা লেখক তুলে এনেছেন অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে। প্রচুর চরিত্র থাকলেও লেখক তাদের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত সময় নিয়েছেন। চরিত্রগুলোর মাঝে তৈরি করেছেন ডায়লগের রিদম। অর্থাৎ, একটি চরিত্র ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভেতর শক্তিশালী ধারালো সংলাপের খেলা বইটিকে উপভোগ্য করেছে ও সিনেম্যাটিক ফ্লেভার দিয়েছে।
আর বইটির ক্লাইম্যাক্সে অনবদ্য এক শো ডাউন ও লড়াইয়ের ব্যবস্থা করেছেন লেখক। এ যেন সার্জিও লিওনের কোনো সিনেমা! বাংলা ভাষায় মৌলিক একটি ওয়েস্টার্নে এমন সাবলীলতা ও দুর্দান্ত গতিময়তা বিস্ময়কর।
তেমনি ওয়েস্টার্নটি আমাদের শেখায় দেশপ্রেম। সেখায় স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে; রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের পতাকাকে, স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে।
তাই 'বুলেট কিংবা ভালোবাসায়' সবকিছু ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে এক অসামান্য সংগ্রাম, ত্যাগ, বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার গল্প- যা মানুষকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করে যেতে সক্ষম।
mahmudnewaz939@gmail.com