Bangla
2 days ago

ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটে সাময়িক স্বস্তি

ব্যাংক খাতে ১৪ দিন মেয়াদি রেপো প্রত্যাহার স্থগিত

Published :

Updated :

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট সাময়িকভাবে কমাতে ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কমপক্ষে তিন মাসের জন্য পিছিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

এর আগে, আইএমএফ-এর ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি জুলাই মাস থেকে ধাপে ধাপে এই ১৪ দিন মেয়াদি তারল্য সরবরাহের উপকরণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, এতে ব্যাংকগুলো অতিরিক্তভাবে এই সুবিধার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল।

তবে, ইন্ট্রাডে লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইএলএফ) চালুর অবকাঠামো এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। কারণ, এই সুবিধা না থাকলে ব্যাংকগুলোর তহবিল মেলানো নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারতো।

ব্যাংকাররা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, শুধুমাত্র ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধা চালু রেখে আইএলএফ ছাড়া চললে ব্যাংকিং খাতের জন্য তা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতো। তবে আইএলএফ চালু হলে ব্যাংকগুলো ১৪ দিন মেয়াদি রেপো কমলেও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সামাল দিতে পারবে।

আইএলএফ এমন একটি সুবিধা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্বল্পমেয়াদে ব্যাংকগুলোকে দেবে, যার বিপরীতে ব্যাংকগুলো জামানত দেবে।

আইএমএফ-এর সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধুমাত্র ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এতে ব্যাংকগুলোর লেনদেন নিষ্পত্তি বা ফান্ড সেটেলমেন্টে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারতো।

এই ব্যবস্থায়, মেয়াদপূর্তির দিন সকালে ব্যাংকের হিসাব থেকে ধার নেওয়া রেপোর টাকা কেটে নেওয়ার পর যেসব ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দেবে, তাদের অ্যাকাউন্টে আইএলএফ-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করা হবে। আর বিকেলে যখন ব্যাংকের নতুন রেপো আবেদন মঞ্জুর হবে, তখন সেই আইএলএফ-এর টাকা পুনরায় কেটে নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, পুরো আইএলএফ ব্যবস্থা চালু করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। এজন্য কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) প্রস্তুত করতে হবে এবং তা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), আর্থিক বাজার অবকাঠামো ও ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, “পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ন্যূনতম তিন মাস লাগবে বলেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ” 

ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ট্রেজারি এবং ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিভাগের প্রধান মো. শাহীন ইকবাল এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রেপোর অর্থ সকালে কেটে নেওয়া হয়, আবার বিকেলে রেপো দেওয়া হয়। এই সময়ে ব্যাংকগুলো ফান্ড সেটেলমেন্টে সমস্যায় পড়ে। তবে আইএলএফ চালু হলে, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই সমস্যা এড়ানো যাবে এবং ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা দক্ষ হবে।

তিনি আরও বলেন, এই সুবিধা ব্যাংকগুলোকে শুধু স্বস্তিই দেবে না, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনাও সহজ করবে।

এক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, ব্যাংকগুলো সাধারণত তাদের নগদ সংরক্ষণ অনুপাত (সিআরআর) পূরণের জন্য এই স্বল্পমেয়াদি রেপো সুবিধা ব্যবহার করে। তবে বাস্তবে ব্যাংকগুলো এই সুবিধা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা করছে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় আরো বেড়েছে।

তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো বর্তমানে রেপো সুবিধার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধা বন্ধ হলে এই ঝুঁকিমুক্ত মুনাফার উপর নির্ভরতা কমাতে হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে ব্যাংকগুলো রেপো সুবিধার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশই ছিল ১৪ দিন মেয়াদি রেপো। বাকি ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ৭ দিন মেয়াদি এবং ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা ওভারনাইট রেপো ছিল।

jubairfe1980@gmail.com

Share this news