Published :
Updated :
ব্যুৎপত্তিগতভাবে চা শব্দটি চীনা শব্দ হলেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই পানীয়টির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সকালের এক কাপ চা যেমন শরীরকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনি অফিস কিংবা কাজের ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক না দিলে যেন কাজে মনই বসতে চায় না। এছাড়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা পাড়ার দোকানে গল্প জমানোর ক্ষেত্রেও এই পানীয়টির জুড়ি নেই।
বর্তমানে হরেক রকম চা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। তবে এসব চায়ের মধ্যে দুধ চা এবং রঙ চা সর্বাধিক জনপ্রিয়। সকাল কিংবা বিকেলের নাস্তায় চায়ের সাথে বিস্কুট কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার রেওয়াজ এদেশে বেশ পুরোনো।
তবে আপনি জানলে অবাক হবেন যে, এসব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার আছে যা চায়ের সাথে খেলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা এসে বাসা বাঁধে। তাই চায়ের সাথে কোন খাবারগুলো খাওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকা উচিত সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে এবারের লেখায়।
আয়রন জাতীয় খাবার
আয়রনযুক্ত খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি হলেও চায়ের সাথে কিংবা চা খাওয়ার পরপরই এটি খেলে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সবুজ শাকসবজি ও শস্যদানায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও মাথায় রাখতে হবে এই জাতীয় খাবারগুলো যাতে চায়ের সঙ্গী না হয়। কারণ চায়ে থাকে ট্যানিন ও অক্সালেট যা দেহে আয়রন শোষণে বাধা প্রদান করে।
বেসন দিয়ে তৈরি খাবার
আমাদের দেশে বেসন দিয়ে তৈরি ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বেশ জনপ্রিয়। বাড়ি কিংবা হোটেল- সব জায়গাতেই এই খাবারের কদর থাকে বেশি। চায়ের সাথে এসব ভাজাপোড়া খাবার জমেও দারুণ। তবে মাথায় রাখতে হবে, চায়ের সাথে এই ধরনের খাবার খেলে পেটে ব্যাথা ও কৌষ্ঠ্যকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। তবে শুধু চায়ের সাথেই নয়, বরং অন্যান্য সময়েও এসব ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
লেবুর রস
লেবুর রস নিঃসন্দেহে শরীরের জন্য খুবই উপকারি৷ কারণ এটি দেহের অতিরিক্ত মেদ হ্রাস করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে মাথায় রাখতে হবে চা পাতার সাথে লেবুর রস মেশালে তা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে শুধু লেবু দিয়ে তৈরি চা খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
ঠান্ডা জাতীয় খাবার
চা খাওয়ার পরপরই ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে করে হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই চা খাওয়ার পরপরই যাদের ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণের অভ্যাস আছে তাদের অবশ্যই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
বাদাম
বাদাম নানাবিধ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। দেহের বিকাশে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। তবে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এর একটি হলো চায়ের সাথে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটি ত্যাগ করতে হবে। কারণ এতে করে বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।
মিষ্টি জাতীয় খাবার
চায়ের সঙ্গে মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। কেক, বিস্কুট, মিষ্টি, পিঠা ইত্যাদি খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে চায়ের সঙ্গে এসব খাবার গ্রহণ করলে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়।
টক জাতীয় ফল
ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হিসেবে টক জাতীয় ফল বেশ প্রসিদ্ধ। নিয়মিত এই ধরনের ফল খেলে তা শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে মাথায় রাখতে হবে, চায়ের সাথে এই ধরনের ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ এতে করে হজমে সমস্যা হতে পারে।
স্টার্চ জাতীয় খাবার
স্টার্চ জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে পাউরুটি, পাস্তা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং পিৎজার মতো খাবারগুলো। এসব খাবার রঙ চায়ের সাথে খেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে দুধ চায়ের সাথে এসব খাবার পরিহার করাই শ্রেয়। কারণ তা না হলে অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে।
চা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি আবেগের নাম। দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এটি। কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ না করলে এই পানীয়টি আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে গলার কাঁটা। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চা খাওয়ার প্রতি সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত। এতে করে যেমন শরীর উৎফুল্ল থাকবে, ঠিক তেমনি কিছু রোগের হাত থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।