Published :
Updated :
চীনের শানজি প্রদেশের জিয়ান শহরে রয়েছে মুসলিম ও চীনা স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত অপূর্ব সুন্দর একটি মসজিদ। শহরটিতে প্রায় বিশ হাজার মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাটি পরিচিত জিয়ান মুসলিম কোয়ার্টার নামে।
এখানকার ৩০ হুয়াজু লেন এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি ‘দ্যা গ্রেট জিয়ান মসজিদ’ বা হুয়াজু মসজিদ নামে পরিচিত। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো মসজিদটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত করে।
চীনে ট্যাং রাজবংশের সময়কালে ব্যবসায় ও ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব মুসলিমরা যাতায়াত করত। এদের অনেকেই চীনা মূল জনগোষ্ঠী হান নারীদের বিয়ে করে এখানেই থেকে যায়। মূলত এদের কথা ভেবেই ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জুয়ানরং-এর শাসনামলের প্রথম বছর জিয়ান মসজিদ নির্মিত হয়।
এরপর সং সাম্রাজ্য, জুয়ান সাম্রাজ্য, মিং সাম্রাজ্য ও কিং সাম্রাজ্যের সময়ে এর সংস্কার করা হয়। প্রতিবারই সংস্কারের ফলে মসজিদের জায়গা বর্ধিত হতে থাকে এবং এর কারুকার্যেও বিভিন্ন শাসনামলের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
প্রায় ১২,০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত বিস্তৃত মসজিদটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত। এর চতুর্থ অংশে রয়েছে মূল প্রার্থনাকক্ষ। এটি পাঁচ দরজাবিশিষ্ট ছয়টি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে ১,০০০ মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারবেন।
মসজিদের মিহরাবটি দামি কাঠের নকশা ও পাথর দিয়ে নির্মিত। এতে ইসলামি ক্যালিগ্রাফির অপূর্ব নিদর্শন ফুটে উঠেছে।
এর কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি।গম্বুজ না থাকলেও ছাদের কেন্দ্রভাগের নকশা মন কাড়ে সবার। মূল কমপ্লেক্স সহ প্রতিটি ভবনের ছাদে রয়েছে নকশাখোচিত কাঠের সারিবদ্ধ ফ্রেম।এর উপরেই বসানো হয়েছে টালি।
মসজিদের পাঁচ স্তরের প্রতিটিতেই রয়েছে কারুকার্যখোচিত দরজা। প্রথম অংশে রয়েছে রাজবংশের একটি বড় স্মারক গেট। দ্বিতীয় অংশে দুটি স্টিলের পাতে রাজবংশের ক্যালিগ্রাফ করেছেন মু ফুঁ ও জন ডং নামক দুই শিল্পী। চতুর্থ অংশটি ফিনিক্স প্যাভিলিয়নে অবস্থিত।
প্রধান নামাজকক্ষের পাশে রয়েছে মুনগেট। এর অভ্যন্তরে রয়েছে দুটি মানবনির্মিত পাহাড় যেখানে দাঁড়িয়ে রাতে চাঁদ দেখা যায়।
পাথরের নির্মিত মসজিদটি শুধু চীনা ও ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয়ের জন্যই অনন্য নয়, পাশাপাশি এর প্রতিটি অংশের ভেতরকার ফুলের বাগান ও জলের ফোয়ারা এর সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুধু চীন নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসে এই জিয়ান মসজিদে। মসজিদের আশেপাশে রয়েছে চীনা মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত বাহারি খাবারের দোকান। এগুলোতে চীনা ঐতিহ্যবাহী হালাল মুসলিম খাবার পরিবেশন করা হয়। পর্যটকদের কাছে এগুলোরও সুখ্যাতি রয়েছে।
Aurnobprashad456@gmail.com