Bangla
a year ago

চিমস বেঁচে থাকবে হাসি, ঠাট্টা, মিম আর ভালোবাসায়

সেই ভাইরাল ছবি যা দিয়েই পরে চিমস মিম বানানো শুরু হয়
সেই ভাইরাল ছবি যা দিয়েই পরে চিমস মিম বানানো শুরু হয়

Published :

Updated :

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেট দুনিয়ায় ভেসে বেড়িয়েছে দুটো শিবা ইনু জাতের কুকুর; মিমের মাধ্যমে সবাইকে হাসিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে এরা। একজন ডজ (Doge), অন্যজন চিমস (Cheems)।

চিমসকে কেন্দ্র করে তো একটি ভাষাই গড়ে উঠেছে। মজার ছলে অনেকেই বিভিন্ন শব্দে ইংরেজি অক্ষর ‘M’ যুক্ত করে চিমস ভাষা তৈরি করেছে। যে চিমস মিমের মাধ্যমে এতদিন ধরে সবাইকে হাসাচ্ছিল সেই চিমসই ১২ বছর বয়সে গত ১৮ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে।

এই সাড়া জাগানো শিবা ইনু জাতের কুকুরটির আসল নাম কিন্তু চিমস নয়, তার আসল নাম হলো বল্টজ (Balltze)। বল বল নামেও তাকে তার মালিক ডাকতেন। বল্টজ হংকংয়ে তার মালিক ক্যাথির সাথে থাকত। ২০১১ সালে বল্টজ জন্ম নেয়। জন্মের এক বছর পরেই ক্যাথি বল্টজকে পালতে শুরু করেন।

২০১৫ সালে বল্টজের অভিষেক ঘটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ক্যাথি তখন শুধু বল্টজের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে ইন্সটাগ্রামে আপলোড করতেন। কিন্তু কে ভেবেছিল যে একদিন এই বল্টজের ছবি দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছেয়ে যাবে!

২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে ক্যাথি অন্যান্য দিনের মতোই বল্টজের একটি ছবি ইন্সটাগ্রামে আপলোড করেন। বল্টজের সেই মুচকি হাসির ছবি রাতারাতি সবার নজর কাড়ে।

২০১৯ সালের ৮ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটে আর/ডজলোর (R/Dogelore) নামের একটি গ্রুপে স্পাইসি_মিম_বয় (Spicy_Meme_Boi) নামক একজন ব্যবহারকারী প্রথমবার বল্টজের সেই ভাইরাল ছবিটি দিয়ে মিম আপলোড করেন। সেই মিমে বল্টজকে দেখানো হয় চিজ বার্গার প্রেমী হিসেবে। সেখানে বল্টজ চিজ বার্গারকে বলছে ‘চিমসবার্গার’। স্বল্প সময়ে মিমটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর একই বছরের ৮ই আগস্ট অকটাট্র্যাকিং (Octatracking) নামের আরেক রেডিট ব্যবহারকারী আর/ডজলোর গ্রুপে বল্টজের সেই ছবিটি নিয়ে আরেকটি মিম আপলোড দিয়ে মিম দুনিয়াতে চিমসের উপস্থিতির ব্যাপারে ভালোমতো জানান দেন। তিনি তার মিমে বলেন, চিমস এমন একটি ডজ যে শুধুই ‘চিমসবার্গার’ বলে। আর এভাবেই বল্টজ হয়ে গেল চিমস।

ধীরে ধীরে চিমসকে নিয়ে মিমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রেডিট ছাড়িয়ে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে চিমসের মিম সবার চোখে পড়তে থাকে। চিমস, ডজ ও মিমে ব্যবহৃত অন্যান্য কুকুরদেরকে নিয়ে ছবি ও বিভিন্ন গল্প উপস্থাপনের মাধ্যমে ভিডিও আকারেও মিম বানানো হয়েছে।

পরে চিমসের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, চিমস এমন একটি হাস্যকর চরিত্র যে কথা বলার সময় একেকটি শব্দের সাথে অতিরিক্ত ইংরেজি অক্ষর ‘M’ যুক্ত করে কথা বলে এবং সে অন্য কুকুরদের মতো শক্তিশালী নয়। বেশিরভাগ মিমেই সাধারণত চিমসকে দেখানো হয়েছে দুঃখী, দুর্বল ও শান্ত কুকুর হিসেবে।

ডজ ও চিমসকে নিয়ে মিম 

২০২০ সালে, বিশেষ করে করোনার সময়ে চিমসের মিম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে ওঠে। চিমসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য মিম গ্রুপ ও পেজ সেসময়ে ফেসবুকে খোলা হয়েছে। অনেক বাস্তবসম্মত বিষয়বস্তু মজার ছলে চিমস মিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারায় সময়ের সাথে চিমস মিমগুলো ইন্টারনেটে ঝড় তুলেছে।

চিমসকে যে শুধু তার নিজের চরিত্রের মধ্যেই সবসময় সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তা নয়। মিমগুলোতে অনেক সময় চিমসকে হরেক রকম বেশভূষায় সজ্জিত করে আবার কখনো ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে চিমসের কথাবার্তা, কাজকর্ম ও অদ্ভুত অভিব্যক্তি বেশ হাস্যরসাত্মকভাবে প্রাসঙ্গিকতার সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাংলা চিমস মিম 

বিশ্বব্যাপী চিমসের তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে চিমসের ছবি যুক্ত টি-শার্ট, হুডি, মোজা, ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের স্যুভেনির কেনাবেচার জন্য একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। cheems-balltze.com ওয়েবসাইটে চিমসের সকল পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

বাস্তব জীবনে বাল্টজ সুন্দর, নাদুসনুদুস, হাসিখুশি ও বন্ধুসুলভ একটি কুকুর যে তার সৌন্দর্য দিয়ে আজ অগণিত মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে বাল্টজ যতই হাসিখুশি থাকুক না কেন তার শরীরে বাসা বেঁধেছিল কঠিন রোগ ।

বাল্টজ আক্রান্ত হয়েছিল লিউকোমিয়ায়। সাধারণত বড় আকারের কুকুরদের এই ক্যান্সার মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। চিমসও বেশ অনেকটা সময় ধরেই ক্যান্সারে ধুঁকছিল। সেই সাথে তার ফুসফুসে বারবার অনেক বেশি ফ্লুইড জমা হচ্ছিল।

বাল্টজকে বাঁচানোর জন্য থোরাসেন্টিসিস সার্জারি (ফুসফুস থেকে ফ্লুইড বের করার চিকিৎসা প্রক্রিয়া) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি। থোরাসেন্টিসিস সার্জারির পরে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় চিমসের। গত ১৯ আগস্ট বাল্টজের ইনস্টাগ্রাম পেজে ক্যাথি পোস্ট করে সবাইকে চিমসের চলে যাওয়ার কথা জানান।

চিরনিদ্রায় শায়িত চিমস

বাল্টজ ওরফে চিমসের মৃত্যুতে ইন্টারনেটে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়াই তো আসল প্রস্থান নয়। চিমস চলে গেলেও তার ভক্তদের মনে সে চিরদিনই থেকে যাবে।

[email protected] 

Share this news