Bangla
2 days ago

চলতি হিসাব ঘাটতি কমে বৈদেশিক লেনদেনের উন্নতি

Published :

Updated :

বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্টস বা বিওপি) পরিস্থিতি মে মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে। মূলত চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে যাওয়ায় এই উন্নতি দেখা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মে মাসে মোট বিওপি ঘাটতি দাঁড়ায় ১ দশমিক ১৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫ দশমিক ৮৮৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পাঁচ গুণেরও বেশি কমেছে ঘাটতির পরিমাণ।

ব্যালান্স অব পেমেন্টস বা বিওপি হলো দেশের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ হিসাব। সাধারণত কোনো দেশের রপ্তানি আয় এবং বৈদেশিক আয়ের পরিমাণ আমদানি ও অন্যান্য বৈদেশিক দায়ের চেয়ে বেশি হলে বিওপি উদ্বৃত্ত হয়। বিপরীতে বেশি খরচ হলে ঘাটতি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ( আইএমএফ) থেকে ঋণ ছাড়সহ অন্যান্য বৈদেশিক তহবিল প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং বিওপি পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। তারা আশা করছেন, জুন মাসের হিসাব আরও ভালো হবে, কারণ আইএমএফ এবং অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণের অতিরিক্ত কিস্তির অর্থ তখন হিসাবভুক্ত হবে।

বিওপি তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত: চলতি হিসাব (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট), মূলধন হিসাব (ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট) এবং আর্থিক হিসাব (ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট)।

মে মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি (সিএডি) ব্যাপকভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ১১৬ বিলিয়ন ডলার। এটিকে বড় ধরনের টার্নঅ্যারাউন্ড হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

একই সময়ে দেশের মূলধন হিসাবের উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ৩২০ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ কম। অন্যদিকে আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত ৮৭ শতাংশ কমে ২৬৬ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিওপি -এর সামগ্রিক উন্নতির মূল কারণ চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে আসা।

বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রেমিটেন্স ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানি আয়ের পুনরুদ্ধার এই বড় ঘাটতি কমে আসার প্রধান কারণ।”

এই সময় রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় ২৯ শতাংশ এবং রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।

আর্থিক হিসাব দুর্বল হয়ে পড়ার বিষয়ে ড. হোসেন বলেন, মে মাসে বাণিজ্যিক ঋণ সংক্রান্ত অর্থপ্রবাহ বেড়ে গেছে, যা রপ্তানি আয়ের অর্থ দেশে পাঠানোর গতি কিছুটা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, নেট বৈদেশিক সহায়তাও কমেছে, যার ফলে আর্থিক হিসাব দুর্বল হয়েছে।

তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুন মাসের হিসাব ভালো আসবে, কারণ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার বাজেট সহায়তার অর্থ তখন ছাড় হবে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, “বিওপি -এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ম্যাক্রোইকোনমিক স্থিতিশীলতার দিকে প্রত্যাবর্তনের বার্তা দেয়।”

তিনি বলেন, “চলতি হিসাব ও সামগ্রিক বিওপি -এর এই উন্নতি খুবই ইতিবাচক এবং শক্তিশালী।”

তার মতে, এখন বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আমদানি সংকোচন (ইমপোর্ট কম্প্রেশন) কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে যেতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, এই ধারা সকল স্টেকহোল্ডার, বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তাদের বৈদেশিক অংশীদারদের জন্য সুসংবাদ। পাশাপাশি দেশের ক্রেডিট প্রোফাইল ও আন্তর্জাতিক রেটিং-ও উন্নত করতে পারে।

jasimharoon@yahoo.com

 

Share this news