Published :
Updated :
৩৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রথম তেল পরিবহন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই এটি চালু হওয়ার কথা। এটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) সময় ও খরচ সাশ্রয়, সিস্টেম লস কমানো এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
গত জুনে পাইপলাইনের প্রি-ফাইনাল কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে এবং বিপিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তেল পরিবহন শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
পুরো পাইপলাইন তিন স্তরের এক্সট্রুডেড পলিইথিলিন আবরণে সুরক্ষিত, যা ২২টি নদী ও খালের তলদেশ অতিক্রম করেছে। পথে রয়েছে ৯টি স্টেশন এবং কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় একটি নতুন জ্বালানি ডিপো।
বিপিসি কর্মকর্তাদের মতে, বছরে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহনের সক্ষমতা সম্পন্ন এ পাইপলাইন বছরে ১৫০ কোটি টাকা পরিবহন খরচ সাশ্রয় করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করবে। পরে পদ্মা অয়েল কোম্পানি বিপিসির কাছে হস্তান্তর করবে, আর বিপিসি এটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান পেট্রোলিয়াম ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (পিটিসি পিএলসি) হাতে তুলে দেবে।
চট্টগ্রাম-ঢাকা তেল পাইপলাইন প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১৫ সালে, ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে। তবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি ২,৮৬১ কোটি টাকা প্রাথমিক বাজেটে অনুমোদন দেয়। এতে বছরে ২৭-৩০ লাখ টন জ্বালানি পরিবহনের লক্ষ্য ধরা হয়, যা পরবর্তীতে ৫০ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল।
বিপিসি একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে নানা কারণে বিলম্ব ও ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ৩,১৭২ কোটি টাকা। পরে আবার সংশোধিত হয়ে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৬০০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করে।
এ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিবছর ২৭ লাখ টনের বেশি ডিজেল (হাই-স্পিড ডিজেল–এইচএসডি) পরিবহন করা হবে, যা দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোট ২৪১.২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন গোপতাখাল (পতেঙ্গা) থেকে গোধনাইল (নারায়ণগঞ্জ) পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে, যা ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে গেছে।
বিপিসি প্রতিবছর প্রায় ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল এবং ৪২ লাখ টন পরিশোধিত তেল আমদানি করে। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন তেলের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র ও বেসরকারি ফ্র্যাকশানেশন প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৩ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ হয়। বর্তমানে গোধনাইল ও ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) থেকে নৌপথে তেল পাঠানো হয় দেশের উত্তরাঞ্চলের ডিপোগুলোতে, যেমন—বাঘাবাড়ি (পাবনা), চিলমারি (কুড়িগ্রাম) এবং চাচনা বাজার (সুনামগঞ্জ)।