নতুন রেকর্ডের পথে বাংলাদেশ
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই ২৩ দশমিক ৭৫১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহ
Published :
Updated :
চলতি অর্থবছরের ১০ মাস শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশে প্রায় ২৩ দশমিক ৭৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জমাকৃত রেমিট্যান্সের অঙ্ক অর্থবছর ২০২০-২১ এ পাওয়া ২৪ দশমিক ৭৭৭ বিলিয়ন ডলারের ৯৬ শতাংশ।
পাশাপাশি মাসিক রেমিট্যান্স আয়ও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
এ পর্যন্ত দেশে মোট ২৩ দশমিক ৭৫১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং এখন নতুন রেকর্ড গড়তে আর মাত্র ১ দশমিক শূণ্য ৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের (মে) শুরুতেই এ পরিমাণ অর্থ অর্জিত হবে।
সরকারিভাবে জানা তথ্যমতে, অর্থবছর ২০২০-২১ থেকে শুরু করে দেশের ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে যথাক্রমে ২১ দশমিক শূণ্য ৩ বিলিয়ন, ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন এবং ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। পাশাপাশি, জুলাই-আগস্ট মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে রেমিট্যান্সের অবৈধ (হুন্ডি) চ্যানেলগুলোর কার্যক্রম কঠোর নজরদারির আওতায় চলে আসায় সেগুলোর কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এ কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন।
ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘‘অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, আগে কখনও এত দ্রুত রেমিট্যান্স আসতে দেখা যায়নি।’’
তিনি জানান, বর্তমান হারে প্রবাসীরা দৈনিক গড়ে ৯৩ মিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছেন। এই গতিতে চলতে থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং আগামী মাসের শুরুতেই নতুন রেকর্ড হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) পিএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-কে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক দিক।
তিনি বলেন, এই ঊর্ধ্বগতি শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করছে না, বরং ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক অর্থ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের পর সীমান্তপথে অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, ফলে হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের যোগান-চাহিদা কমে গেছে।
অন্যদিকে, গত কয়েক মাস ধরে বিনিময় হার বেশ স্থিতিশীল, যা বাজারে অনিশ্চয়তা কমিয়েছে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘এই দুইটি কারণেই প্রবাসীরা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে আরও বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন।’’
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বাড়া দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভোক্তা ব্যয় বাড়াতেও সাহায্য করবে, যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ব্যাপারে ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘‘এই বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শক্তিশালী হবে যা আমদানি স্বাভাবিককরণে এবং সরকারের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সহায়ক হবে।’’
jubairfe1980@gmail.com