Published :
Updated :
শিপিং এজেন্টরা চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ অপারেটরদের সঙ্গে অবিলম্বে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) চালুর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, পোর্ট অপারেশনে শৃঙ্খলা, দক্ষতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজন ছিল।
প্রযুক্তিগত নামকরণের পেছনে লুকিয়ে আছে বাস্তব এক মানবিক মূল্য। কন্টেইনার বিলম্বিত হলে আমদানিকারকরা হিমশিম খায় এবং পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
দেশের ব্যস্ততম এই বন্দরে যে অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, তার প্রভাব পড়ছে শিপিং এজেন্ট থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ভোক্তাদের ওপর — এবং শেষ পর্যন্ত খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকেই।
একটি এসএলএ হলো একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি যা দুটি পক্ষের মধ্যে প্রত্যাশিত সেবার মান নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে বার্থ বা টার্মিনাল অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন হয়।
এতে পরিষ্কারভাবে পারফরম্যান্স সূচক নির্ধারণ করা হয় এবং ব্যর্থতার ক্ষেত্রে কী পরিণতি হবে তা উল্লেখ থাকে — যেমন বিলম্ব, ভুল হ্যান্ডলিং বা কন্টেইনারের ক্ষয়ক্ষতি।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৬ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসএলএ প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়।
এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, যিনি বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, শিপিং এজেন্টরা প্রতি কন্টেইনারে ১৭৫ টাকা অনবোর্ড হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধি মেনে নেবে, এই শর্তে যে এসএলএ চালু করে বার্থ অপারেটরদের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।
কিন্তু ১৭ মে ২০২৫ তারিখে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় যখন বৈঠকের অফিসিয়াল কার্যবিবরণী প্রকাশ করে, তখন সেখানে এসএলএ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি অনুপস্থিত ছিল বলে জানিয়েছে শিপিং এজেন্টরা। অথচ সংশোধিত চার্জগুলো সেই বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই অপসারণে শিপিং এজেন্টদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্প-সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেন, "এটা কোনো ছোটখাটো বাদ পড়া বিষয় নয় — এটি পুরো আপসের ভিত্তিকেই খারিজ করে দেয়।"
শিপিং এজেন্টদের মতে, একটি কার্যকর এসএলএ না থাকলে বার্থ অপারেটরদের কোনো বিলম্ব, অপারেশনাল গাফিলতি কিংবা ক্ষয়ক্ষতির জন্য জবাবদিহি করতে হয় না। বর্তমানে বন্দরে তিনটি অপারেশনাল শিফট চালু আছে, কিন্তু তারপরও বিলম্ব ও শৃঙ্খলার অভাব রয়ে গেছে, যার ফলে জাহাজের টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম বেড়েই চলেছে।
এই চুক্তির অভাব কন্টেইনার প্রবাহ, উৎপাদনশীলতা এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্দরের সার্বিক নির্ভরযোগ্যতাকে প্রভাবিত করছে।
বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) একজন মুখপাত্র বলেন, "এসএলএ অবিলম্বে চালুর দাবি জানিয়ে আমরা ৭ জুলাই আবারো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছি।" এর আগেও, অ্যাসোসিয়েশনটি ২০ মে ২০২৫ তারিখে উপদেষ্টা বরাবর একইরকম আরেকটি চিঠি দিয়েছিল, যাতে দ্রুত SLA বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, "এ ধরনের একটি চুক্তি অপারেশনাল দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়াবে এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।"
শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মন্ত্রণালয় এই অনুপস্থিতি সংশোধন করবে এবং এসএলএ কাঠামো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে, যা বন্দর ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনতে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
jasimharoon@yahoo.com