Published :
Updated :
ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতনসহ বেশ কিছু এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধনে নির্মিত ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে এ পয়ঃশোধনাগারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে পাগলা পয়ঃশোধনাগারের সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান।
চীনা অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ দশমিক ২ একর জমির ওপর নির্মিত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রতিদিন ৫০ লাখ টন পয়োবর্জ্য পরিশোধন করতে পারবে, যা ঢাকার মোট পয়োবর্জ্যের ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মত। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষণ কমাতে এই পয়ঃশোধনাগার একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে সরকার আশা করছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর।
২০১৫ সালের ২৫ অগাস্ট দাশেরকান্দি প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
সরকারের মাস্টার প্ল্যানে ঢাকা মহানগরীকে পাঁচটি এলাকায় (পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর) বিভক্ত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবা নিশ্চিত হবে বলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের ভাষ্য।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা,বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাতারকুল ও হাতিরঝিল এলাকার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশনের মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে।
এছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধানাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমানোও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
আর পাগলা পয়ঃশোধনাগারে কলাবাগান, মগবাজার, শাহবাগ, ইস্কাটন, আরামবাগ, পল্টন, সায়দাবাদ, মতিঝিল, রামপুরা, তালতলা, বাসাবো, গোলাপবাগ, আহমেদবাগ, শহীদবাগ, গোরান, বেগুনবাড়ি, খিলগাঁও ও পশ্চিম নন্দীপাড়ার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করা হবে।
ঢাকা ওয়াসার এমডি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার পাঁচটা মাস্টার প্ল্যানের একটি। পাঁচশ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন এখানে ট্রিটমেন্ট করা যায়। চায়নিজদের ভাষায়, এই জাতীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চায়নাতেও নেই। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, প্ল্যান্ট ট্রিটমেন্ট, ইনসেনেরেশন। সব ট্রিটম্যান্ট একই প্লান্টে। চায়নাতে এর চেয়ে বড় থাকতে পারে, কিন্তু একসাথে তিনটি সার্ভিস নেই।”
রায়েরবাজার সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ অনেক দূরে গিয়েছে জানিয়ে ওয়াসা এমডি বলেন, “এসব প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ করা। এই কাজটা আমাদের এগিয়েছে। উত্তরা সুয়ারেজ শোধনাগারের জমির অধিগ্রহণ করা প্রায় চূড়ান্ত। মিরপুর সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের এর কাজ এগিয়ে চলছে। এটা ডিজাইন ড্রয়িং হয়েছে, ফাইনাল হয়নি।”
তাকসিম এ খান বলেন, “ঢাকায় আমরা ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ সুয়্যার ট্রিট করতে পারি। এটা পাগলা পয়ঃশোধানাগারে মাধ্যমে ট্রিট করা হত, এটাও অনেকটা নড়বড়ে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার হওয়ার পর আমরা অলমোস্ট ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ট্রিট করতে পারছি।
“পাগলা হয়ে গেলে আমরা মিনিমাম ৩৫ শতাংশ সুয়ারেজ কিলিং করতে পারব। কোনো ময়লা বা অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য যাতে করে ঢাকার চারপাশে জলাভূমি নদী, খালে যাতে না যায়- এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।”